আয়না২৪ প্রতিবেদন
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতার শটগানের গুলিতে সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল নিহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীরা ফুসে উঠেছেন। বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে শাহজাদপুর উপজেলায় আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল পালন করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার সকালে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে দুপুর দেড়টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত শিমুল দৈনিক সমকাল পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি শাহজাদপুর পৌর শহরের মাতলা গ্রামে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে গেছেন।
এদিকে মেয়র হালিমুল হকের ‘গুলিতেই’ সাংবাদিক আবদুল হাকিম (শিমুল) মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সিরাজগঞ্জ -৬ আসনের সাংসদ হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত পৌর মেয়র হালিমুল হক গুলি ছুড়েছেন।
পৌর মেয়র হালিমুল হক জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সাংবাদিক হত্যা মামলার আসামি। নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী নুরুন নাহার বেগম গতকাল শুক্রবার শাহজাদপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এতে মেয়র হালিমুল হক, তাঁর দুই ভাইসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের পর পুলিশ পৌর মেয়রের লাইসেন্স করা শটগান জব্দ করে এবং তাঁর ভাইকে আটক করে। পৌর মেয়র ঘটনার পর থেকেই পলাতক। এ ঘটনায় আজ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয়জন।
সাংবাদিকের জানাজার আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক সাংসদ চয়ন ইসলাম, যুবলীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক উপদেষ্টা সাজ্জাদ হায়দার, শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফজল এ খোদা লিটন, শাহজাদপুর সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল হাসনাত প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, শাহজাদপুরের দিলরুবা বাস টার্মিনাল থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তার টেন্ডার পাওয়ার পর অনেকদিন কেটে গেলেও ঠিকাদার কাজ শুরু করেনি। বিষয়টি নিয়ে বেশ সক্রিয় হওয়ায় ঠিকাদার পক্ষের লোকজন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিবাড়ি এলাকায় পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি রহিমের শ্যালক ছাত্রনেতা বিজয়কে বেধড়ক মারপিট করে তার হাত-পা ভেঙে দেয়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও তার মহল্লা কান্দাপাড়ার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এ অবস্থায় অবরোধকারীদের একটি অংশ ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরামপুর এলাকায় পৌর মেয়রের বাড়ি ঘিরে ফেলে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পৌর মেয়র তার শটগান দিয়ে গুলি করে। এতে স্থানীয় সাংবাদিক শিমুলের মাথা ও মুখে গুলি লাগে। দু’পাশ থেকেই গুলি করা হয়েছে বলে মেয়র দাবি করলেও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় শুধু মেয়রের শটগান থেকেই গুলি ছোড়া হয়েছিল। সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ ইরতিজা আহসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর আলম খান বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েনতাঁর নানী রোকেয়া (৯০)। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।