আয়না ২৪ স্বাস্থ্য
বয়স ৩০ বছরের বেশি হলে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একবার রক্তের চর্বির মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। চর্বির মাত্রা বেশি হলে তা হৃদ্রোগ ও পক্ষাঘাতের ঝুঁকি বাড়ায়। জীবনাচরণ পরিবর্তন করে ও প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করে রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এবার জেনে নিন কীভাবে রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।
কাঙ্ক্ষিত মাত্রা ঠিক করুন
আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত এবং আপনি কতটুকু কমাতে চান। এটা অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমন পরিবারের মা-বাবার হৃদরোগের ইতিহাস আছে কি না এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে কি না। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত মেদ-ভূড়ি ইত্যাদি। যাঁদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাঁদের কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম বা ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। আর যাঁদের হৃদরোগের কোনো ঝুঁকির উপাদান নেই, তাঁদের ১৬০ মিলিগ্রাম বা ডেসিলিটারের নিচে রাখা যেতে পারে।
প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করতে হবে
যাঁদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাঁদের অবশ্যই জীবনাচরণ পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু যদি হৃদরোগের নমুনা থাকে, তাহলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার করা এবং ওজন কমানো যেমন জরুরি তেমনি ওষুধ সেবন করাও দরকারি। জীবনাচরণ পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে। চিকিৎসকরা কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন নিয়াসিন, ফাইব্রেটস, স্টেটিনস ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে স্টেটিন-জাতীয় ওষুধ বেশি জনপ্রিয়। স্টেটিন রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমাতে পারে।
হাঁটুন ও ব্যায়াম করুন
শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম শুধু রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়, তা-ই নয়; উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ (বেশি ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল) বাড়ায়। মাঝারি ব্যায়াম কিংবা জোরে জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়। এ জন্য সব চিকিৎসকের পরামর্শ, নৈশভোজের পর কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। যাঁরা বসে থাকা চাকরি করেন, তাঁর উচিত প্রতি ঘণ্টায় অন্তত পাঁচ মিনিট হাঁটা, চলাফেরা করা। আপনি যে ধরনের ব্যায়াম করেন না কেন, তা নিয়মিত করতে হবে। সপ্তাহে সাত দিন ব্যায়াম করতে পারলে তো খুবই ভালো। অন্যথায় কমপক্ষে পাঁচ দিন ব্যায়াম করতে হবে।
চর্বি-জাতীয় খাবার বাদ দিন
কোলেস্টেরল কমানোর একটি সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করা। তবে এটাও ঠিক, খাবারের কোলেস্টেরলই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য শুধু দায়ী নয়, মানুষের শরীরেও প্রতিদিন কোলেস্টেরল তৈরি হয়। যেসব খাবারে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি, সেসব খাবারই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এ জন্য সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন মাখন, চর্বিযুক্ত গরু ও খাসির মাংস ইত্যাদির পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ ইত্যাদি বেশি খাওয়া উচিত।
আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান
যেকোনো ধরনের সবজি ও ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এরা রক্তে কোলেস্টেরলও কমায়। বিশেষত দ্রবণীয় আঁশ পরিপাকনালি থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শিম, বার্লি, ওট ইত্যাদি জাতীয় খাবারে প্রচুর আঁশ থাকে।
বেশি করে মাছ খান
মাছ এবং মাছের তেল কোলেস্টেরল কমাতে পারে। এর ভেতরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটা খুব সহজে রক্ত থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। যদি কেউ মাছ খেতে না পারেন, তিনি মাছের তেল থেকে তৈরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এডিসসমৃদ্ধ ক্যাপসুল চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক সেবন করতে পারেন। বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবারেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। যেমন সয়াবিন, তেল, কাঠবাদামের তেল ইত্যাদি।
মদ্যপান পরিহার করুন
অতিরিক্ত অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতএব, অতিরিক্ত মদ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
গ্রিন টি খান
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, সবুজ চায়ের (গ্রিন টি) ভেতরে রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান রয়েছে। সবুজ চা সেবন হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী।
বাদাম খান
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয়েছে, বাদাম খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে। বিশেষত কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম উপকারী। বাদামে প্রচুর ক্যালরি আছে। এ জন্য পরিমিত পরিমাণে বাদাম খাওয়া উচিত।
ধূমপান পরিহার করুন
ধূমপান করলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরল বা বেশি ঘনত্বের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। অতএব, রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।