আয়না ২৪ ডেস্ক
ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে এক স্কুল ছাত্র আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করার পর জানা যাচ্ছে যে সে ‘ব্লু হোয়েল’ নামের একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক গেম খেলছিল।
ওই খেলায় একের পর এক ভয়ঙ্কর কাজ করতে বলা হয় – যার শেষ পর্যায়ে আত্মহত্যার নির্দেশ দেওয়া থাকে।
এর আগে মুম্বইতে এক স্কুল ছাত্র আত্মহত্যা করার পরেও পুলিশ তার বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছিল যে সে সম্ভবত ব্লু হোয়েল গেমে অংশ নিচ্ছিল।
রাশিয়ায় উদ্ভাবিত এই গেম খেলতে গিয়ে সারা পৃথিবীতে ইতিমধ্যেই প্রায় দেড়শোজন প্রাণ হারিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই কিশোর।
তবে ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের এই ছাত্র প্রাণে বেঁচে গেছে তারই এক শিক্ষকের জন্য।
চামেলী দেবী পাব্লিক স্কুলের কর্তৃপক্ষ ইন্দোরের পুলিশকে জানিয়েছে বৃহস্পতিবার স্কুল শুরুর ঠিক আগে একটি ছাত্র পাঁচিল বেয়ে উঠতে শুরু করে।
এক শিক্ষক তাকে ধরে ফেলেন।
তারপরেই ওই ছাত্র জানায় যে সে পাঁচিল থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছিল।
ইন্দোর পশ্চিমের পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট বিবেক সিং বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ছাত্রটির সঙ্গে কথাবার্তা বলার পরে আমাদের জানিয়েছিল। ওর কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। তাই আমরা খুব বিস্তারিতভাবে ওকে প্রশ্ন করতে পারি নি। তবে ওর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে সে ব্লু হোয়েল গেমটা খেলতে শুরু করেছিল।”
কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে পুলিশ ছাত্রটির কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবে যে আর কোন্ ছাত্র এই গেম খেলছে, কারাই বা ভয়ঙ্কর কাজ শেষ করার নির্দেশ দিচ্ছে ছাত্রদের।
ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্লু হোয়েল গেমটি ২০১৩ সালে রাশিয়ায় তৈরি হয়। ফিলিপ বুদেকিন নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত এক মনোবিজ্ঞানের ছাত্র দাবি করে যে সেই এই গেমের আবিষ্কর্তা।
রাশিয়ায় অন্তত ১৬ জন কিশোর-কিশোরী এই গেমে অংশ নিয়ে আত্মহত্যা করার পরে বুদেকিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে তার দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। যেসব ছেলেমেয়ের সমাজে কোনও দামই নেই, তাদেরকেই সে আত্মহত্যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে ‘সাফ’ করতে চেয়েছিল বলে স্বীকারোক্তিতে জানায় সে।
এই গেমটি ৫০ দিন ধরে খেলতে হয়। একের পর এক ভয়ঙ্কর কাজ করার নির্দেশ আসে। একেকটি পর্যায় পেরনোর পরে আরও কঠিন ‘টাস্ক’ দেওয়া হয়।
কাজগুলির মধ্যে প্রথমে যেমন থাকে অন্ধকার ঘরে একা ভয়ের সিনেমা দেখা, তেমনই একেবারে শেষ কাজটি হল আত্মহত্যা করা।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কয়েকশো কিশোর-কিশোরী এই গেম খেলতে গিয়ে ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছে।
কেন এধরণের ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে ওঠে কিশোর কিশোরীরা?
জানতে চাওয়া হয়েছিল কলকাতার প্রখ্যাত মনোবিদ ড. জয়রঞ্জন রামের কাছে।
“ওই বয়সটাই এমন যে তখন একটা ডেয়ার-ডেভিল কিছু করে দেখানোর ইচ্ছেটা প্রবল হয়। তবে যে সব বাচ্চারা এরকম গেম বেছে নিচ্ছে, তাদের মনে হতাশা, আত্মমর্যাদার অভাব, মনোকষ্ট – এগুলো থাকেই। সেজন্যই তারা এমন একটা কিছু করে দেখাতে যায়, যাতে লোকে তাদের অকুতোভয় বলে মনে করবে,” বলছিলেন ড. রাম।
ভারতে ব্লু হোয়েল গেমের প্রথম শিকার হয় মুম্বইয়ের এক ছাত্র। কয়েক সপ্তাহ আগে আত্মহত্যা করার পরে তার বন্ধুরা পুলিশকে জানিয়েছিল যে সে ব্লু-হোয়েল গেম খেলছিল। আত্মহত্যার অন্যান্য সম্ভাবনার মধ্যেই পুলিশ ব্লু হোয়েল খেলাকেও রেখেছিল।
গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রের আরেক ছাত্র ব্লু হোয়েল পরিচালনকারীদের নির্দেশে একা একা বাসে চেপে দূরে পাড়ি দিয়েছিল। পুলিশ খবর পেয়ে বাসটি থেকে ওই ছাত্রকে খুঁজে পায়।
পর পর তিনটি ঘটনায় ব্লু হোয়েলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন রাজ্য থেকেই দাবি উঠছে গেমটিকে নিষিদ্ধ করার।
অন্যদিকে বিভিন্ন স্কুল এবং অভিভাবকদের মধ্যেও চর্চা শুরু হয়েছে যে কীভাবে নিজের সন্তানকে এরকম ভয়ঙ্কর গেমের হাত থেকে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে।
ড. জয়রঞ্জন রাম বলেন, “আমরা এতদিন বাচ্চাদের যেভাবে বাইরের খাবার, জল এসব না খেতে শেখাই, কী করা উচিত, কী করা উচিত নয় এসব শেখাই, সেভাবেই ইন্টারনেট নিয়েও ছোট থেকে শিক্ষা দিতে হবে। কোন জিনিষটা ইন্টারনেটে করা উচিত, কোনটা অনুচিত – সেগুলো ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে।