আয়না২৪ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর নিধনযজ্ঞ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশে আসছে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদল। আর বিষয়টি নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর একটি জোরালো অবস্থান নিতে কুয়ালালামপুরে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনায় বসছেন ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের দপ্তর বেশ কিছুদিন ধরেই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুমতি চাইছিল। সরকার সম্প্রতি প্রতিনিধিদলটিকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলটি জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের সময় কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় যাবে। এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সম্প্রতি রাখাইন থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। বাংলাদেশ সফর শেষে ওই প্রতিনিধি দল মানবাধিকার কমিশনারের দপ্তরে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ১৯ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিশেষ বৈঠকে বসছেন। ওই বৈঠক শেষে ওআইসির সদস্যদেশগুলোর রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব নেওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫৭-জাতির ইসলামি জোটটি এই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশেষ কোনো সভা ডেকেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের দপ্তরের প্রতিনিধিদলের পরিকল্পিত বাংলাদেশ সফর, কুয়ালালামপুর মালয়েশিয়ার উদ্যোগে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠক আয়োজনে স্পষ্ট যে, ধীরে ধীরে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীটির সুরক্ষায় জোরালো হচ্ছে আন্তর্জাতিক জনমত। এ পরিস্থিতিতেও রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের সব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে মিয়ানমারের একটি সরকারি কমিশন। রাখাইনে চলমান নির্যাতনের তদন্তের জন্য মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন খিউ গত ৩ ডিসেম্বর ১৩ সদস্যের ওই তদন্ত কমিশন গঠন করেন। ‘মংডু অঞ্চলবিষয়ক তদন্ত কমিশন’-এর প্রধান করা হয় বিতর্কিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও বর্তমানে মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সিউকে। কমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনটি গতকাল মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গুনে ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে স্যাফরন রেভল্যুশন (গেরুয়া বিপ্লব) হয়েছিল। ভিক্ষুদের দমনে সামরিক সরকারের রক্তাক্ত অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তখনকার জেনারেল মিন্ট সিউ।
তবে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর নিধনযজ্ঞের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেও বিষয়টি নিয়ে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখাচ্ছে মিয়ানমার। রাখাইনে নিধনযজ্ঞ অব্যাহত থাকায় গত ৯ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। সার্বিকভাবে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিউ তিন এ মাসে বাংলাদেশে আসছেন। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সফরটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রত্যাখ্যানের নীতি অব্যাহত
‘মংডু অঞ্চলবিষয়ক তদন্ত কমিশন’ ওই এলাকার ৯ অক্টোবর এবং ১২ ও ১৩ নভেম্বরের ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে গতকাল একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রচার করেছে। এতে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বাঙালি জনগোষ্ঠী, তাদের মসজিদ ও ধর্মীয় স্থাপনার অবস্থাই বলে দেয় সেখানে কোনো গণহত্যা কিংবা ধর্মীয় দমনপীড়ন হয়নি। ধর্ষণের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোর পক্ষে ‘পর্যাপ্ত প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি। তবে কমিশন এখনো অগ্নিসংযোগ, বেআইনি গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা অব্যাহত রেখেছে।