আয়না২৪ ডেস্ক :
চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের প্রথম দফায় এককভাবে কেউ এগিয়ে না থাকায় শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় গড়াতে যাচ্ছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দ্বিতীয় দফায় মুখোমুখী হতে যাচ্ছেন মধ্যপন্থী প্রার্থী ইমানুয়েল মাক্রোঁ এবং কট্টর ডানপন্থি মারি লে পেন।
ফরাসি টিভি জানিয়েছে, মাক্রোঁ পেয়েছেন ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট এবং লে পেন পেয়েছেন ২১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে, আরও দুজন প্রার্থীর মধ্যে রক্ষণশীল দলের প্রার্থী ফ্রঁসোয়া ফিয়ঁ পেয়েছেন ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং কট্টর বাম প্রার্থী জঁ লুক মেলাঁশোঁ পেয়েছেন ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। এ দুই প্রার্থীর তুলনায় লে পেন এবং মাক্রোঁ বেশি ভোট পাওয়ায় তারা ৭ মে দ্বিতীয় দফা ভোটের মুখোমুখি হচ্ছেন। সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোর ফল বলছে, লে পেন ও ইমানুয়েল মাক্রোঁর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ ভোট) ভোটে মাক্রোঁরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি। আর তা হলে ফ্রান্সের সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করবেন তিনি। জয়ী প্রার্থী আগামী ১৪ মে’র মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
গত রোববার রাতেই সমর্থকদের উদ্দেশে ইমানুয়েল মাক্রোঁ বলেছেন, আমরা এক বছরে ফরাসি রাজনৈতিক জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছি। এ সময় তিনি জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান জনগণকে। প্রাক্তন ব্যাংকার ইমানুয়েল মাক্রোঁ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ওঁলাদের দল ত্যাগ করে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল করেছেন। এর আগে তিনি কখনই নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেননি। নির্বাচনে জয়লাভ করলে ইমানুয়েল মাক্রোঁই হবেন ফ্রান্সের সবচেয়ে তরুণ প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে রাজধানী প্যারিসে পুলিশের ওপর চালানো প্রাণঘাতী হামলার পর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে গত রোববার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছে জনগণ। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় দেশজুড়ে ৬৭ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয় এবং চলে একটানা রাত ৮টা পর্যন্ত। কোনও প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীকে ৭ মে আরেক দফা প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই রান-অফ ভোটে জয়ী প্রার্থীই হবেন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। ইউরোপের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় বিশ্বজুড়ে পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য মোট ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। সামনের সারির চার প্রার্থীর মধ্যে চরম ডানপন্থি থেকে চরম বামপন্থি প্রার্থীও রয়েছেন। জনমত জরিপগুলোর ফলাফলে এগিয়ে থাকা চার প্রার্থীর মধ্যে কট্টর-ডানপন্থি দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এফএন) প্রার্থী মারি লে পেন এবং তার সঙ্গে ‘এগিয়ে চল’ নামের এক আন্দোলনের নেতা উদার মধ্যপন্থি ইমানুয়েল মাক্রোঁর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই। আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে এই প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হননি। সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের জনপ্রিয়তা তলানিতে নেমে যাওয়াই এর কারণ।
এদিকে, বেশ কিছু কারণে ফ্রান্সের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, এর আগে কখনও দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এত অনিশ্চয়তা দেখা যায়নি। দ্বিতীয় কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ভবিষ্যৎ এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে। লে পেনের মতো ইইউ-বিরোধী ও জোটের একক মুদ্রা ইউরো-বিরোধী নেত্রী ক্ষমতায় এলে ইইউ’র ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতার মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইমানুয়েল মাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জোরালো প্রবক্তা। তিনি জার্মানির সমর্থন নিয়ে ইউরোপে সামাজিক সুরক্ষার কাঠামো আরও জোরদার করতে চান। এই দুই বিপরীতমুখী প্রার্থীর একজনের জয় ইইউতে ফ্রান্সের সদস্যপদকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে পারে। খবর এএফপি, রয়টার্স অবলম্বনে।