শহুরে যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু বিশ্রামের জন্য বা শারীরিক ক্লান্তি অথবা মানসিক অবসাদ দূর করার জন্য আমরা অনেক জায়গাতেই তো ঘুরতে যাই। তবে সবসময় দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে যেমন সময় লাগে তেমনি খরচও হয় বেশি। খরচের থেকেও সময় ম্যানেজ করাটাই হয়ে উঠে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। তাই কম সময়ে কাছে কোথাও ঘুরে আসতে পারবেন এমন অনেক জায়গাই আছে ঢাকার আশে পাশে। তারমধ্যে খুব সুন্দর আর মন ভালো করে দেয়ার মতো একটি জায়গা হলো গোলাপ গ্রাম যা ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকার খুব কাছেই সাভারের তুরাগ নদীর তীরে সাদুল্লাপুরের অবস্থান। বিশ্বাস রাখতে পারেন, এই গ্রাম আপনার যান্ত্রিক জীবনের অনেকটা ক্লান্তিই দূর করে দিবে।
পুরোটা গ্রামটাই যেন গোলাপের বাগান! উঁচু জমিগুলো ছেয়ে আছে মিরান্ডি জাতের গোলাপে। লাল, হলুদ, সাদা—কত বর্ণের যে গোলাপ তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যতদূর যাবেন গোলাপে ঢাকা চারপাশ আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। সকালের শিশির ভেজা গোলাপে নরম আলোর ঝিকিমিকি। গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ। গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গোলাপের সৌরভ। এখানের যেকোনো বাগান থেকে কথা বলে আপনি গোলাপ কিনে নিতে পারেন। তবে ওরা ওখানে ১০০-১৫০ এর কম গোলাপ বিক্রি করতে চায় না।
সাহদুল্লাহপুর পুরো গ্রামটাই নানা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ঘেরা। এটাকে গোলাপ গ্রাম বলা হলেও এখানে গোলাপ ছাড়াও অনেক ফুল আছে, যেমন- জারভারা, গ্লাডিওলাস। ঢাকার বেশি ভাগ ফুল চাহিদা এখান থেকে মেটানো হয়। শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন ফুলের বাজারগুলোতে গোলাপের প্রধান যোগান দেন এখানকার চাষিরা।
গোলাপের হাটঃ
স্থানীয় ফুল চাষিরা নিজেদের প্রয়োজনে এ গ্রামেই গড়ে তুলেছেন হাট। শ্যামপুর গ্রামে প্রতি সন্ধ্যায় বসে গোলাপের হাট। সেখানকার আবুল কাশেম মার্কেটের সামনে সন্ধ্যায়ই শুরু হয় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ী এসে ভিড় জমান সেখানে। জমতে থাকে বেচাকেনা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এ ছাড়া মোস্তাপাড়ায় রয়েছে সাবু মার্কেট। এ মার্কেটেও গোলাপ বেচা কেনা হয়। গোলাপের চাহিদা থাকে সব সময়। তাই চাষিরাও সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন। বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ।
কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
বিভিন্ন রুটে গোলাপ গ্রাম বা সাদুল্লাহপুর যাওয়া যায়।
রুট -১ঃ যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফার্মগেট হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধে যাওয়ার বাস সার্ভিস আছে। এ ছাড়া মিরপুর এক নম্বর সেকশন অথবা মিরপুর-১০ কিংবা গাবতলী থেকে রিকশায় সহজেই যাওয়া যায় দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট। এ ছাড়া সিএনজি চালিত অটোরিকশা অথবা ট্যাক্সিক্যাবেও যাওয়া যায় সেই দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাটে। তবে মনে রাখবেন এই দিয়াবাড়ি কিন্তু উত্তরার দিয়াবাড়ি নাহ। তারপর এখান থেকে শ্যালো ইঞ্জিনের নৌকা ১০ মিনিট পরপর ছেড়ে যায় সাদুল্লাপুরের দিকে। স্পিডবোট, কোষা নৌকা, শ্যালো নৌকা চুক্তিতে ভাড়া নিয়েও যাওয়া যায় সাদুল্লাপুর। সে ক্ষেত্রে শুধু যেতে কোষা নৌকার ভাড়া ৩০০ টাকা, শ্যালো নৌকা ২৫০ টাকা, স্পিডবোট ৫০০ টাকা। হেঁটেই পুরো সাদুল্লাপুর চক্কর দেওয়া যায়। আবার গ্রামের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া পিচঢালা পথে রিকশা নিয়েও ঘোরা যায়।
রুট -২ঃ টঙ্গি ষ্টেশন থেকে কামারপাড়া হয়ে সি এন জি রিজার্ভ নিয়ে বিরুলিয়া ব্রিজ। ভাড়া ২০০ টাকা। বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে অটোতে ১০ টাকা ভাড়ায় আরকান বাজার, সেখান থেকে অটোতে ১০ টাকায় সাদুল্লাহপুর বা সরাসরি ২০ টাকায় বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে সাদুল্লাহপুর।
রুট -৩ঃ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং, নর্থ টাওয়ার বা মাসকট প্লাজা থেকে সোনারগাঁ জনপথ ধরে লেগুনাতে দিয়াবাড়ি, তারপর একটু হেটে মেইনরোড, লোকাল গাড়িতে উঠে বিরুলিয়া ব্রিজ। হেঁটেও যেতে পারবেন। বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে অটোতে ১০ টাকা ভাড়ায় আরকান বাজার, সেখান থেকে অটোতে ১০ টাকায় সাদুল্লাহপুর বা সরাসরি ২০ টাকায় বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে সাদুল্লাহপুর।
অথবা এখান থেকে নৌকা রিজার্ভ নিয়ে সরাসরি সাদুল্লাহপুর। রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকার মত। ২৫ জনের মত বসা যায়।
সব থেকে বেস্ট রুট হচ্ছে বিরুলিয়া ব্রিজ এর রুট। কারণ এই পথে দারুণ সব গোলাপের ক্ষেত। রাস্তার দুপাশ জুড়েই। একেবারে পুরো রাস্তা। অটো থামিয়ে থামিয়ে সবগুলো গোলাপের বাগান কাভার করতে পারবেন।
* নৌকা চলাচল ৬ টার পরে বন্ধ হয়ে যায়।
কোথায় খাবেনঃ
সাদুল্লাপুর ঘাটের কাছে হোটেল আছে। সাহদুল্লাপুর ঘাটে পৌঁছানোর পর ঘাটের বট গাছের নিচে বসে চা-নাস্তা করে নিতে পারেন। দল বেঁধে গেলে হোটেলের লোকদের আগেই রান্না করার কথা বলতে হবে।