আয়না২৪ ডেস্ক
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার বিভক্ত রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। তবে চূড়ান্ত রায়ে তাঁকে নির্দোষ বলা হয়নি আবার দোষী সাব্যস্তও করা হয়নি। নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা কীভাবে অর্থ কাতারে পাঠিয়েছে, তা তদন্ত করতে যৌথ তদন্ত দল (জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম বা জেআইটি) গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে জেআইটির তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান।
পাকিস্তানের দৈনিক ডনের অনলাইনের খবরে জানা যায়, রায়ের পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সাংবাদিকদের জানান, পাঁচজন বিচারপতির বেঞ্চে ৩-২-এ রায় বিভক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে পানামা কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্তের জন্য যে কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন, আদালতও সেই রায় দিয়েছেন।
খাজা আসিফ আরও বলেন, ‘আমরা সব ধরনের তদন্তের জন্য প্রস্তুত। আজ আদালতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বিরোধীদের দেওয়া তথ্য-প্রমাণ যথেষ্ট নয়। আমরা সফল হয়েছি।’
পাঁচ বিচারপতি আসিফ সায়্যিদ খোসা, গুলজার আহমেদ, এজাজ আফজাল খান, আজমত সায়্যিদ ও ইজাজুল আহসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। তাঁদের মধ্যে বিচারপতি খোসা ও গুলজার নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। তাঁরা বলেছেন, নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত। বাকি তিন বিচারপতি জেআইটি গঠনের পক্ষে রায় দেন।
গত বছর পানামাভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার এক কোটির বেশি নথি ফাঁস হয়। এসব নথিতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং থেকে শুরু করে বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ বিশ্বের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নাম উঠে আসে। এই ব্যক্তিরা কীভাবে, কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে অর্থ পাচার করে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, তা বেরিয়ে আসে এসব নথিতে।
ফাঁস হওয়া নথিতে নওয়াজের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজন মরিয়ম, হাসান ও হোসেনের নাম এসেছে। নওয়াজের সন্তানেরা মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির মালিকানার অংশীদার। সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামিসহ কয়েকটি দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
নওয়াজ শরিফের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) দাবি, পাকিস্তান ও উপসাগরীয় অঞ্চলে বৈধ পথে পারিবারিক ব্যবসা থেকেই এ সম্পদ অর্জিত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘যৌথ তদন্ত দল তাদের তদন্ত শেষ না করা পর্যন্ত আমি নওয়াজ শরিফের পদত্যাগ চাই। ৬০ দিনের মধ্যে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন তবে আবার দায়িত্ব নিতে পারেন।’
‘ঐতিহাসিক’ এই রায়ের জন্য জাতিকে অভিনন্দন জানিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘পাকিস্তানের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘নওয়াজ শরিফ যাই বলুন না কেন—পাঁচ বিচারকই তা নাকচ করে দিয়েছেন। সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারক তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন।’ ইমরান খান ক্ষমতাসীন দলের কাছে জানতে চান, ‘পাঁচজন বিচারক যখন তাঁদের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন, তখন তারা রায়ে কেন আনন্দিত?’
এদিকে ইমরান খানের মতো একই দাবি জানিয়েছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিপিপির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, ‘নওয়াজ শরিফের উচিত পদত্যাগ করা।’
জারদারি বলেন, ‘তাদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ নেই। আছে শুধু আনন্দ। তারা কেন মিষ্টি বিতরণ করছে? কারণ দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারক আপনাকে (নওয়াজ) অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত বলে উল্লেখ করেছেন। তারপরও মিঠাই খাচ্ছেন? আপনি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’