সার্ক উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করল ভারত

Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী আরো সাতটি দেশকে বিনামূল্যে  যোগাযোগ উপগ্রহ উপহার দিতে  আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটা ৩ মিনিটে   ভারতের চেন্নাই থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ হলো জিস্যাট-৯ দক্ষিণ এশিয়া নামে এই উপগ্রহ। সার্ক সদস্য দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

 ‘সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট’ নামে এই উপগ্রহটি  জিও-সিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (জিএসএলভি-৯) নামের একটি রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে প্রেরণ করে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। আর এই কৃত্রিম উপগ্রহটির মাধ্যমে আগামী ১২ বছর ফ্রি যোগাযোগ সেবা পাবে দক্ষিণ এশিয়ার ৭ টি দেশ।

উপগ্রহটি   সফল উৎক্ষেপণের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে আমরা একই পরিবারের সদস্য। এই উপমহাদেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, প্রগতি ও সমগ্র মানবতার স্বার্থে আমরা এক হয়েছি। ভিডিও কনফারেন্সিং মারফত সাত দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মোদি সকলকে স্বাগত জানান।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের এই ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপকে বিরল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ‘সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট’কে মহাকাশে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি ইতিহাস গড়ে ফেলবে ভারত। এর আগে একই সঙ্গে ১০৪টি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়ে নজির গড়েছে ইসরো।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালেই ইসরোর বিজ্ঞানীদের সামনে প্রস্তাব রেখেছিলেন— প্রতিবেশী দেশগুলিরও উপকারে আসবে এমন কর্মসূচী নিক তারা। মোদীর মতে, দক্ষিণ এশিয়া থেকে দারিদ্র দূর করার মূল অস্ত্র হল শিক্ষার প্রসার। আর শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটাতে ইন্টারনেট পরিষেবাই সবচেয়ে কার্যকরী হবে বলে তিনি মনে করেন। ইন্টারনেটকে দক্ষিণ এশিয়ার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেই মহাকাশে সার্ক দেশগুলির জন্য একটি উপগ্রহ পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন মোদী। ইসরোর বিজ্ঞানীদের ওই প্রস্তাব দেওয়ার পর ২০১৪-্এর শেষের দিকে সার্কের বৈঠকেও মোদী একই প্রস্তাব দেন। সার্ক-ভুক্ত সব দেশ ভারতের প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে পাকিস্তান জানিয়ে দেয়, ভারতের পাঠানো উপগ্রহের সহায়তা তাদের দরকার নেই। কারণ, তাদের নিজস্ব মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে। 

ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ যাতে উপগ্রহটিকে ব্যবহার করতে পারে, সে কথা মাথায় রেখেই প্রথমে কাজ শুরু করেছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সালেই উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু মাঝপথে পাকিস্তান এই উপগ্রহের সুবিধা নিতে না চাওয়ায় কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। কারণ, উপগ্রহটির ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশনে আবার রদবদল ঘটাতে হয় বিজ্ঞানীদের।
 
পাকিস্তান প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করার পর উপগ্রহটির নাম বদলে দিয়েছে ভারত। একে আর সার্ক স্যাটেলাইট নামে ডাকা হচ্ছে না। এখন নয়াদিল্লী একে ‘সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট’ বলছে। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ইতিমধ্যেই এই উপগ্রহ ব্যবহার করতে চেয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আফগানিস্তানের সঙ্গেও কয়েক দিনের মধ্যেই চুক্তি হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৫ মে মহাকাশে পৌঁছনোর পর থেকে ধীরে ধীরে সার্ক দেশগুলিতে বিপ্লব নিয়ে আসবে এই উপগ্রহ, বলছে নয়াদিল্লী।
ইসরো চেয়ারম্যান এ এস কিরণ কুমার জানান, গত ২৮ ঘণ্টার কাউন্টডাউনের পর অত্যন্ত সফলভাবে এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্বার্থে এ এক দৃঢ় পদক্ষেপ।এই উপগ্রহ মারফত দক্ষিণ এশিয়ার সদস্য দেশগুলিতে মজুত প্রাকৃতিক সম্পদের হদিসও পাওয়া যাবে। সম্ভবপর হবে সঠিক ভৌগোলিক ‘ম্যাপিং’।

বাংলাদেশসহ সাত দেশকে বিনামূল্যে যোগাযোগ উপগ্রহ দিচ্ছে ভারত