আয়না ২৪ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয় বহুল এবং নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ২০ জানুয়ারি, শুক্রবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেনস। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটেল ওয়েস উইংগে হবে জমকালো এ শপথ অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জমকালো ওই অনুষ্ঠানের খরচ হবে ২০ কোটি টাকা (২০০ মিলিয়ন ডলার)।
৪৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের অভিষেক জমকালো আর উৎসবমুখর করার লক্ষ্যে কাজ করছে অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটি। ওয়াশিংটন এলাকার সব ধরনের হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। ক্যাপিটেল হিলের বাইরে কয়েক হাজার ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার স্থাপন করা হচ্ছে। সব অঙ্গরাজ্য থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এবং রিপাবলিকান দলের নেতারা যোগ দিচ্ছেন অভিষেক অনুষ্ঠানে। পাশাপাশি ট্রাম্প বিরোধী শিবিরও ক্যাপিটেল হিলের বাইরে বড় ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ট্রাম্পের পক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ এবং প্রতিবাদকারী ২০ লাখ মিলে ৩০ লাখ লোকের সমাবেশ সামাল দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নিরাপত্তা দল।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যয়ের ৭০ মিলিয়ন ডলার আসবে বিভিন্ন করপোরেট এবং ব্যক্তিগত অনুদান থেকে। বাকি অর্থ ব্যয় হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।
মূল শপথ অনুষ্ঠানে ব্যয় হবে মাত্র এক মিলিয়ন ডলার। সর্বমোট ২০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে অর্ধেকেই যাবে নিরাপত্তা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে।
১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেনস আরলিংটন জাতীয় কবরস্থানে যাবেন। সেখানে আমেরিকার জাতীয় বীরদের সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে অভিষেক অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এদিন ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ শিরোনামে প্রাক-অভিষেক উৎসব শুরু হবে লিংকন মেমোরিয়ালে।
উৎসব কমিটি জানিয়েছে, বহু অভিবাসীর দেশ আমেরিকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা কলাকুশলীদের নিয়ে ‘মেক আমেরিকা-গ্রেট অ্যাগেইন’ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পেনস সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণায় সমর্থনকারী সুপার প্যাক, গ্রেট আমেরিকা অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উদ্বোধনী গালা অনুষ্ঠিত হবে। রক্ষণশীল ঘরানার তারকারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ৯টায় অভিষেকের মূল পর্ব শুরু হবে। ক্যাপিটেল হিলের পশ্চিম প্রান্তে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন। এ সময় তাদের পরিবার, কংগ্রেসের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।
অনুষ্ঠানের মূল ভেন্যুতে প্রবেশের জন্য আড়াই লাখ টিকিট দেওয়া হচ্ছে। টিকিটধারীদের ভোর ৬টার আগেই নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য লাইনে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। টিকিট না পেয়ে আরও পাঁচ লাখ লোক ক্যাপিটেল হিলের পাশের ন্যাশনাল মল এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি দেখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হবে সংগীত। হলিউডের নামীদামি তারকাদের অনেককেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে দেখা যাবে না।
সকাল সাড়ে ১১টার সময় ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য দিয়ে বক্তৃতার পালা শুরু হবে। ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে নিউইয়র্কের আর্চবিশপ, ন্যাশনাল হিস্পানিক, ক্রিশ্চিয়ান লিডারশিপ, নিউ ডেসটিনি ক্রিশ্চিয়ান সেন্টার, সাইমন ওজেন্ড হল সেন্টারসহ ধর্মীয় নেতাদের নাম আসলেও এখন পর্যন্ত মুসলিম ধর্মীয় কোনো নেতার নাম আছে কি না জানা যায়নি।
শপথ নিয়েই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পেনসকে নিয়ে শোভাযাত্রা ঐতিহাসিক প্যানসেলভেনিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রায় পুলিশ, স্কাউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাদ্যবাদকেরা থাকবেন।
সাম্প্রতিক যে কোনো সময়ের চেয়ে মার্কিন সমাজ এখন বিভক্ত। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন হওয়ার পরে বিভক্তি আরও উসকে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল এবং উদারনৈতিকদের মধ্যে বিরোধ এখন আরও স্পষ্ট। বেপরোয়া কথা বলে সাড়া জাগিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়। অভিবাসী এবং মুসলমান সম্পর্কে তার বক্তব্য নিয়ে আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের গ্রুপগুলো কোনো ছাড় দিতে চায় না। এ জন্য অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রতিবাদীদের ব্যাপক উপস্থিতি জানান দিতে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটানো হচ্ছে। কেবল নারী অধিকার আন্দোলনের সংগঠকেরা দুই লাখ লোকের জন্য অনুমতি নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষের কাছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের ওয়াশিংটনে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পরিচালক ক্রিস্ট ডি গিলডার্ট বলেছেন, প্রতিবাদ করুন, শান্তি বিনষ্ট করবেন না। নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবেন না এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরে যান।
অভিষেক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা কমিটির পরিচালক বরিস এপসথিয়ান বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে দেওয়া মতো প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আইন এবং নিয়মনীতি মেনে সব প্রতিবাদ বিক্ষোভ হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।