বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট করপোরেশনের সহ প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার ৩৩ বছর পর ২০০৭ সালের ৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফিরে আসেন ডিগ্রি অর্জনকারীদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়া এবং একটি সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণের জন্য। তাঁর ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিল বৈশ্বিক দারিদ্র্য, রোগ-জীবাণুর মতো বিরাট সমস্যা মোকাবিলায় কীভাবে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষের; বিশেষ করে তরুণদের সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যায়। তাঁর এ ভাষণের সংক্ষেপিত অনুবাদ আয়না২৪-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল ।
‘বাবা, আমি তোমাকে সব সময় বলেছি, আমি ফিরে আসব, ডিগ্রি অর্জন করব’—৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি অপেক্ষা করছি এই একটি কথা বলার জন্য।
অবশেষে আমার জীবনবৃত্তান্তে একটি কলেজ ডিগ্রি যুক্ত হলো। ব্যাপারটা দারুণ।
আজকের ডিগ্রি অর্জনকারীরা আমার চেয়ে সোজা পথে হেঁটে তা অর্জন করেছেন। এ জন্য তাঁদের অভিনন্দন। দৈনিক ক্রিমসন যে আমাকে ‘হার্ভার্ড থেকে ঝরে পড়া সবচেয়ে সফল’ ব্যক্তি বলে আখ্যায়িত করেছে, এতেই আমি খুশি। আমার মনে হয়, এই শব্দগুচ্ছ আমার সমগোত্রীয়দের মধ্যে আমাকে বিশেষ মর্যাদায় আসীন করেছে…। যাঁরা ফেল করেছেন, তাঁদের মধ্যে আমি সবচেয়ে ভালো করেছি।
কিন্তু আমি চাই, লোকে বলুক যে আমার কারণেই স্টিভ বালমার ঝরে পড়েছিলেন। আমার প্রভাব ‘অশুভ’। এ জন্য হয়তো আপনাদের সমাবর্তনে আমাকে বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আপনাদের নবীনবরণের দিনে আমি বক্তৃতা দিলে হয়তো এখানকার অনেকেই আজ এখানে থাকতেন না। আমার কাছে হার্ভার্ড এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। শিক্ষাজীবনটা ছিল আকর্ষণীয়। এমন অনেক ক্লাসে উপস্থিত হতাম, যেগুলো আমার ছিল না। ডরমিটরির জীবন ছিল দারুণ। সবাই জানতেন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার তাড়া নেই আমার; তাই গভীর রাত অবধি বহুজন নানা বিষয়ে আলাপ জমাতেন আমার ঘরে। এমন করে আমি ‘অসামাজিক’ একদল ছাত্রের নেতা বনে গেলাম।
হার্ভার্ডে আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত আসে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে। তখন আমি আলবুকুয়ের্কের এক কোম্পানিকে ফোন করে তাদের কাছে সফটওয়্যার বিক্রির প্রস্তাব করি। সেই সময় কোম্পানিটি পৃথিবীর প্রথম পারসোনাল কম্পিউটার (পিসি) তৈরি শুরু করেছিল। আমার ভয় হচ্ছিল, তারা হয়তো বুঝে ফেলবে আমি এক ছাত্র আর ফোনটা রেখে দেবে। কিন্তু উল্টো বলল, ‘আমরা এখনো প্রস্তুত নই, মাসখানেক পর খোঁজ নিন।’ এতে বেশ ভালো হলো। কারণ, তখনো আমাদের সফটওয়্যারটির কাজ শেষ হয়নি। সেই মুহূর্ত থেকে আমি এ প্রকল্পে লেগে পড়ি। এর মধ্য দিয়ে আমার কলেজজীবনের শিক্ষার অবসান ঘটে। মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু হয়।
পৃথিবীতে কী সাংঘাতিক বৈষম্য আছে, সে সম্পর্কে সত্যিকারের কোনো ধারণা না নিয়েই হার্ভার্ড ছেড়েছি। স্বাস্থ্য, সম্পদ ও সুযোগের মর্মান্তিক বৈষম্যের কারণে কোটি কোটি মানুষ নৈরাশ্যের জীবনের দুর্ভোগ পোহায়, সে সম্পর্কে তখনো আমি সচেতন হয়ে উঠিনি।
অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন অনেক চিন্তার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছে হার্ভার্ডে। বিজ্ঞানের নানা অগ্রগতি সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু মানবজাতির মহত্তম অগ্রগতি কোনো আবিষ্কারের মধ্যে নিহিত নয়, বরং বৈষম্য কমাতে এসব আবিষ্কার কেমন কাজে লাগে সেটাই বড় কথা। গণতন্ত্র, শক্তিশালী গণশিক্ষা, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বা বিস্তৃত অর্থনৈতিক সুযোগ—যেভাবেই হোক, বৈষম্য দূর করা হলো সর্বোচ্চ মানবিক অর্জন।
লাখ লাখ তরুণ যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন, এ কথা না জেনেই আমি ক্যাম্পাস ছেড়েছি। আমি তখনো জানতাম না, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দারিদ্র্য ও রোগে ভোগে।
এসব জানতে আমার কয়েক দশক লেগেছে।
এখন সময় পাল্টেছে। বিশ্বের বৈষম্য সম্পর্কে আজকের তরুণেরা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি জানেন। আশা করি, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে কেমন করে এসবের মোকাবিলা করবেন, সমাধান করবেন—তা চিন্তা করার সুযোগ পান।
আমাদের যে সম্পদ আছে তা দিয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের জন্য সর্বোত্তম কাজটা কীভাবে করতে পারব—এ বিষয়ে কথাবার্তার সময় মেলিন্ডা ও আমি গরিব দেশগুলোতে হাম, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, হেপাটাইটিস বি এবং ইয়েলো ফিবারের মতো কিছু রোগে প্রতিবছর লাখ লাখ শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে একটি প্রবন্ধ পড়ি। আর রোটা ভাইরাসের কথা তো আমি আগে কখনো শুনিনি। এই রোগে প্রতিবছর পাঁচ লাখ লোক মারা যাচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা শূন্য। আমরা দুঃখ পেলাম। এই লাখ লাখ শিশুর এমন মৃত্যু রোধ করার জন্য ওষুধ আবিষ্কার ও পৌঁছে দেওয়াকে অগ্রাধিকার হিসেবে নেওয়া দরকার; কিন্তু তা হয়নি। প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান হলে কিছু জীবন বাঁচানো অন্য জীবনের তুলনায় মূল্যবান হিসেবে দেখা অত্যন্ত দুঃখজনক। নিজেদের মধ্যে কথা হয়, ‘এটা হতে পারে না। কিন্তু বাস্তবে যদি তা-ই হয়, তবে এ জায়গাটিই আমাদের দানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে।’
আমাদের তখন প্রশ্ন, বিশ্ব কেমন করে এসব শিশুদের মরতে দেয়? উত্তরটা সরল ও রূঢ়। বাজার এসব শিশুর জীবন রক্ষার কোনো পুরস্কার দেয় না, আর সরকারও এতে ভর্তুকি দেয় না। তাই এসব শিশু মারা যাচ্ছে। আমরা নানা মানবিক বিপর্যয় দেখেছি, এই সব বিপর্যয়ে মন ভেঙে গেছে কিন্তু তবুও আমরা কিছু করিনি। আমরা এগুলোকে পরোয়া করিনি এমন নয়, আসলে কী করব তা জানি না বলেই এমন হয়। যদি জানতাম কেমন করে সাহায্য করা যায়, তাহলে আমরা সক্রিয় হতাম।
অতি জটিলতা পরিবর্তন ঘটানোর পথে প্রতিবন্ধকতা। কম পরোয়া করা নয়।
অন্যের প্রতি দরদকে সক্রিয়তায় রূপ দিতে দরকার সমস্যাকে দেখতে পারা, সমাধান দেখতে পারা এবং প্রভাব দেখতে পারা। কিন্তু এই তিন পদক্ষেপকেই রুদ্ধ করে জটিলতা। ইন্টারনেট এবং ২৪ ঘণ্টা সংবাদের অগ্রগতি সত্ত্বেও সত্যিকারে সমস্যাকে দেখতে পারার প্রক্রিয়াটি এখনো জটিল। ঠেকানো সম্ভব, এমন লাখ লাখ মৃত্যু নিয়ে আমরা খুব বেশি পড়ার সযোগ পাই না। গণমাধ্যম ব্যস্ত থাকে নতুনের খোঁজে। লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে এটা তো নতুন নয়। তাই পশ্চাত্পটেই থেকে যায়, যা খুব সহজেই অগ্রাহ্য করা যায়। কোনো দুর্দশার পরিস্থিতি যদি এমন জটিল হয় যে কেমন করে আমরা সহায়তা করব, তা না জানি; তাহলে সেই দুর্দশা দেখা কষ্টকর হয়ে ওঠে। আর তাই আমরা দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিই।
সত্যি সত্যি কোনো সমস্যা দেখতে পারার কাজটি প্রথম পদক্ষেপ, পরের পদক্ষেপ জটিলতা অতিক্রম করে কোনো একটা সমাধানের খোঁজ করা। অন্যের প্রতি আমাদের দরদকে সর্বোচ্চ মূল্য দেওয়ার জন্য সমাধান খুঁজে বের করা অপরিহার্য। কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি কেমন করে সহায়তা করতে পারে, এ প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট ও প্রামাণিক জবাব থাকলে আমরা সক্রিয়তা দেখতে পারি। কিন্তু নানা জটিলতা এমন সব দরদির জন্য সক্রিয়তার পথ চিহ্নিত করার কাজটিকে কঠিন করে তোলে।
জটিলতা অতিক্রম করে সমাধানে পৌঁছার পথটি চার স্তরের—লক্ষ্য স্থির করা, সবচেয়ে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করা, সেই উপায়ের জন্য আদর্শ প্রযুক্তি আবিষ্কার করা এবং আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত আমাদের হাতে যে প্রযুক্তি রয়েছে, সেগুলোর জুতসই ব্যবহার করা। এই প্রযুক্তি কোনো ওষুধের মতো জটিল বা মশারির মতো সরলও হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, এইডস মহামারির কথা বলা যায়। বড় অর্থে আমাদের লক্ষ্য এই রোগ নির্মূল করা। সবচেয়ে কার্যকর উপায় এ ক্ষেত্রে প্রতিষেধক। আদর্শ প্রযুক্তি হবে কোনো ওষুধ, যার এক মাত্রা প্রয়োগে সারা জীবনের জন্য এ রোগ হবে না। তাই সরকার, ওষুধ কোম্পানি ও সংস্থাগুলো ওষুধ গবেষণায় অর্থ প্রদান করে। কিন্তু তাদের কাজ সম্পন্ন হতে এক দশকেরও বেশি সময় লাগতে পারে, এ সময়ে আমাদের হাতে যা আছে তা দিয়েই কাজ চালাতে হবে—আর এখন আমাদের হাতে সবচেয়ে ভালো প্রতিষেধক উপায় হলো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিহার করা।
এ লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো কখনো কাজ ও চিন্তা না থামানো আর জটিলতার কাছে হার না মানা।
শেষ পদক্ষেপটি হলো কর্মকাণ্ডের প্রভাব পরিমাপ এবং সাফল্য-ব্যর্থতা অন্যকে অবহিতকরণ, যাতে এই প্রচেষ্টা থেকে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। পরিসংখ্যান অবশ্যই খুব জরুরি। কতজন শিশু কোন কর্মসূচির আওতায় ওষুধ পেল, কোন রোগে মৃত্যুর সংখ্যা কত কমল—এসব তথ্য যেমন কর্মসূচিতে উন্নতি ঘটানোর জন্য প্রয়োজন, তেমনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়ার জন্যও অপরিহার্য।
কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করতে হলে শুধু সংখ্যার উপস্থাপন করলেই চলবে না। কাজের মানবিক প্রভাবটাও প্রকাশ করতে হবে, যেন অনুভব করা যায় আক্রান্ত পরিবারের কাছে একটি জীবন কতটা মূল্যবান।
কয়েক বছর আগে দাভোসে একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য প্যানেলের সদস্য হিসেবে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে আলোচনা হচ্ছিল কেমন করে লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়। লাখ লাখ! মাত্র একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর কথাটা ভাবুন। এবার লাখ লাখ দিয়ে গুণ করুন…। তবু এটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ক্লান্তিকর প্যানেল।
একটি সফটওয়্যারের ত্রয়োদশ সংস্করণ বাজারে ছাড়ার অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। এই অনুষ্ঠানে লোকজন উত্তেজনায় লাফাচ্ছিল, চিত্কার করছিল। সফটওয়্যার নিয়ে উত্তেজনা আমাকে আনন্দিত করে। কিন্তু জীবন বাঁচানো নিয়ে আমরা কেন আরও বেশি উত্তেজনা তৈরি করতে পারি না? তবু আমি আশাবাদী। হ্যাঁ, বৈষম্য সব সময় আমাদের সঙ্গে ছিল, কিন্তু জটিলতা নিরসনের নতুন উপাদানগুলো আমাদের ছিল না। আর এ জন্যই অতীত থেকে ভবিষ্যত্ ভিন্নতর হয়। চরম দারিদ্র্র্যের অবসান ও প্রতিষেধনক্ষম রোগ থেকে মৃত্যু বন্ধ করার সুযোগ করে দিয়েছে বর্তমান সময়ের জৈবপ্রযুক্তি, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের বিস্তৃতি।
