অনিন্দ্য আফরোজ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি নাম, একটি কিংবদন্তী। যিনি সারা পৃথিবীর নিপিড়িত মানুষের সংশপ্তক নেতা হিসেবে আজও মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন বাতিঘর হিসেবে। তিনি বাঙালী ও বাংলা জনপদের হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ। তিনি বাঙালীর লালিত স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, আমাদের জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন ছোটবড় সবার প্রিয়। বিশেষ করে শিশুদের তিনি খুবই ভালোবাসতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে দেশগড়ার নেতৃত্ব দেবে তারাই। ফলে আগে তাদেরই গড়ে তুলতে হবে’।
জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি শিশুদের প্রতি ছিলেন পরম যত্নবান। এজন্য হাজারো উদহারণের প্রয়োজন পড়ে না কেবল একটি উদহারণই যথেষ্ট। যুদ্ধশিশুদের জীবনরক্ষার জন্য তিনি কি- না করেছেন! অবশেষে এও বললেন-‘ওদের পিতার নাম লিখে দাও শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বইতিহাস এর স্বাক্ষী’।
কিন্তু এই মহান নেতা অপরিণামদর্শী কতিপয় অস্ত্রধারী অসুরের হাতে সপরিবারে শহীদ হন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের দুঃখ-দুর্দশার সাথী হয়ে মানুষের মধ্যে অমর হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু এখন হয়েছেন মিথ। অহিংসা, মানবপ্রেম, ভালোবাসা দিয়ে সমাজে যে আদর্শ তিনি তৈরি করে গেছেন তার কোনো মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই। ব্যক্তি মুজিব না থাকলেও তাঁর আদর্শ ,তাঁর চিন্তা ,তাঁর কর্ম চিরন্তনভাবে সমাজের চালিকা শক্তি হিসেবে এখনো ক্রিয়াশীল। বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলার আনন্দোচ্ছল জীবন, বাবা-মায়ের আদর-যত্ন এবং তখনকার সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন তাতুলে ধরেছেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বিদ্রালয়ের শিক্সার্থীদের অধিকার আদায়ে সামনের সারিতে থেকে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। কিশোর বয়সে প্রতিবাদে মুখর কিশোর খোকা (মুজিব)পরিণত বয়সে তিনি ঝলসে উঠেছিলেন অগণন মানুষের মুক্তির জন্য। একটি জাতির চূড়ান্ত মুক্তির সংগ্রামে। পরিণত বয়সে তিনি হয়ে উঠেছিলেন গ্রিক পুরাণে বর্ণিত লোকদেবতা প্রমিথিউস-হারকিউলিসের মতো। প্রমিথিউস-হারকিউলিস দেবতা হয়েও যেমন ছিলেন মানবতাবাদী, মানুষের বিপদে সর্বদা তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। বঙ্গবন্ধু এমন এক মানবতাবাদী নেতা, যাঁর তুলনা তিনিই।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ও সংগ্রাম
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ সাবেক ফরিদপুর আর বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুন। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় । ১৯২৭ সালে বঙ্গবন্ধুর বয়স যখন ৭ বছর তখন তাঁকে স্থানীয় গিমাডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তারপর ৯ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯২৯ সালে তাঁকে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় চার বছর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। ১৯৩৭ সালে আবারও তিনি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৪৭ সালে সেখান থেকে বিএ পাস করেন। এখানে অধ্যয়নকালীন সময়ে তিনি প্রত্যক্ষ ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এবং এ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র যুব নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী , আবুল হাশেমের মতো বড় বড় নেতাদের সান্নিধ্যে এসে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে রাজনীতির উত্তম শিক্ষাটিও গ্রহণ করেন।
ছাত্রাবস্থা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। আর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে রয়েছে বিশেষ বিশেষ অবদান। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে’ বলে ঘোষণা দিলে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক ওই ঘোষণার প্রতিবাদ জানান। ২ মার্চ ফজলুল হক মুসলিম হলে ভাষার প্রশ্নে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবক্রমে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গড়ে ওঠে। এরপর ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯ –এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি সংগ্রামের প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। জেল,জুলুম, হুলিয়া সব কিছু উপেক্ষা করে তিনি পরিণত হন বাঙালী জাতির আশা-আকাংখার প্রতীকে। ৬৯-এ স্বৈরাচারী আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে শহীদ আসাদের রক্তে বিধৌত ঢাকার রাজপথে জনতার নেতা শেখ মুজিব হন বঙ্গবন্ধু। এরপর ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার জাতীর পরিষদের ১৬২টি এলাকাভিত্তিক আসনের মধ্যে ১৬০টিতে জয়লাভ করে। সংরক্ষিত সাতটি নারী আসনসহ আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত অসনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৭। আবার প্রাদেশিক পরিষদের মোট ৩০০টি এলাকাভিত্তিক আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮৮টিতে জয়লাভ করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে নানামুখী তালবাহানার আশ্রয় নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা হিসেবে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। জনতার মহাসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মাত্র ১৮ মিনিটের এই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি অসহযোগের ডাকও দেন। এই ভাষণ হয়ে ওঠে পৃথিবীর বিখ্যাত ভাষণের একটি। ২০১৭ সালে তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণকে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
শিশুদের বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু যেমন মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন সংশপ্তক এবংদৃঢ়চেতা ও আপোষহীন। তেমনি তাঁর হৃদয় ছিল শিশুর মতো কোমল, উদার ও মানবিক। ক্ষমা, পরমত সহিষ্ণুতা, উদারতার মতো মহান দৃষ্টান্ত তাঁর চরিত্রকে আরো সুমহান আর উজ্জ্বল করে তুলেছে। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁর অপরিসীম ত্যাগ আমাদের জন্য পরম এক শিক্ষা।
শিশুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয় ছিল অবারিত। তিনি সময় পেলেই শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন, তাদের জন্য কিছু করার কথা ভাবতেন।শিশুদের নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই ভেবেছিলেন শিশুদের সুরক্ষায় পূর্ণাঙ্গ একটি আইন থাকা জরুরী। তাঁর এই চিন্তার প্রতিফলন আমরা দেখি ১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইন (চিলড্রেন অ্যাক্ট) প্রণয়ন মধ্যদিয়ে।
তিনি শিশুদের আনন্দ ও হাসি-খুশি রাখার ওপর গুরুত্ব দিতেন। তিনি সব সময় চাইতেন শিশুরা সৃজনশীল মুক্ত মনের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক। কিশোর বয়স থেকে তিনি যেমনি মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন তেমনি শিশুদেরকেও সচেতন, সংগ্রামী ও অন্যের জন্য দরদী হতে বলতেন। রাজনীতি কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে তিনি যখন গ্রামে যেতেন তখন যাওয়ার পথে শিশুদের দেখলে তিনি গাড়ি থামিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করতেন, খোঁজ খবর নিতেন। দুঃস্থ ও গরীব শিশুদের দেখলে তাদের ভালোবেসে কাছে টানতেন। কখনও কখনও নিজের গাড়িতে করে দুঃস্থ বাবাদের অফিস ও বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। কাপড়-চোপরসহ নানা উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতেন।
যে শিশুদের সুরক্ষার জন্য আমাদের দেশে আজ শিশু দিবস পালিত হচ্ছে, সেই শিশুরা খুব একটা সন্তোষজনক পরিবেশে নেই। দেশে ০-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। এদের মধ্যে প্রায় ৭৯ লাখ শিশু অনাকাঙ্খিত ভাবে ৪৩০ ধরণের অর্থনৈতিক কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এর মধ্যে ৪৫ ধরণের কাজ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। ২০১৩ সালের জরিপ মতে, দেশের প্রায় ১২ লাখ শিশু অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। বিশ্ব জরিপে, শিশু শ্রমের দিক দিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেকে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে দেখা যায়। এ থেকে আমাদের দেশে শিশু শ্রমের প্রকৃত অবস্থা জানা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের তথ্য মতে, দেশে শিশু শ্রমের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব শ্রম সংস্থার নিয়ম কানুন মেনে চলা, পোশাক শিল্পে শিশুশ্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করায় এমনটা সম্ভব হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচারনার দায়িত্ব নেওয়ায় দেশে শিশুশ্রম অনেকাংশে লোপ পেয়েছে। শিশুদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। এমনকি পথশিশুদের জন্য শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রতিবছর দেশে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে যাচ্ছে বিনামূল্যে নতুন ঝকঝকে পাঠ্যবই। এরক হাজারো সুযোগ-সুবধায় আজ বাংলাদেশের শিশুরা আজ বেড়ে উঠছে অনুকূল পরিবেশে। যেটা বঙ্গবন্ধুও চাইতেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এদেশের সব মানুষ ভাল থকিুক, সুখে থাকুক তেমনি শিশুরাও ভাল থাকুক, ভাল পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাক।
বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, ‘আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে দেশগড়ার নেতৃত্ব দেবে তারাই। ফলে আগে তাদেরই গড়ে তুলতে হবে’। যখন তিনি বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি, একজন নেতা হয়ে উঠছেন কেবল, তখনও তিনি তার পরিকল্পনায় শিশুবান্ধব সিদ্ধান্ত রাখতেন। শিশুরা সৃজনশীল ও মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক সেটি ছিল তাঁর আকাঙ্ক্ষার বিষয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি যখন সবার বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন, তখনও তিনি শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। শিশুদের কোনও সমাবেশে গেলে বা শিশুরা গণভবনে তাঁর কাছে গেলে, তিনি শিশুর মতো তাদের সঙ্গে মিশে যেতেন।
১৭ মার্চ শিশু দিবস কেন?
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, একটি স্বাধীন দেশের স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন একটি ঐতিহাসিক এ দিনটি কেন জাতীয় শিশুদিবস হলো?এর উত্তর লুকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর শিশুদের জন্য নেওয়া নানা কর্মসূচির মধ্যেই। বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুব আদর করতেন। তিনি জানতেন, শিশুদের তৈরি করতে পারলেই আগামী দিনে তিনি পাবেন একটি সৎ ও সাহসী জাতি। মূলত বঙ্গবন্ধু মহান দর্শন আর জীবনাচরণ শিশুদের মধ্যে গ্রোথিত করতে পারলেই আজকের শিশুরা ভবিষ্যত বাংলাদেশের যোগ্য, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। এর মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারা অবদান রাখতে পারবে। মূলত সেই দিক বিবেচনা করেই ২০০৯ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
সবশেষে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর একটি অংশ উদ্ধৃত না করলেই নয়। এই সংগ্রামী নেতা তাঁর সংগ্রামমুখর জীবনে তিনি নিজের জন্মদিন পালনের কথা কখনো ভাবতে পারেননি। জন্মদিনের উৎসবের কথা শুনে অবাক হয়ে বলেছিলেন-
‘এই দুঃখিনী বাংলায় আমার জন্মদিনই বা কি আর মৃত্যুদিনই বা কি?আপনারা বাংলাদেশের অবস্হা জানেন। এদেশের জনগণের কাছে জন্মের আজ নেই কোনো মহিমা।যখনি কারো ইচ্ছা হয় আমাদের প্রাণ দিতে হয়।বাংলাদেশের জনগণের জীবনের কোনো নিরাপত্তাই তারা রাখেনি। জনগণ আজ মৃতপ্রায়। আমার আবার জন্মদিন কি? আমার জীবন নিবেদিত আমার জনগণের জন্যে। আমি যে তাদেরই লোক’।
জনগণের কথা লিখতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন-‘কিছুই তো করতে পারলাম না।শুধু এইটুকু বলতে পারি,নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করার চেষ্টা করেছি’।
এমন মহান ব্যক্তিকে কেউ কি হত্যা করতে পারে? পেরেছে কখনো? নিশ্চয়ই না। তিনি মিশে আছেন এদশের অগণন শিশুর স্বপ্নে, কল্পনার রাজ্যে। যে শিশুরা তাঁর মহান দর্শন আর সুমহান শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে বেড়ে উঠবে। প্রতিষ্ঠা করবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।