আয়না২৪ ডেস্ক
আত্মীয়স্বজন ভেবেছিলেন কৃষকের ছেলে কৃষকই হবে। কিন্তু ছেলের ঝোঁক বিজ্ঞানের বই জোগাড় করে পড়ার আর নানারকম অদ্ভুত অদ্ভুত পরীক্ষা করার। একদিন বাজারে পাঠানো হয়েছে নিউটনকে। কয়েকটি ডিম, কয়েকটি ভেড়া আর অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে আসার জন্যে। কিন্তু তিনি আরেকটি লোককে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর হয়ে এগুলো বেচে দিতে। আর নিজে এক ঝোপের তলায় বসে মশগুল হয়ে পড়তে লাগলেন একটা অঙ্কের বই।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন তাঁকে সেখানে পাওয়া গেল, তখন তো বাড়িতে রীতিমতো কুরুক্ষেত্র কাণ্ড। বাড়ির সকলেই বলতে লাগলেন, কী করা যাবে এমন একটা অপদার্থ ছেলেকে নিয়ে। তাঁকে উদ্ধার করলেন তাঁর এক চাচা। তিনি বললেন, দাও একে কলেজে পাঠিয়ে, সেখানে বসে যত খুশি অঙ্ক কষুক। তাই তঁাকে পাঠানো হল কেমব্রিজে।
সত্যি সত্যি তিনি কলেজে গিয়ে অঙ্কে খুব ভাল করলেন। প্রথম বছরেই তিনি গণিতের এক নতুন দিক ক্যালকুলাস আবিষ্কার করে ফেললেন। লিখে রাখলেন সে সব। কিন্তু কাউকে বললেন না কিছুই। চঁাদের চারিদিকে মাঝে মাঝে চাকতির মতো আলোর প্রভা দেখতে পাওয়া যায়, তা যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকা জলকণার ওপর আলো পড়ে তৈরি হয়, তাও তিনি এই কলেজের প্রথম বছরেই আবিষ্কার করলেন।
২৩ বছর বয়সে নিউটন কলেজের পড়া শেষ করে গণিতের অধ্যাপক হলেন। কিন্তু পরের বছরই বিলেতে লাগল বিরাট রকম প্লেগের মড়ক। স্কুল–কলেজ সবই বন্ধ হয়ে গেল। কাজেই নিউটনও গ্রামে ফিরে গিয়ে তঁার গবেষণার কাজে মন দিলেন। তঁার মনে যত সমস্যা দেখা দিতে লাগল। গণিতের হিসেবে ফেলে তার সব কিছুর মীমাংসা করার চেষ্টা করতে লাগলেন। এই গ্রামে বসে বসে ২৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই নিউটন তঁার সমস্ত যুগান্তকারী আবিষ্কারের ভিত দঁাড় করিয়েছিলেন। তঁার আবিষ্কারের কথা তো আমাদের সকলেরই জানা।
নিউটন ছিলেন খুবই সাদাসিধে রকমের মানুষ। সেকালের বিজ্ঞানীরা নতুন কিছু আবিষ্কার করলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে লিখে প্রচার করতেন। কিন্তু নিউটন এ সব দিকে যেতেনই না। নিত্যনতুন আবিষ্কার নিয়ে তিনি এমন মশগুল থাকতেন যে, সে সব কথা লিখে ছাপাবার তঁার ফুরসতই হত না।
নিউটন গবেষণার কাজে কেমন আপনভোলা হয়ে যেতেন, সে সম্বন্ধে অনেক কাহিনী আছে। একবার তঁার বাড়িতে ছিল এক বন্ধুর খাবার নিমন্ত্রণ। বন্ধু এসে দেখেন নিউটন নেই, টেবিলে একটা রান্না মুরগি ঢাকনা চাপা দেওয়া রয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে দু’ঘণ্টা কেটে গেল। বন্ধুটি এত দেরি দেখে রান্না করে রাখা মুরগিটি খেয়ে ফেললেন। থালায় শুধু হাড়গোড়গুলো পড়ে রইল। শেষটায় নিউটন ফিরলে খাবারের ঢাকনাটা খুলে বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এখনও রাতের খাবার খাইনি। কিন্তু এখন দেখছি আগেই খেয়েছি।’ তারপর দুই বন্ধুর মধ্যে শুরু হল দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক আলোচনার বৈঠক।
আইনস্টাইনকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দুনিয়ায় এ যাবৎ যত বিজ্ঞানী জন্মেছেন, তঁাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কে? আইনস্টাইন দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, আইজ্যাক নিউটন। কিন্তু নিউটন নিজের সম্বন্ধে কি বলেছিলেন শুনবেন? ‘লোকে আমার সম্বন্ধে কী ভাবে, তা আমি জানি না। কিন্তু নিজের কাছে মনে হয় যেন আমি ছোট শিশুর মতো সাগরের তীরে শুধু নুড়িই কুড়িয়ে বেড়ালাম— কোথাও একটু মসৃণ নুড়ি অথবা একটু সুন্দর ঝিনুক। বিশাল জ্ঞানের সমুদ্র আমার সামনে অজানাই পড়ে রইল।’