আয়না২৪ ডেস্ক
আশির দশকের সাড়া জাগানো, বিতর্কিত ব্রিটিশ পপ তারকা জর্জ মাইকেল চলে গেলেন জীবনের মঞ্চ ছেড়ে। রোববার রাতে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারে নিজের বাড়িতে এই শিল্পী, গীতিকার ও সংগীত প্রযোজকের মৃত্যু হয়। স্কুলের বন্ধু অ্যান্ড্রু রিজলিকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৮১ সালে জর্জ মাইকেল গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল হুয়াম! ১৯৮৬ সাল থেকে একক পারফরম্যান্সে যে ক্যারিয়ার তিনি গড়ে তোলেন, তাতে তিনি বিশ্বের অন্যতম সফল সংগীত শিল্পীতে পরিণত হন। ওয়েক মি আপ বিফোর ইউ গো–গো, কেয়ারলেস হুইসপার, লাস্ট ক্রিসমাস এবং দি এজ অব হেভেনের মতো গানগুলি জর্জ মাইকেলকে বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তা এনে দেয়। সর্বকালের সেরা ১০০ গায়কের তালিকায় জর্জ মাইকেল আছেন ৪০ নম্বরে। তিন দশকের সংগীত জীবনে আটবার জিতেছেন গ্রামি। তাঁর অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে ১০ কোটির বেশি কপি।
হলিউড অভিনেতা জর্জ বলেছেন, “অবশেষে তুমি মুক্তি খুঁজে পেয়েছ। তারাদের সঙ্গে শান্তিতে ঘুমাও জর্জ মাইকেল। এটা ছিল তোমার শেষ ক্রিসমাস, আমরা তোমাকে মিস করব।”
গ্রিস থেকে ব্রিটেনে অভিবাসী হওয়া এক দম্পতির সন্তান জর্জ মাইকেলের পারিবারিক নাম জিওরগোস কিরিয়াকোস পানাইয়োতু। ১৯৬৩ সালের ২৫ জুন লন্ডনে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর সংগীত জীবনের শুরুটা হয়েছিল পাতাল রেলে গিটারের সঙ্গে গান গেয়ে। তবে অ্যান্ড্রু রিজলিকে সঙ্গে নিয়ে হুয়াম! শুরুর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হওয়ার আগেই ১৯৮২ সালে ইয়ং গানস (গো ফর ইট) গানটি তাদের খ্যাতির পথে তুলে দেয়। এরপর হুয়াম র্যাপ অ্যালবামটি লন্ডনের বাজারে সাড়া ফেলে দেয়। ১৯৮৪ সালে ‘মেইক ইট বিগ’ মার্কিন মুলুকে দারুণ সাফল্য পায়। জর্জ মাইকেল হুয়ামের সেই সাফল্যকে বর্ণনা করে গিয়েছেন এভাবে: “অ্যন্ড্রুকে ছাড়া আমি কোনওভাবেই এটা পারতাম না। আমি আর কারও কথা ভাবতে পারি না যে এতোটা নিখুঁতভাবে আমাদের এই যৌথ প্রয়াসকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতে পারত, পুরোপুরি দ্বৈত পরিবেশনা হয়েও যা ছিল একান্তই আমার।” হুয়ামের টিনএজ শ্রোতাদের সীমানা ছাড়িয়ে নিজের সংগীত নিরীক্ষা আরও এগিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল জর্জের। ১৯৮৬ সালে ভেঙে যায় হুয়াম! এরপর একক অভিযাত্রায় গানের গলার সঙ্গে মঞ্চের পারফরমেন্স মিলিয়ে সুদর্শন জর্জ মাইকেল ব্রিটেনের কনসার্ট সার্কিটের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পীদের একজনে পরিণত হন। টিন আইডল থেকে পরিণত হন সুপারস্টারে। তবে আজীবনই তাঁকে নানা বিতর্ক তাড়া করে বেড়িয়েছে। মাদক সেবনের অভিযোগ থেকে জোরে গাড়ি চালিয়ে বিপত্তি বাঁধানোর জন্য বারবারই সংবাদ শিরোনামে এসেছেন জর্জ। ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁকে ঘিরে ছিল নানা ‘মিথ’। তাঁর সঙ্গী নির্বাচন নিয়েও কম বিতর্ক ছিল না।
অবশ্য এই সাফল্যের পিছনে জর্জ মাইকেলের গানের কথায় যৌন উসকানির ভূমিকার কথাও অনেকে বলেন। তার গাওয়া ‘আই ওয়ান্ট ইওর সেক্স’ ব্রিটিশ রেডিও স্টেশনগুলোতে দিনের বেলায় প্রচার নিষিদ্ধ করা হলেও তাতে গানটির ‘হিট’ হওয়া আটকায়নি। এর পরের পাঁচ বছরে জর্জ মাইকেলের ‘ফেথ’, ‘ফাদার ফিগার’, ‘ওয়ান মোর ট্রাই’, ‘প্রেইং ফর টাইম’ এবং ‘আই নিউ ইউ অয়্যার ওয়েটিং ফর মি’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সংগীত হিসাবে স্থান করে নেয়।
মার্গারেট থ্যাচার যখন ব্রিটেনের ক্ষমতায়, জর্জ মাইকেল তখন ভোট দিয়েছিলেন বিরোধী দলে থাকা লেবার পার্টিকে। কিন্তু টনি ব্লেয়ার ২০০৩ সালে জর্জ বুশের ইরাক অভিযানে সমর্থন করলে তাক্ষর সমালোচনা করতে ছাড়েননি তিনি। লেবার পার্টির বর্তমান নেতা জেরেমি করবিন এই পপ তারকাকে বর্ণনা করেছেন একজন অনন্য শিল্পী হিসেবে, যিনি সমকামী ও শ্রমিক অধিকারের জন্য সোচ্চার ছিলেন।
জর্জ মাইকেলের মৃত্যুতে শোকাহত এলটন জন বলেছেন, “আমি আমার একজন প্রিয় বন্ধুকে হারালাম, যে ছিল একজন মহৎ, মমতাময় মানুষ, একজন মেধাবী শিল্পী।”