সৌদি-ইরান যুদ্ধ কি আসন্ন?

নভেম্বর ১৮, ২০১৭
Spread the love

অনলাইন ডেস্ক

১৯৯১ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর বিশ্বব্যাপী চলা শীতল যুদ্ধের আপাত অবসান হলেও, মুসলিম বিশ্বের দুই ক্ষমতাধর দেশ সৌদি-আরব ও ইরানের মধ্যে শীতল যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। সম্প্রতি লেবানন ইস্যুতে সৌদি আরব ও ইরানের কর্তা ব্যক্তিদের হামলা-পাল্টা হামলার হুমকি আবারও শীতল যুদ্ধের বিষয়টি সামনে এনেছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য কি আবারও সংঘাতের দিকে যাচ্ছে? সৌদি-ইরান যুদ্ধ কি আসন্ন? আর এ যুদ্ধ শুরু হলে, এর মারাত্মক পরিণতি কেমন হবে তা উঠে এসেছে বিবিসির এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

যে কারণে সৌদি-ইরান যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে

ক্ষমতাধর নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা আল খোমেনি ১৯৭৯ সালে এক বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই ইরান-সৌদি আরবের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবে  বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত ইরানের স্বৈরশাসক শাহ-এর সাথে সৌদির একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্রতা ছিল। আল-খোমেনির  ধর্ম ও রাষ্ট্র চিন্তা সৌদি আরবের চেয়ে ভিন্ন ও সাংঘর্ষিক হওয়ায় তাদের মধ্যে এ দূরত্ব তৈরি হয় ।

এদিকে ইরান ও সৌদির মুসলমানরাও দুটি অংশে বিভক্ত। সৌদির মুসলমানদের অধিকাংশই সুন্নী ধর্মাবলম্বী, বিপরীতে ইরানের বেশিরভাগ মানুষ শিয়া ধর্মাবলম্বী। রাষ্ট্রীয়ভাবে সৌদি-আরব সুন্নী ধর্মাবলীদের কেবল উৎসাহিত করে না, অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতনও করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বিশ্লেষণে দেখা যায়, মুসলমানদের দুটি পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদীনা (সারা বিশ্ব থেকে মুসলমানরা হজ্জ পালন করতে আসে) সৌদি আরবের ভূখণ্ডে পড়ায়, সৌদি নিজেদেরকে স্রষ্টা প্রদত্ত মাতব্বর বলে মনে করে। তারা মনে করে, স্রষ্টা তাদেরকে মুসলিম বিশ্বে মাতব্বরি করার ক্ষমতা দিয়েছে। সবাই তাদের কর্তৃত্ব মেনে নেবে। মুসলিম বিশ্বও সৌদি আরবকে সমীহ করতো।

তবে শাহ-এর পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। উদীয়মান শক্তি ইরান ক্রমেই সৌদি আরবের একক কর্তৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে থাকে। এতে ক্রমেই মুসলিম বিশ্ব দুটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। একদিকের নিয়ন্ত্রণ পুরনো শক্তি সৌদি আরবের হাতে, অন্যদিকের বল উদীয়মান শক্তি ইরানের হাতে।

সম্প্রতি সৌদির ক্রাউন প্রিন্স সালমান মুসলিম বিশ্বে তার একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে নড়েচড়ে বসায় আবারও সামনে এসেছে সৌদি-ইরান সংঘাতের বিষয়টি। সম্প্রতি লেবাননে সব ধরণের অবরোধ আরোপ করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। একই সাথে গত ১৩ নভেম্বর দেশটিতে হামলা চালিয়ে একই পরিবারের ১০ জনসহ কমপক্ষে ৩০ জন ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যা করে সৌদি-নেতৃত্বাধীন বিমান বাহিনী।

এরআগে সৌদি প্রিন্স সালমান অভিযোগ করে বলেন, ইরান তার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিজবুল্লাহর মাধ্যমে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দিয়ে রাজধানী রিয়াদে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে সৌদি বাহিনী তাদের হামলা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছিল।

