খারাপ পরিস্থিতিতে কীভাবে চাপমুক্ত থাকবেন, জেনে নিন

Spread the love

মানুষের  জীবনে নানা সময়েই খারাপ পরিস্থিতি আসে। কারণ, জীবনটাই হলো সংগ্রামের। জীবনে টিকে থাকতে হলে, কিংবা পরিবার, জীবিকা, কর্মক্ষেত্র, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি, অবনতি, দুঃসময় আসে এবং আসবে। এসব নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে চাই মানসিক স্থিরতা। মানসিক স্থিরতা আপনাকে মানসিক শক্তি জোগাবে। আর মানসিক শক্তি আপনাকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবচেয়ে ভালো  সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। খারাপ পরিস্থিতিতে  মানসিক চাপ বা উদ্বেগ আপনাকে গ্রাস করবে এটা স্বাভাবিক। তবে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে কত দ্রুততার সঙ্গে এই চাপ ও উদ্বেগ থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। আর যত দ্রুত সেটা পারবেন ততটাই আপনার সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় আপনি অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। তাই  এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে আপনি  চাপমুক্ত হয়ে ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার মতো  খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করবেন সে সম্পর্কে আপনাকে ধারণা নিতে হতে।  এখানে আমরা  কিছু কৌশলের কথা আপনাকে শোনাতে পারি যা,  অনুসরণ করলে আপনি খারাপ সময়েও মানসিক শান্তি ধরে রাখতে পারবেন। আসুন, জেনে নেই কীভাবে চাপমুক্ত থাকা সম্ভব- তা জানাচ্ছেন  অনিন্দ্য আফরোজ

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন

যখন আপনি আপনারা পারিপার্শ্বিক কিং ব্যক্তি, সামাজিক অথবা পেশাগত ক্ষেত্রে দুঃসময়ের মুখোমিুখি হবেন তখন মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এই সময়ে আপনি মানসিক স্থিতি বাড়াতে এবং চাপ কমাতে   কিছুক্ষণ ধীর গতিতে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।  ধীরগতির এই  গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে  আপনার মন শান্ত হবে। পাশাপাশি আপনার  স্ট্রেস হরমোন  ক্রমাগত কমাতে সহায়তা করবে।  এভাবে পাঁ থেকে দশ মিনিট  সময় নিন এবং আস্তে আস্তে  নাক দিয়ে শ্বাস নিন আবার   মুখ দিয়ে তা শ্বাস ছাড়ুন। দেখবেন আপনি মানসিক চাপ বা ভারমুক্ত হয়ে ভালো বোধ করবেন।

 নিজের ওপর চাপ কমান

সব সময় উদার থাকুন, অন্যের ভালো চান। নিজের প্রত্যাশার সঙ্গে  কারও প্রত্যাশাকে মেলাবেন না কিংবা প্রতিযোগিতায় গিয়ে কাউকে পেছনে ফেলার মানসিকতা পরিহার করুন। একই সঙ্গে নিজের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করাটাও ঝেড়ে ফেলুন।  পারিপার্শ্বিক অবস্থা কিংবা  ব্যক্তিগত  বিরূপ অবস্থায়  নিজেকে দোষারোপ করবেন না বরং এমন সময় ধৈর্য্য ধরুন, উদার হোন। আবার আপনি দুনিয়ার সব সমস্যা সমাধান করার দাযিত্বও মাথায় নেবেন না। মনে রাখবেন আপনি সুস্থ থাকলে, আপনার দক্ষতা, মর্যাদা, সম্মান এবং অবস্থান অক্ষুন্ন থাকলে  আপনি তারপরেই না অন্যের সমস্যাকে সমাধান দিতে পারবেন। তাই নিজের ওপর চাপ কমিয়ে ফেলুন। যতটুকু আপনি বইতে পারেন ততটুকুই চাপ নিন।  তারবেশি হলে এড়িয়ে চলুন। দেখবেন আপনি মানসিকভাবে ঝরঝরে, চনমনে থাকবেন।

 নিজেকে সময় দিন, রুটিন মেনে চলুন

আপনার জীবনে যত খারাপ সময়েই আসুক না কেন আপনি নিজেকে সময় দিতে ভুলবেন না। এ জন্য সময় বের করুন। এই সময়ে হয় পড়ুন, না হয় শিক্ষনীয় সিনেমা দেখুন, না হয় ঘুরে আসুন, অথবা পরিবারের সবার সঙ্গে কাটান।  ভুলবেন না,  প্রতিদিন রুটিন করে  কিছু সময় নিজেকে দেওয়াটা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য খুবই দরকারি। আর এটা অবশ্যই  আপনি নিজের ইচ্ছামতো কাটাবেন। সেইসঙ্গে নিয়মমাফিক জীবন-যাপন করুন।  এতে  আপনার মানসিক চাপ অনেকটা দূর হবে। এতে দিনের কাজগুলো যদি আপনি এভাবে গুছিয়ে নিতে পাবেন এবং একটি সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেন তবে আপনার জীবন হবে চাপ মুক্ত আনন্দময়।

