আয়না২৪ প্রতিবেদন
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি মনে করি- আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে যদি সম্মান দেয়া হয় তবে ভাস্কর্য সরানো একটি সঠিক সিদ্ধান্ত।
বিএনপির এই নীতি নির্ধারক নেতা আরো বলেন, কার দাবিতে এটা সরানো হয়েছে সেটা বড় বিষয় নয়। কারণ, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সুপ্রিম কোর্টের মতো একটি জায়গায় একটি নারী মূর্তি স্থাপনের বিষয়টি কোনোভাবেই সঠিক ছিল না। আর সংস্কৃতির দিক বিবেচনায়ও এ ভাস্কর্য ছিল প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ সংস্কৃতি ধর্মের বাইরে না। ধর্ম বিশ্বাসকে ধারণ করেই সংস্কৃতির বিকাশ হয়।
তাঁর মতে, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ‘একহাতে খোলা তরবারি অন্যহাতে দাঁড়িপাল্লা’- এমন কোনো অনুষঙ্গ নেই। ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছে এটা গ্রিক দেবি থেমিসের অনুকরণে করা হয়েছে। ফলে সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এ ভাস্কর্য ছিল অপসংস্কৃতির উদাহরণ। গ্রিক চরিত্রের সঙ্গে শাড়ির ব্যবহারে ভাস্কর্যটির ধারণাও ত্রুটিপূর্ণ। এটি ‘বিকৃতির’ ঘটনা ঘটেছে কিনা সে ব্যাপারে সঠিক ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি। তাই এ ধরনের ভাস্কর্য সরানোর ঘটনায় বহির্বিশ্বে প্রভাব পড়ার কিছু নেই। সুপ্রিম কোর্টের মতো জায়গায় কেন এ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল সেটা এখনো আমার কাছে প্রশ্ন।
ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে ড. মোশাররফ বলেন, এটা কোনোভাবেই আন্দোলনের বিষয় বলে আমি মনে করি না। কারণ আজকে যারা আন্দোলন করছে ভাস্কর্য তো তাদের দাবি বা আন্দোলনের মুখে সেখানে স্থাপন করা হয়নি। যেহেতু তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ভাস্কর্যটি সেখানে করা হয়নি তাই অপসারণের ঘটনায় তাদের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। যারা স্থাপন করেছিল, তারাই সরিয়েছে; তো এখানে আন্দোলনের কি আছে? আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটা পুলিশ এবং আইনের বিষয়।
ভাস্কর্য অপসারণ ইস্যুতে সরকারের কতিপয় শরিক দলের প্রতিবাদের ব্যাপারে বিএনপি নীতি নির্ধারক ফোরামের এ সদস্য বলেন, ভাস্কর্য সরানোর ঘটনায় দেশে নতুন কোনো রাজনৈতিক মেরুকরণের সম্ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না। এটা জাতীয় রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। যারা করছে তারা সস্তা রাজনীতিই করছে।
ভাস্কর্য সরানোর বিষয়টি হেফাজতের সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কথার বাস্তবায়ন বলে মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, হতে পারে এটা হেফাজতের সঙ্গে গণভবনে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কথার বাস্তবায়ন। তবে হেফাজত সকল মূর্তি অপসারণের দাবি করেছিল। ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কিন্তু আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন ভিন্ন কথা।
এ ব্যাপারে ড. মোশাররফ বলেন, যারা স্থাপন করেছিল তারাই তো সরিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সুপ্রিম কোর্টের সম্মতি ছাড়া কোনো ভাস্কর্য স্থাপনের সুযোগ নেই। আবার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ছাড়া এটা অপসারণের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তে স্থাপন এবং অপসারণের বিষয়টিই সঠিক। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর মতো এতবড় একটি ঘটনা সরকার জানে এটাও ঠিক না। সরকার না জানলে আইনমন্ত্রী কীভাবে বললেন। তিনি সে ভাস্কর্যকে ‘বিকৃত মূর্তি’ আখ্যায়িত করে ‘সে মূর্তি সরিয়ে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মকে সম্মান করা হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যে পরিষ্কার যে, অপসারণের বিষয়টি সরকার জানে। নইলে সরকার না জানলে তিনি কিভাবে জানেন?
আইনমন্ত্রী তো বলেছেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি জানেন। এছাড়া ভাস্কর্য সরানোর পর হেফাজত তো প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। এখানে সরকারের না জানার কোনো কারণ নেই।