ঘটনার পরপরই ইরানে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দেন ক্রাউন প্রিন্স সালমান। তবে সরাসরি তিনি ইরানে হামলা চালাতে চান না। ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিজবুল্লাহর (যাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মনে করে যুক্তরাষ্ট্র) উপর হামলা চালিয়ে ইরানকে কোণঠাসা করতে চান সালমান। এই লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে সমর্থন দেয়। শুধু তাই নয়, বিদ্রোহীদের ঠেকাতে আসাদ বাহিনীকে ব্যাপক পরিমাণ বিধ্বংসী অস্ত্রও সরবরাহ করে ইরান। বিপরীতে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে রসদ যোগাচ্ছে সৌদি আরব। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে সেখানে অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

এদিকে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, সৌদির আশীর্বাদপুষ্ট ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট সাদ হারিরি পদত্যাগ করেন । এর কয়েকদিন পরই ইয়েমেনের উপর হামলা শুরু করে সৌদি। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে মূলত হিজবুল্লাহ দেশের বড় একটি অংশ দখল করে নেয়। হিজবুল্লাহ মনে করে, সাদ হারিরিকে আটক করে, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে সৌদি। একইসাথে তারা অভিযোগ করে, সৌদি লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এদিকে পদত্যাগের আগে সাদ হারিরি বলেন, ইরানের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তিনি বলেন, আমি ইরানকে বলতে চাই, ইরান ও তার মিত্রদের হস্তক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। 

ইরাক ইস্যুতেও সৌদি আরবের সাথে দ্বিমত রয়েছে ইরানের। ইরাকে সাদ্দাম হোসেন সরকারের পতনের পর ইরান সেখানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সম্প্রতি সৌদি আরবও সেখানে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে চাচ্ছে। এতে করে ক্রমেই দুদেশের মধ্যে শত্রুতা আরও বেড়ে যাচ্ছে ।

এদিকে লেবানন ইস্যুতে ইরানকে শায়েস্তা করার কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে ‍নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও গত মঙ্গলবার ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘকে আহ্বান জানান। অন্যদিকে হারিরির পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরেই দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ইরানকে শায়েস্তা করার পথ সুগম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের আশ্বাস ও কূটনৈতিক খেলায় অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, খুব শিগগিরই ইরান-সৌদি আরব যুদ্ধে জড়াতে যাচ্ছে।

১৯৯১ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর বিশ্বব্যাপী চলা শীতল যুদ্ধের আপাত অবসান হলেও, মুসলিম বিশ্বের দুই ক্ষমতাধর দেশ সৌদি-আরব ও ইরানের মধ্যে শীতল যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। সম্প্রতি লেবানন ইস্যুতে সৌদি আরব ও ইরানের কর্তা ব্যক্তিদের হামলা-পাল্টা হামলার হুমকি আবারও শীতল যুদ্ধের বিষয়টি সামনে এনেছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য কি আবারও সংঘাতের দিকে যাচ্ছে? সৌদি-ইরান যুদ্ধ কি আসন্ন? আর এ যুদ্ধ শুরু হলে, এর মারাত্মক পরিণতি কেমন হবে তা উঠে এসেছে বিবিসির এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

যে কারণে সৌদি-ইরান যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে

ক্ষমতাধর নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা আল খোমেনি ১৯৭৯ সালে এক বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই ইরান-সৌদি আরবের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবে  বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত ইরানের স্বৈরশাসক শাহ-এর সাথে সৌদির একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্রতা ছিল। আল-খোমেনির  ধর্ম ও রাষ্ট্র চিন্তা সৌদি আরবের চেয়ে ভিন্ন ও সাংঘর্ষিক হওয়ায় তাদের মধ্যে এ দূরত্ব তৈরি হয় ।

এদিকে ইরান ও সৌদির মুসলমানরাও দুটি অংশে বিভক্ত। সৌদির মুসলমানদের অধিকাংশই সুন্নী ধর্মাবলম্বী, বিপরীতে ইরানের বেশিরভাগ মানুষ শিয়া ধর্মাবলম্বী। রাষ্ট্রীয়ভাবে সৌদি-আরব সুন্নী ধর্মাবলীদের কেবল উৎসাহিত করে না, অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতনও করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বিশ্লেষণে দেখা যায়, মুসলমানদের দুটি পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদীনা (সারা বিশ্ব থেকে মুসলমানরা হজ্জ পালন করতে আসে) সৌদি আরবের ভূখণ্ডে পড়ায়, সৌদি নিজেদেরকে স্রষ্টা প্রদত্ত মাতব্বর বলে মনে করে। তারা মনে করে, স্রষ্টা তাদেরকে মুসলিম বিশ্বে মাতব্বরি করার ক্ষমতা দিয়েছে। সবাই তাদের কর্তৃত্ব মেনে নেবে। মুসলিম বিশ্বও সৌদি আরবকে সমীহ করতো।

