আয়না২৪ ডেস্ক
ইরাকের মসুল শহরের ৮০০ বছরের পুরনো ‘আল নুরি’ মসজিদ বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিল আইএস জঙ্গিরা। ধ্বংস করেছে মসজিদ সংলগ্ন ‘আল হাদবা’ মিনার।
নুর আল–দিন মাহমুদ জেঙ্গির নির্দেশে ১১৭২ সালে মসুলে এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মাণ হয়েছিল। চতুর্দশ শতকে সেখানে গিয়েছিলেন মরক্কোর বিখ্যাত পণ্ডিত ও পর্যটক ইবনে বতুতা। প্রাচীন মসজিদ সংলগ্ন ‘আল হাবদা’ মিনারের চূড়াটি শুরু থেকেই একদিকে হেলানো ছিল। লোকমুখে সেটি ‘আল হাবদা’ বা ‘কুঁজো মিনার’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। ইরাকের ‘টাওয়ার অফ পিসা’ বলেও পরিচিত মিনারটি। মসুলের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম নিদর্শন ‘আল নুরি’ মসজিদের ভগ্ন চেহারা দেখে ২০১৪ সালের জুন মাসে মসজিদ সংরক্ষণের জন্য এগিয়ে আসে জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক বিভাগ।
২০১৪ সালের জুন মাসে আবু বকর আল–বাগদাদির নেতৃত্বে মসুল দখল করে করে আইএস। ওই বছরের ৪ জুলাই ওই মসজিদ থেকেই গোটা দুনিয়ার সামনে নিজেকে ইসলামিক খিলাফত সাম্রাজ্যের ‘খলিফা’ ঘোষণা করেছিল বাগদাদি। সেই মসজিদ আইএস কেন ধ্বংস করল, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন।
সিরিয়ার রাক্কায় রুশ বিমানবাহিনীর হামলায় বাগদাদির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে কয়েকদিন আগেই দাবি করেছে রুশ সেনাবাহিনী। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, তার সঙ্গে কি এই মসজিদ ধ্বংসের কোনও সম্পর্ক আছে? রুশ বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ যদিও বলেছেন, এমন কোনও খবর তিনি অন্তত পাননি।
তিন বছর ধরে ইরাক আর সিরিয়ায় জাঁকিয়ে বসেছে আইএস। আইএস উৎখাত করার জন্য সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। মসুলসহ ইরাকের কয়েকটি শহর দখল করেছে আইএস। মসুলের একের পর এক প্রাচীন স্থাপত্য ধ্বংস করেছে আইএস জঙ্গিরা।
মসুলের জঙ্গি আস্তানা লক্ষ্য করে বুধবার অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। সেনাদল ‘আল নুরি’ মসজিদের প্রায় ৫০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে দেখেই বিস্ফোরণ ঘটায় আইএস জঙ্গিরা। ভেঙে পড়ে গোটা মসজিদ আর সংলগ্ন মিনার।
মসজিদ আর মিনার ধ্বংসের তীব্র নিন্দা করেছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল–আবাদি। তিনি বলেন,‘আইএস নিশ্চিহ্ন হতে আর বেশি দেরি নেই। আইএস জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। মসজিদে বিস্ফোরণ জানান দিচ্ছে জঙ্গিরা পরাজিত।’
যদিও বিস্ফোরণে মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে আইএস। মার্কিন যৌথবাহিনীর বোমাবর্ষণের জেরেই মসজিদটি ধুলোয় মিশে গেছে বলে নিজেদের অনলাইন মুখপাত্র ‘আমাক’–এ দাবি করেছে আইএস।
জঙ্গিদের দাবি খারিজ করেছেন যৌথ বাহিনীর স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুলামির ইয়ারাল্লাহ্। তিনি জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী মসজিদের ভেতর ঢুকে পড়তেই বিস্ফোরণ ঘটায় আইএস জঙ্গিরা। যৌথবাহিনীর অভিযানে মসজিদ ধ্বংস হয়নি। জানিয়েছেন যৌথবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রেয়ান ডিলন। নিজেদের বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে সেনাবাহিনী।