আয়না২৪ ডেস্ক
নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন শহরের বিক্ষোভে লাখ লাখ নারী অংশ নিয়েছেন। দেশটিতে ২০ লাখের বেশি মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা বিশ্বে ৬০০ বেশী বিক্ষোভ হয়েছে বলে বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। বিক্ষোভে ম্যাডোনার মতো তারকা শিল্পীরাও যোগ দেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শনিবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র অফিস পরিদর্শন করেছেন। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনএন’র
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পরদিনই দেশটির একাধিক শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন লাখ লাখ মানুষ। নারীদের বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রথমে ওয়াশিংটনে ওই বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও, পরে দেশটির আরো অনেক শহরে তা ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে বিশ লাখের বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিক্ষোভের আরো কারণ অভিবাসন, মুসলিমবিরোধী মন্তব্য, স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি বাতিল এবং ট্রাম্পের প্রতি ঘৃণা।
ওয়াশিংটনে নারীদের বিক্ষোভ
প্রধানত নারী সংগঠনগুলোর আয়োজনে ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হলেও, তাতে অনেক পুরুষও অংশ নেন। নারীদের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত ‘পুরুষতান্ত্রিক আচরণের’ প্রতিবাদ জানাতে এ বিক্ষোভ ডাকা হয়। নারী অধিকার কর্মীদের আশংকা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় তাদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে ওয়াশিংটনে। সেখানে পাচঁ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয়। যদিও বিক্ষোভকারীদের এই দাবির সতত্য নিশ্চিত করা যায়নি। প্রথমে ওয়াশিংটনের পেনসিলভানিয়া এভিনিউয়ে বিক্ষোভের জন্য জড়ো হন। একদিন আগেই এই এভিনিউতে প্যারেড করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পরিকল্পনা ছিল, তারা হোয়াইট হাউসের সামনে মিছিল নিয়ে যাবেন। কিন্তু মিছিলের পথ জুড়েই লাখ লাখ বিক্ষোভকারী অবস্থান নেওয়ায় তা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিতি ছিল শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের চেয়েও বেশি, যাদের মধ্যে রয়েছেন অনেক তারকা শিল্পীও। তাদের মধ্যে আছেন সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, সংগীতশিল্পী ম্যাডোনা, গায়িকা কেটি পেরি, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, অভিনেত্রী জুলিয়ান মোর, স্কারলেট ইয়োহানসন, পরিচালক মাইকেল মুর ও নারী অধিকারকর্মী গ্লোরিয়া স্টাইনহ্যাম।
সমাবেশে মার্কিন সংগীতশিল্পী ম্যাডোনা বলেন, ‘এই দিন আমাদের জীবন শুরু করার দিন। বিপ্লব এখান থেকেই শুরু হচ্ছে। এটা আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের পরিচয়, আমাদের সম অধিকারের লড়াই। এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে চলুন সবাই একসাথে লড়াই করে জানিয়ে দেই যে আমরা ভীত নই, আমরা একা নই এবং আমরা পিছনে ফিরবো না।’ এরপর তিনি নিজেকে তুলে ধরার বক্তব্য সম্বলিত একটি গানও গেয়ে শোনান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে অনেকেই শ্লোগান দেন, ‘তুমি আমার প্রেসিডেন্ট নও’। বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ঘৃণা নয় ভালোবাসা’, ‘দেয়াল নয়, সেতু’ ইত্যাদি। ওয়াশিংটনের এই বিক্ষোভ পরে যুক্তরাষ্ট্রের আরো কয়েকটি বড় শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের ভিডিওর তথ্যানুযায়ী, বোস্টনে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেন। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভ এত বড় ছিল যে, তারা ঠিকমতো রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও পারেনি। বিক্ষোভের সারি দেখে মনে হচ্ছিল, সাপ নিজেই তার লেজ খাচ্ছে। সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ওই বিক্ষোভে বলেন, আমরা নীরব থাকবো না, আমরা পেছন ফিরে যুদ্ধ করবো না।
লস অ্যাঞ্জেলসের বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তাদের সমাবেশে সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষ অংশ নেন। যদিও পুলিশ জানায়, ২০০৬ সালে অভিবাসনের পক্ষে মিছিলের চেয়ে বেশি হয়েছে। ওই মিছিলে ৫ লাখ মানুষ অংশ নেন। মানুষের এত ভীড় ছিল তারা একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প টাওয়ারের দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু ফিফথ এভিনিউতে তাদের আটকে দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তিনদিন আগেও এখানে ছিলেন। তিনি এখন হোয়াইট হাউসে আছেন। নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিয়ো জানিয়েছেন, চার লাখ মানুষের বিক্ষোভ ছিল। আয়োজকরা বলছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা ৬ লাখ। শিকাগোর পুলিশ জানিয়েছে, সোয়া লাখের বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। ডেনভারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল চার লাখ। পুলিশ জানিয়েছে, হস্টনে ২০ হাজারের অধিক, ওকল্যান্ডে ৬০ হাজার এবং আটলান্টা শহরে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, আমেরিকার ২১ টি শহরের বিক্ষোভে মাত্র চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওয়াশিংটনে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য দেশে
সারা বিশ্ব জুড়ে অন্তত ৬০০ বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে জানা গেছে। বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডন, ইসরাইলের তেলআবিব, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও সিডনি, প্রিস্টিনা, মস্কো, জার্মানির বার্লিন, মেক্সিকো সিটি, ফ্রান্সের প্যারিস ও গ্রিসের এথেন্সসহ বিভিন্ন শহরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সমাবেশ এটাই প্রমাণ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে গভীর বিভক্তি আর ট্রাম্পের ভবিষ্যত্ কর্মকান্ড নিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং জাপানেও তার বিরোধীরা বিক্ষোভ করেছেন।