আয়না২৪
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি আস্তানায় অন্তত দুই জঙ্গি মারা পড়েছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে। তবে ভেতরে আরও জঙ্গি থাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিববাড়ির পাঠানপাড়ার আতিয়া মহল ঘিরে অভিযানের তৃতীয় দিন গতকাল রবিবার বিকালে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। তিনি বলেন, অভিযানে ‘ভালো’ ঝুঁকি রয়েছে। ভেতরে অবস্থানরত জঙ্গিরা বেশ কৌশলী। ফলে বলা যাচ্ছে না, কখন অভিযান শেষ হবে। গতকাল জঙ্গিদের অজ্ঞান করতে চেতনানাশক ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ১৪৪ ধারা জারি করে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে গত শুক্রবার ভোর থেকে এই অভিযান শুরু হয়।
শনিবার এই অভিযান চলার সময় বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা। নিহতরা হলেন-জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়সার, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহিম, কলেজছাত্র অহিদুল ইসলাম অপু, নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম (৩৮) ও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কাদিম শাহ (৩৫)। সকালে কাদিমের স্বজনরা হাসপাতালে এসে লাশ শনাক্ত করেন। এক আত্মীয় জানান, শহীদ আর কাদিম বন্ধু। শহীদের ডেকোরেটর ব্যবসা আছে। সেখানে কাদিমও সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। এক অনুষ্ঠানের কাজ পেয়ে তারা দুজন শনিবার শিববাড়িতে গিয়েছিলেন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল বিকাল ৫ টায় এক ব্রিফিং-এ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল হাসান বলেন, ‘ভিতরে একের অধিক জঙ্গি রয়েছে। তাই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘তারা বাড়িটিতে বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লাগিয়ে রেখেছে। ফলে কমান্ডোদের বেশ সতর্কতার সাথে কাজ করতে হচ্ছে।’ ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, ‘আমরা রকেট লাঞ্চার দিয়ে দেয়ালে ছিদ্র করে তারপর সেখান দিয়ে ভেতরে টিয়ারশেল ছুড়েছি।’ তারা টিয়ার সেল নিষ্ক্রিয় করার পদ্ধতি জানে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরপরও তাদের পক্ষে ভেতরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।’ এখন পর্যন্ত দু’জন পুরুষ সদস্য নিহত হয়েছে। এখনও একাধিক জঙ্গি ভেতরে আছে। অভিযান সার্বক্ষণিক চলবে, যতক্ষণ না সমাধান হবে। তিনি আরো বলেন, ‘পুরো এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।’
দিনভর বিস্ফোরণ-গুলি: গতকাল দিনভর বিস্ফোরণ, গুলি, গ্রেনেডের শব্দে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি তথা গোটা সিলেট প্রকম্পিত হয়। কখনো থেমে থেমে আবার কখনো একনাগাড়ে গোলাগুলি চলছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেট তথা দেশ জুড়ে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার গভীর রাতে ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেওয়া হয়। মাইকে করে এলাকাবাসীকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়। মসজিদের মাইকে করে জানানো হয়েছে যে অপরিচিত লোক বা কারো চলাফেরায় সন্দেহ হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে বলা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে হুমায়ূন রশীদ চত্বর থেকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিবাবাড়ি, পাঠানপাড়া, গুটাটিকর, মেমিনখলাসহ বেশ কয়েকটি মহল্লার মানুষ এখন কার্যত বন্দী। তারা গ্যাস, পানি, বিদ্যুত্ না পেয়ে কষ্টে পড়েছেন। জঙ্গি অভিযানের অংশ হিসাবে সেখানে এসবের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। একই কারণে বেশ কয়েকটি মিষ্টান্ন ও বেকারি সমাগ্রী প্রস্তুতকারী কারখানা বন্ধ থাকায় কয়েকশত শ্রমিক বেকার রয়েছে তিন দিন থেকে। শহরে প্রবেশ পথসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ইউনিট, সোয়াত, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ-র্যাব জঙ্গিদের জীবিত ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্ত জঙ্গিরা আত্মসমর্পন করছে না। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধারণা আতিয়া মহলের নিচতলার ফ্লাটে ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক রয়েছে। বাড়িতে বিধ্বংসী ব্যবস্থা নিয়ে জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত আতিয়া মহল ও তার আশেপাশের এলাকায় চারটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ বিস্ফোরণটি খুবই শক্তিশালী ছিল । বিস্ফোরণের পর গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। বেলা ১২ টার দিকে একটি বিস্ফোরণে আতিয়া মহলের পলেস্তেরা খসে পড়ে বলে স্থানীয়রা জানান। ভোরের দিকেও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা জানান, উদ্ধার করা ৭৮ জনকে পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে।