আয়না২৪ ডেস্ক
লন্ডনের হামলায় জনতার হাতে আটক লোকটিকে যখন অন্যরা লাথি মারছিল, তখন একজন এসে সবাইকে থামালেন। তাঁকে চিৎকার করতে দেখা যাচ্ছিল, ‘কেউ তাকে স্পর্শ কোরো না, কেউ স্পর্শ কোরো না।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লন্ডনের ওই সন্দেহভাজন হামলাকারীর প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কারণ ওই ব্যক্তির সাহস ও পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষমতা। লন্ডনের সোমবারের সন্ত্রাসী হামলা ঘটনার অহিংস নায়ক হলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। ব্রিটেনের গণমাধ্যমে তাঁকে বর্ণনা করা হচ্ছে লন্ডনের মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার বিপক্ষের বীর।
ঘটনাটা ঘটেছিল দ্রুত। একটি সাদা ভ্যান দ্রুতগতিতে উঠে যায় তারাবির নামাজ পড়ে ফিরতে থাকা মানুষজনের ওপর। এ ঘটনায় নিহত হন একজন প্রবাসী প্রবীণ বাংলাদেশি, আহত হন অন্তত ১০ জন। গত সোমবার লন্ডনের ফিন্সবাড়ি পার্ক এলাকায় তারাবির নামাজের পর মসজিদ-ফেরতা লোকদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার সময় হামলাকারী চিৎকার করে বলছিল, ‘আমি সব মুসলমানকে হত্যা করতে যাচ্ছি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলায় ব্যবহৃত গাড়িতে তিন ব্যক্তি ছিলেন। দুজন পালাতে পারলেও মসজিদের মুসল্লিদের হাতে একজন আটক হন।
হামলাকারীকে আটক করায় জড়িত ছিলেন তিনজন। তাঁদের একজন স্থানীয় এক ক্যাফের মালিক ২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, ‘ওই ইমামের কারণেই হামলাকারী লোকটি এখনো জীবিত আছে।’ মোহাম্মদ বলেন, ধরা পড়া ব্যক্তির প্রাণরক্ষায় স্থানীয় ইমামের ভূমিকা ছিল প্রশংসাজনক। তিনি রোজার মাসে সবাইকে সংযম ধারণ করার আহ্বান জানান। হামলাকারীর কোনো ক্ষতি করা থেকে তিনি ক্ষুব্ধ জনতাকে বিরত করেন। পরে পুলিশ এসে সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ওই ইমামের নাম মোহাম্মদ মাহমুদ। ফিন্সবারি পার্কের মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তা ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর কারণেই হামলার পরের পরিস্থিতি শান্ত করা গেছে এবং সম্ভাব্য আরেকটি জীবননাশের ঘটনা এড়ানো গেছে। ইমাম মাহমুদ ওই এলাকার মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের ইমাম।
ক্ষিপ্ত জনতার আক্রমণ থেকে সন্দেহভাজন হামলাকারীকে রক্ষার জন্য ওই ইমামের ‘সাহস ও দৃঢ়তা’ প্রশংসিত হচ্ছে। প্রশংসাকারীদের মধ্যে রয়েছে লন্ডনের পুলিশ বিভাগ এবং শহরটির মেয়র সাদিক খান।
ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এই নেতা বলেন, ‘আমি একে অন্যান্য হামলার মতোই অতীব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’ উল্লেখ্য, হামলাটি হয় তাঁর নির্বাচনী এলাকায়।
মুসলিম ওয়েলফেয়ার হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তা তৌফিক কাসিমি বলেন, ‘এই ফিন্সবারি পার্ক এলাকায় আমরা বহুদিন ধরে শান্তিময় ও প্রীতিময় পরিবেশ তৈরি জন্য পরিশ্রম করে আসছি এবং আমরা আমাদের সমাজের মধ্যে বিভক্তির যেকোনো চেষ্টার নিন্দা জানাই।’