আয়না২৪ ডেস্ক
আমেরিকার বাসিন্দা রায়ানের বয়স মাত্র ৫ বছর। আর পাঁচটা সমবয়সি শিশুর মতোই সে-ও ভালবাসে খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলতে, তিন চাকার সাইকেলে চড়ে ঘুরতে, আর ওয়াটার স্লাইড বেয়ে হুশ্ করে নেমে আসতে। কিন্তু অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তার তফাতও রয়েছে। কারণ প্রতি মাসে রায়ানের রোজগার ১ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, অর্থাৎ টাকার অঙ্কে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো। এবং এই রোজগার সে করে ইউটিউব ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে।
ইউটিউব নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও সাইট। একেবারে বিনাপয়সায় ভিডিও দেখার এবং আপলোড করার সুযোগ মেলে ইউটিউবে। সেই ওয়েবসাইটেই একটি ভিডিও চ্যানেল চালান রায়ানের মা, যে চ্যানেলের নাম রায়ান টয়েজ রিভিউ। এই চ্যানেলে ১০ মিনিটের এক একটি ভিডিও আপলোড করা হয়, যে ভিডিওগুলির মুখ্য আকর্ষণ হচ্ছে খুদে রায়ান। রায়ান টয়েজ রিভিউ বর্তমানে ইউটিউবে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যানেল। আর বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয়তম চ্যানেল। এই চ্যানেলের ভিডিওগুলি প্রতি মাসে যে পরিমাণ দর্শক আকর্ষণ করে, তার বিজ্ঞাপন-মূল্য ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে মাসে ৬.৮ কোটি টাকার মতো রোজগার করে এই চ্যানেলটি।
বর্তমানে এই ভিডিও চ্যানেলের গ্রাহকের সংখ্যা ৫৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু কী থাকে এই চ্যানেলের ভিডিওগুলিতে? কমবেশি ১০ মিনিট দীর্ঘ এই সমস্ত ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট্ট রায়ান একটা নতুন খেলনার বাক্স নিয়ে তার ভিতর থেকে বার করছে নতুন খেলনাটি। খেলনার বিভিন্ন অংশগুলি জুড়ে খেলনাটি তৈরি করছে, এবং সেই সম্পর্কে নিজের মতামত দিচ্ছে। একেবারে বিশুদ্ধ সারল্য এবং খেলনা সম্পর্কে একটি শিশুর ‘বিশেষজ্ঞ’সুলভ মতামতের মিশ্রণে এই চ্যানেলের ভিডিওগুলি দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে সহজেই।
রায়ানের মা-ই এই চ্যানেলের ভিডিওগুলি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন। তিনিই শ্যুট করেন এই সমস্ত ভিডিও। সংবাদমাধ্যমের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মহিলা জানিয়েছেন, ছোটবেলায় ইউটিউবে বিভিন্ন টয় রিভিউ ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয় রায়ান। সে নিজেই মা-কে বলে, ‘আমাকে নিয়ে তুমি ভিডিও বানাও না কেন?’ সেই থেকেই নতুন ভিডিও চ্যানেলের পরিকল্পনা আসে রায়ানের মায়ের মাথায়। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করে রায়ান টয়েজ রিভিউ। রায়ানের বয়স তখন মাত্র তিন।
প্রথম থেকেই অবশ্য জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠতে পারেনি রায়ান টয়েজ রিভিউ। কিন্তু মাস চারেক আগে ১০০টি খেলনা সমেত রায়ানকে সারপ্রাইজ দেওয়ার মুহূর্তগুলি ক্যামেরাবন্দি করে ইউটিউবে আপলোড করেন রায়ানের মা (নীচে দেখুন ভিডিওটি)। সেই ভিডিও গগনচু্ম্বী জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে এই ভিডিও ইউটিউবে ৫৭ কোটি বারেরও বেশি দেখা হয়ে গিয়েছে। ভিডিওটি পাবলিশ হওয়ার পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে রায়ান টয়েজ রিভিউয়ের গ্রাহকের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় এই চ্যানেলের জনপ্রিয়তাও।
আপাতদৃষ্টিতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ইউটিউব চ্যানেল ঘিরে উন্মাদনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিছুকাল আগে ডিজনি কালেক্টর বিআর নামে একটি চ্যানেলের জনপ্রিয়তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। এই চ্যানেলের ভিডিওগুলিতে ক্যামেরার সামনে উপস্থিত হতেন এক মহিলা। কিন্তু ক্যামেরায় কখনওই দেখা যেত না তাঁর মুখ। তাতে তাঁর ভিডিওর দর্শকপ্রিয়তায় অবশ্য কোনও ভাটা পড়েনি।
বর্তমানে ইউটিউব ব্যবহারকারীদের আকর্ষণের নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে রায়ান। ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিস্ট তথা টিউবফিল্টার নামের ওয়েবসাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জোশ কোহেন রায়ান সম্পর্কে বলছেন, ‘রায়ান নিঃসন্দেহে ইউটিউব-এর সবচেয়ে খুদে স্টার। প্রতি মাসে প্রায় কোটি খানেক মানুষ ওর ভিডিও দেখছেন। এটা সত্যিই বিস্ময়কর।’