তবে শাহ-এর পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। উদীয়মান শক্তি ইরান ক্রমেই সৌদি আরবের একক কর্তৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে থাকে। এতে ক্রমেই মুসলিম বিশ্ব দুটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। একদিকের নিয়ন্ত্রণ পুরনো শক্তি সৌদি আরবের হাতে, অন্যদিকের বল উদীয়মান শক্তি ইরানের হাতে।

সম্প্রতি সৌদির ক্রাউন প্রিন্স সালমান মুসলিম বিশ্বে তার একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে নড়েচড়ে বসায় আবারও সামনে এসেছে সৌদি-ইরান সংঘাতের বিষয়টি। সম্প্রতি লেবাননে সব ধরণের অবরোধ আরোপ করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। একই সাথে গত ১৩ নভেম্বর দেশটিতে হামলা চালিয়ে একই পরিবারের ১০ জনসহ কমপক্ষে ৩০ জন ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যা করে সৌদি-নেতৃত্বাধীন বিমান বাহিনী।

এরআগে সৌদি প্রিন্স সালমান অভিযোগ করে বলেন, ইরান তার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিজবুল্লাহর মাধ্যমে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দিয়ে রাজধানী রিয়াদে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে সৌদি বাহিনী তাদের হামলা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছিল।

ঘটনার পরপরই ইরানে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দেন ক্রাউন প্রিন্স সালমান। তবে সরাসরি তিনি ইরানে হামলা চালাতে চান না। ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিজবুল্লাহর (যাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মনে করে যুক্তরাষ্ট্র) উপর হামলা চালিয়ে ইরানকে কোণঠাসা করতে চান সালমান। এই লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে সমর্থন দেয়। শুধু তাই নয়, বিদ্রোহীদের ঠেকাতে আসাদ বাহিনীকে ব্যাপক পরিমাণ বিধ্বংসী অস্ত্রও সরবরাহ করে ইরান। বিপরীতে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে রসদ যোগাচ্ছে সৌদি আরব। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে সেখানে অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

এদিকে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, সৌদির আশীর্বাদপুষ্ট ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট সাদ হারিরি পদত্যাগ করেন । এর কয়েকদিন পরই ইয়েমেনের উপর হামলা শুরু করে সৌদি। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে মূলত হিজবুল্লাহ দেশের বড় একটি অংশ দখল করে নেয়। হিজবুল্লাহ মনে করে, সাদ হারিরিকে আটক করে, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে সৌদি। একইসাথে তারা অভিযোগ করে, সৌদি লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এদিকে পদত্যাগের আগে সাদ হারিরি বলেন, ইরানের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তিনি বলেন, আমি ইরানকে বলতে চাই, ইরান ও তার মিত্রদের হস্তক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। 

ইরাক ইস্যুতেও সৌদি আরবের সাথে দ্বিমত রয়েছে ইরানের। ইরাকে সাদ্দাম হোসেন সরকারের পতনের পর ইরান সেখানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সম্প্রতি সৌদি আরবও সেখানে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে চাচ্ছে। এতে করে ক্রমেই দুদেশের মধ্যে শত্রুতা আরও বেড়ে যাচ্ছে ।

এদিকে লেবানন ইস্যুতে ইরানকে শায়েস্তা করার কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে ‍নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও গত মঙ্গলবার ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘকে আহ্বান জানান। অন্যদিকে হারিরির পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরেই দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ইরানকে শায়েস্তা করার পথ সুগম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের আশ্বাস ও কূটনৈতিক খেলায় অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, খুব শিগগিরই ইরান-সৌদি আরব যুদ্ধে জড়াতে যাচ্ছে।