৩০ বছর আগে আমার সহপাঠীরা পাস করে বেরোনোর সময় এমন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটছিল, যা বিশ্বকে ক্রমাগত ছোট, অধিকতর মুক্ত, অধিকতর দৃশ্যমান, কম দূরত্বের করে তুলছিল। স্বল্প-ব্যয়ের পারসোনাল কম্পিউটার শক্তিশালী এক নেটওয়ার্কের উত্থান ঘটায়, যা শিক্ষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে রূপান্তর ঘটায়। দূরত্ব কমিয়ে সবাইকে পরস্পরের প্রতিবেশী করে তোলার জাদুকরী ক্ষমতা এই নেটওয়ার্কের।
পাশাপাশি এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা ব্যবহারকারীর পাঁচ গুণ। বহু মানুষ প্রযুক্তি হাতে না থাকার ফলে তাদের প্রতিভা কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে না। সম্ভবপর সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে এই প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা দরকার। কারণ, মানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে প্রাযুক্তিক এই অগ্রগতি এক বিপ্লবের সূত্রপাত করছে।
আপনাদের সবাই কাজের সময় নিজেকে প্রশ্ন করুন, বড় সমস্যাগুলোর সমাধানে সবচেয়ে মেধাবীদের নিয়োজিত করা উচিত নয় কি? সবচেয়ে সুবিধাভোগীদের কি উচিত নয় সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সম্পর্কে জানা? এগুলো শুধু প্রশ্নের খাতিরে প্রশ্ন নয়—এসবের উত্তর আপনাদের নীতিগত অবস্থানের মাধ্যমে দিতে হবে।
আমার মা আমাকে সব সময় অন্যদের জন্য কাজ করার ব্যাপারে চাপ দিতেন। আমার বিয়ের কদিন আগে এক অনুষ্ঠানে মেলিন্ডাকে লেখা তাঁর একটি চিঠি তিনি সশব্দে পড়ে শোনান। তখন আমার মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে খুব অসুস্থ। অন্যদের কাছে তাঁর কথা পৌঁছে দেওয়ার এ সুযোগটি তিনি কাজে লাগালেন। চিঠিটির শেষে তিনি বললেন, ‘যাদের অনেক দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশাও অনেক।’
এখানে সমবেতদের যা দেওয়া হয়েছে—প্রতিভায়, সুযোগে, সুবিধায়; সে বিবেচনায় তাদের বা আমাদের কাছে সীমাহীন প্রত্যাশা করার অধিকার বিশ্বের রয়েছে। ডিগ্রি অর্জনকারী প্রত্যেককে আমি বলব, কোনো একটি বিষয় বেছে নিন, কোনো জটিল সমস্যা, কোনো গভীর অন্যায্যতা এবং সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠুন। এটা আপনার পেশাজীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলে তা হবে এক বিশাল ঘটনা।
জটিলতা যেন আমাকে থামাতে না পারে। কর্মী হয়ে উঠুন। বড় ধরনের বৈষম্য নিয়ে কাজ করুন। সেটা হয়ে উঠবে আপনার জীবনের মহত্তম অভিজ্ঞতা। এক আকর্ষণীয় সময়ে আপনাদের বেড়ে ওঠা। আপনাদের কাছে এমন প্রযুক্তি, যা আমাদের ছিল না। আপনারা বৈষম্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আমরা ছিলাম না। এই সচেতনতার সঙ্গে আপনাদের হয়তো আছে সচেতন বিবেক: আপনার সামান্য প্রচেষ্টায় বহু মানুষের জীবন বদলে দেওয়া সম্ভব, কিন্তু আপনি সে চেষ্টা বাদ দিলে আপনাকে তা দংশন করবে। অনেক বেশি কিছু আছে আপনাদের। জলদি শুরু করুন, চালিয়ে যান আরও দীর্ঘ সময়।
আর আমার আশা, এখন থেকে ৩০ বছর পর আপনি হার্ভার্ডে ফিরে এসে বলবেন, আপনার প্রতিভা আপনার শক্তি দিয়ে আপনি কী করলেন। আশা করি, শুধু পেশাগত সাফল্য দিয়ে নয়, বরং বিশ্বের গভীরতর অসমতাকে আপনি কেমন করে মোকাবিলা করেছেন তা দিয়েও নিজেকে মূল্যায়ন করবেন… এক দুনিয়ার ওপারের মানুষেরা—মনুষ্যত্ব ছাড়া আপনার সঙ্গে যাদের অন্য কোনো মিল নেই, তাদের আপনি কেমনভাবে দেখেছেন, তার ভিত্তিতে নিজেকে বিচার করবেন।
আপনাদের মঙ্গল হোক।