ইতিবাচক চিন্তা করুন

ভালো কিংবা খারাপ উভয় সময় মানুষের প্রবৃত্তিকে  নেতিবাচক চিন্তায় আচ্ছন্ন করবে। এটা জীবনের এক জটিল প্রবৃত্তি। কিন্তু আপনাকে সব সময়ই যে কোনো বিষয় সম্পর্কে ইতিবাচক থাকতে হবে। নেতিবাচক কোনো ঘটনার ভেতরেও ইতিবাচক কিছু ঘটনা লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। আর খারাপ  সময়ে তো  ইতিবাচক থাকা খুবই জরুরি এবং অত্যাবশ্যকীয়।  এটা মনে রাখবেন দুঃসময়ও আপেনি জীবনকে অনেক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ করতে পারেন। আর এটা তো ঠিক যে, দুঃসময় কখনোই চিরস্থায়ী নয়। দুঃসময়কে সুসময়ে রূপান্তর করতে হলে এ জন্য অবশ্যই আপনাকে ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে বেশি বেশি।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান

আপনার জীবনের খারাপ  পরিস্থিতিতে  প্রিয়জনদের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটান। এটা দুঃসময়কে দ্রুত সুমসময়ে রূপান্তর করতে টনিকের মতো কাজ করবে।  সমস্যা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলুন। আবার আপনার অর্জিত  অনুভূতিগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করুন।দেখবেন পরিবার আপনাকে এতে  মানসিক সমর্থন জোগাবে। এটা আপনার জীবনের সমস্যা সমাধানের নতুন মোড় ঘোড়াতে পারে। আর প্রিয়জনদের ভালোবাসা ও সমর্থন মানসিক চাপ কমাতে অত্যধিক কার্যকর এক পদ্ধতি হতে পারে।

ব্যায়াম করুন

অবশ্যই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নিয়মিত সময় নিয়ে ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। মানসিক ও শারিরীক সুস্থতার জন্য এটা অপরিহার্য। আর খারাপ সময়ে ব্রায়াম আপানকে মানসিক চাপ কমাতে খুবই র্কাযকর ভূমিকার রাখতে পারে।  কিছু সময় হাটা, দৌঁড়ানো, যোগ ব্যায়াম বা অন্য কোনও ব্যায়াম করলে মানুষের শরীরে ‘অ্যান্ডোরফিন’ নামক একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। আর এতে আপনার মানসিক অবস্থা  ভালো করতে সহায়তা করবে।

পরিমিত হোন

জীবন-যাপনের সবক্ষেত্রেই  পরিমিত হোন। দেখবেন আপনি সুস্থ থাকবেন। আপনার মানসিক অবস্থাও চনমনে থাকবে।  যেমন, খাবার=দাবাড়,  কাজকর্ম, সম্পর্ক কিংবা  অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে  ভারসাম্য বজায় রাখুন।  কাজের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ নেবেন না।  ব্যক্তিগত জীবনকে কখনোই অবহেলা করবেন না। সবসময় নিজেকে গুরুত্ব দিবেন। আর নিজের দক্ষতা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কখনোই আহংবোধ করবেন না। এতে আপনার ভেতরে এক ধরনের আত্ম অহমিকা তৈরি হব্ যা আপনার পরিমিতি জ্ঞানকে লোপ করে দিতে পারে। যা আপনার মানসিক চাপকে তরান্বিত করতে পারে। এজন্য জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখুন, সবার সঙ্গে মানিয়ে চলুন,ম নিজেকে সময় দিন এবং সবকিছুতে পরিমিত হোন। দেখবেন মানসিকভাবে আপনি অনেকটা সুস্থ-সাবলীল আছেন।

মাইন্ডফুলনেস ধ্যান

আপনার সফলতাকে তরান্বিত করতে হলে  নিজেকে বুঝতে হবে। আর নিজেকে বুঝতে পারলে আপনি আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পাবেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে চাপ পড়বে না। খারাপ পরিস্থিতিতেও আপনি দ্রুত নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবেন। এজন্য  ‘মাইন্ডফুলনেস’ এবং ধ্যান  হচ্ছে একটি কার্যকর পদ্ধতি। যা আপনাকে এই শক্তি জোগাতে পারে। এজন্য প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য আপনি হারিয়ে যান নিজের মধ্যে।  নিজের বর্তমান মুহূর্তের ওপর গভীরভাবে মনোনিবেশ করুন। বাড়ির কোনো নীরব স্থানে আপনি নিয়মিত ধ্যানের কাজটি করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি, স্থিরতা এবং পরিশুদ্ধি মিলতে পারে।  যা আপনার মানসিক  চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এ জন্য আপনি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের ধ্যানের পদ্ধতি জেনে নিতে পারেন।

প্রয়োজনে সাহায্য নিন

মনে রাখবেন যখন আপনি জীবনের সবচেয়ে খারাপ পরিস্তিতিতে পড়বেন তখর সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকটির কাছে সাহায্য চাইবেন। যদি মনে করেন এতেও আপনি এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন না তাহলে আপনি অবশ্যই পেশাদার কারও সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করবেন।   এজন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (সাইকোলজিস্ট) কিংবা  পেশাদার কাউন্সেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এসব আপনার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন। এতে দ্রুত আপনি ইতিবাচক ফল পাবেন।

 

 

Leave a comment: