আজ ট্রাম্পের শপথ, ওবামার বিদায়

জানুয়ারি ২০, ২০১৭
Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন  ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিদায় নেবেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর সঙ্গে সমাপ্তি ঘটছে আট বছর দায়িত্ব পালন করা আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের শাসনামলের। নানা আয়োজনের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে আজ প্রবেশ করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প যিনি আজ থেকে  হবেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি।
 এদিকে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পে সমর্থক এবং বিরোধী হিসেবে অন্তত ৯ লাখ মানুষের সমাগম হবে। গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে জয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন যা দেখার জন্য আমেরিকাসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষা করছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন মাইক পেন্স।

কখন এবং কোথায় শপথ : ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের  স্থানীয় সময় দুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেবেন। সংগীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে শপথ অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হবে। ধর্মীয় নেতারা এরপর বক্তব্য দেবেন। মূল অনুষ্ঠান হোয়াইট হাউসে হলেও ওয়াশিংটনের বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের সামনে ট্রাম্পকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। ট্রাম্পের আগে মাইক পেন্স ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিবেন। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ক্ল্যারেন্স থমাস। তিনিই প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান যিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টকে আজ শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান যে বাইবেল নিয়ে শপথ পাঠ করেছিলেন সেই বাইবেলই এবার ব্যবহার করা হবে। শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণ দিবেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার ভাষণ ২০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হবে না। ওবামাও ২০ মিনিটের মতো ভাষণ দিয়েছিলেন। ভাষণের পর কংগ্রেসের এক মধ্যান্ন ভোজে অংশ নিবেন নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট দম্পতি। এরপর নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে নিয়ে মোটর শোভাযাত্রা ক্যাপিটল হিল থেকে হোয়াইট হাউসে যাবে। পথে তাকে স্বাগত জানাতে আসা এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে দেখা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, এর আগে আজ সকালে হোয়াইট হাউসে যাবেন ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্প। তাদেরকে স্বাগত জানাবেন ওবামা ও মিশেল ওবামা। তারপর তারা মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ক্যাপিটল হিলে যাবেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার নানা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে লিঙ্কন মেমোরিয়ালে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভয়েস অব দ্য পিপল’ নামে দিনব্যাপী কনসার্ট। এরপর আলিংটনের জাতীয় সমাধিতে মার্কিন বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ট্রাম্প ও মাইক পেন্স। বিকেলে ‘মেইক আমেরিকান গ্রেট অ্যাগেইন! ওয়েলকাম সেলিব্রেশন’ শীর্ষক আয়োজনে বক্তব্য দেন ট্রাম্প। কাল শনিবার সকালে হোয়াইট হাউসে ঘুম থেকে উঠে সকালেই ওয়েস্ট উইংয়ে হেঁটে যাবেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের কাজ শুরু করবেন। কাল শনিবার সকাল ১০টায় ওয়াশিংটনের জাতীয় গির্জায় আন্তধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নেবেন ট্রাম্প ও পেন্স।

শপথ অনুষ্ঠানে কারা থাকবেন

শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামা উপস্থিত থাকবেন। যদিও তার উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে তিনি থাকবেন। আর যদি তিনি না থাকেন তাহলে ৯৬ বছরের মধ্যে এটাই হবে প্রথম যে কোনো বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, বিল ক্লিনটন এবং জর্জ ডাব্লিউ বুশ উপস্থিত থাকবেন। উপস্থিত থাকবেন তাদের স্ত্রী তথা সাবেক ফার্স্ট লেডি যথাক্রমে রোজালিন কার্টার, হিলারি ক্লিনটন এবং লরা বুশ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এই প্রথম হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের মুখোমুখি হবেন। অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশ উপস্থিত থাকবেন না। কারণ তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হোস্টন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার ৭২ বছর বয়সী স্ত্রী বারবারা বুশও একই হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবৃন্দ, ওবামা প্রশাসন এবং ট্রাম্পের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

বিদায় নেবেন ওবামা ও মিশেল ওবামা

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শপথ নেওয়ার পর বারাক ওবামা ও মিশেল ওবামা বিদায় নিবেন। আজই তারা ছুটি কাটাতে ক্যালিফোর্নিয়ার পালম্ বিচে যাবেন। ৫৫ বছর বয়সী ওবামা জানিয়েছেন, তিনি প্রথম বছরটা লেখালেখি করে এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রেসিডেন্ট হন বারাক ওবামা। এরপর ২০১২ সালেও তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার আমলে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন কোনো যুদ্ধে না জড়ানো, অর্থনৈতিক মন্দা কাটানো, স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যবীমা, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেমন সফলতা আছে তেমনি অনেক ব্যর্থতা নিয়েও আলোচনা আছে দেশটিতে।

 

কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা

রয়টার্স জানায়, নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটনে প্রায় ৯ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। এই সমাগমে ট্রাম্পের সমর্থকরা যেমন থাকবেন তেমনি বিরোধীরাও থাকবেন। বিক্ষোভকারীরা আগে থেকে ওয়াশিংটন মনুমেন্টে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। এই বিক্ষোভ ঠেকাতে মনুমেন্টের চারপাশে অস্থায়ী বেড়া নির্মান করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই নারী, অভিবাসী এবং মুসলমানদের নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছেন ট্রাম্প। এজন্য নিউ ইয়র্কের এই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চলছে। বিদায়ী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি জেহ জনসন জানিয়েছেন, উভয় পক্ষ যাতে শপথ অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বালুর ট্রাম্প, নিরাপত্তা বেড়াসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। ২৮ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বলে জেহ জনসন বলেন। শনিবার ওয়াশিংটনসহ সারা বিশ্বে ট্রাম্পবিরোধী নারীদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াশিংটনে আড়াই লাখ নারী বিক্ষোভে অংশ নিবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। গতকাল নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিক্ষোভে নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিয়ো অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।