আয়না ২৪ ডেস্ক
মিয়ানমারে নিরীহ রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো অব্যাহত রাখলেও দেশটির গণতন্ত্রকামী নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সুচির মৌনতা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁর এই নীরবতাকে এক রকমের নিষ্ঠুরতা বলে মনে করছেন শান্তিকামী বিশ্বের মানুষ। খবর এএফপির।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত অক্টোবরের প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতনের শুরু হয়। তখন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা মুসলিম-অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। এরপরই অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
প্রথম দিকে স্থলবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অভিযান সীমিত থাকলেও অতিসম্প্রতি তাতে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টার গানশিপ। রাখাইন রাজ্যে নিষিদ্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশও। ফলে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু জানা না গেলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন নারী ও শিশুদের ওপর গণধর্ষণ, নির্বিচারে হত্যা ও গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করছে সেনাবাহিনী।
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়
নের ইতিহাসের এটা সাম্প্রতিকতম অধ্যায়। মিয়ানমারে ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। তবে বিপুলসংখ্যক এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় অবৈধ অভিবাসী বলে বিবেচনা করে তাঁদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে থাকে।
দীর্ঘ সেনাশাসন ও পরে সেনা-সমর্থিত সরকারের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয় সু চির নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সু চি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশের নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাঁর হাতে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, কী করছেন তিনি?
কার্যত গোটা মিয়ানমারের এই নেতা বলতে গেলে এখন নীরব। গত মাসে জাপান সফরে যাওয়ার সময় অবশ্য তিনি চলতি সহিংসতার ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সে সময়ও সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন। আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের উত্তেজনাপূর্ণ রাজনীতির গতিধারায় আটকে আছেন তিনি।
মিয়ানমারে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মর্যাদাও নেই এই রোহিঙ্গাদের। দেশটির ১৯৮২ সালের এক আইনবলে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি পেতে ১৮২৩ সালের আগে থেকে সেখানে বসবাসের প্রমাণ হাজির করতে হয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সদস্যদের।
জাতিসংঘ বলছে, রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলিমরা বিশ্বের সবচেয়ে বঞ্চিত সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর একটি। আর তাদের অধিকাংশের বসবাস মিয়ানমারের দারিদ্র্যপীড়িত পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে। দেশের ভেতর চলাচল ও কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে বিধিনিষেধ।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বলছে, ২০১২ সালে ধর্মীয় সহিংসতা শুরুর পর রাখাইন থেকে পালিয়ে গেছেন ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। সাগরের দুর্গমযাত্রা উপেক্ষা করে তাঁদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা চলছে এখনো।