দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেইজিংয়ের হুঁশিয়ারি

ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
Spread the love

আয়না ২৪ ডেস্ক

দক্ষিণ চীন সাগরকে যুদ্ধের মঞ্চ না করার জন্য সব প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে বেইজিং। দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীনের ঐতিহাসিক দাবি নেই মর্মে জাতিসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়ার প্রেক্ষাপটে চীন এই হুঁশিয়ারি দিল।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল কঠোর রায় দিয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। এই রায় ফিলিপিন্সের স্বার্থকে রক্ষা করেছে তো বটেই। অন্য যে সব দেশের সঙ্গে পানিসীমা নিয়ে চিনের বিরোধ চলছে দশকের পর দশক ধরে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে তারাও স্বস্তিতে। চীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ ঝেনমিন মঙ্গলবার বেইজিং-এ বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ চীন সাগরকে যুদ্ধের মঞ্চে পরিণত করার চেষ্টা করবেন না। চীনের লক্ষ্য হলো, দক্ষিণ চীন সাগরকে শান্তি, মৈত্রী এবং সহযোগিতার মঞ্চে পরিণত করা।’’

চীন এ দিন আবার বলেছে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়কে তারা মানছে না। যদি ট্রাইব্যুনালের রায়ের ভরসায় কোনো দেশ দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে চায়, তা হলে গোটা এলাকার উপর এয়ার ডিফেন্স জোন চিহ্নিত করতে বাধ্য হবে চীন। অর্থাৎ দক্ষিণ চীন সাগরের আকাশে অন্য কোনো দেশের বিমান ঢুকলেই ধরে নেয়া হবে ওই বিমান চীনের আকাশসীমায় ঢুকেছে।

চীন বোঝাতে চেয়েছে, পানিসীমা নিয়ে চীনকে চাপে ফেলতে চাইলে, পানিপথ তো বটেই, আকাশপথ আটকে দেয়া হবে। দক্ষিণ চীন সাগরের আকাশে অন্য কোনো দেশের বিমান ঢুকলেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার থাকবে চীনের।

বেইজিং-এর এই হুঁশিয়ারিতে অবশ্য পিছু হঠতে নারাজ আন্তর্জাতিক মহল। আমেরিকা, ভারত, জাপান যেমন দক্ষিণ চীন সাগরে টহলদারি জাহাজ পাঠাচ্ছিল, তেমনভাবেই টহলদারি চালিয়ে যাবে বলে সূত্রের খবর। তাইওয়ানও দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছে। চীনা নৌসেনার একাধিক রণতরী সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছে। অতএব দক্ষিণ চীন সাগর যে আরো উত্তপ্ত হতে চলেছে, তা নিয়ে সংশয় নেই ওয়াকিবহাল মহলের।

প্যারাসেল আইল্যান্ডস, স্প্র্যাটলি আর্কিপ্যালেগো এবং স্কারবোরো শোয়ালের দখল নিয়েছে চীন। ড্রেজিং শিপ পাঠিয়ে বালি ফেলে উঁচু করা হয়েছে দ্বীপ এবং পাথুরে প্রাচীরগুলিকে। তার পর সেখানে বানানো হয়েছে সামরিক পরিকাঠামো, রানওয়ে। দক্ষিণ চীন সাগরের যতটা এলাকাকে চীন নিজেদের বলে দাবি করে, তাতে গোর আপত্তি রয়েছে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই এবং তাইওয়ানের। স্কারবোরো শোয়াল এবং স্প্র্যাটলি আর্কিপ্যালেগো ফিলিপন্স উপকূলের খুব কাছে। ওই সব অঞ্চলকে ফিলিপাইনের নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবেই ধরা হয়। স্কারবোরো শোয়ালে মাছ ধরতে যেতেন ফিলিপিনো মৎস্যজীবীরা। দেশটির অর্থনীতির জন্য ওই অঞ্চল খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে চিন স্কারবোরো শোয়াল এবং স্প্র্যাটলি আর্কিপ্যালেগোর দখল নেয়। তার পর পরই ফিলিপিন্স আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল।

একই ভাবে ভিয়েতনামের দখলে থাকা প্যারাসেল আইল্যান্ডস ১৯৮৮ সালে দখল করে নিয়েছিল চীনা নৌসেনা।

সব মিলিয়ে যতটা এলাকাকে চীন নিজেদের পানিসীমা বলে দাবি করছে, তাতে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রুনেই এবং তাইওয়ানের বৈধ পানিসীমাও সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক পানিপথ হিসেবে চিহ্নিত এলাকাকেও চীন নিজেদের সীমানা বলে প্রমাণ করতে চাইছে। হেগ-এর ট্রাইব্যুনাল চীনা এই দাবির বিরুদ্ধে রায় দেয়ার পর মরিয়া হয়ে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছে চীন। শুধু দক্ষিণ চীন সাগরের আশেপাশে থাকা দেশগুলির জন্য কিন্তু এই হুঁশিয়ারি নয়। আমেরিকা, জাপান, ভারতসহ যে সব দেশ ফিলিপাইনের সমর্থনে কথা বলেছে, এই হুঁশিয়ারি তাদের উদ্দেশেও।