আয়না২৪ ডেস্ক
রাম রহিম ইনসানের কথিত পালিত কন্যা হানিপ্রীত গ্রেপ্তার হওয়ার পর মুখ খুলছেন না। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কেবল হানি বলছেন ‘আমি কিছু জানি না!’ হানিপ্রীত ইনসানের পেট থেকে কথা বের করতে রীতিমতো নাজেহাল হরিয়ানা পুলিশ।
বুধবার পাঁচকুলা আদালত হানিপ্রীতকে ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর পর থেকেই জেরা শুরু করে পুলিশ। কিন্তু কোনও প্রশ্নেরই জবাব দিচ্ছেন না হানিপ্রীত। ২৫ আগস্ট পাঁচকুলার বিশেষ সিবিআই আদালত গুরমিত রাম রহিম সিং ইনসানকে ধর্ষক সাব্যস্ত করার পর থেকেই ফেরারী ছিলেন তাঁর পাতানো মেয়ে হানিপ্রীত।
গ্রেপ্তারের পর জানিয়েছেন, কিছুদিন ভাটিন্ডায় ডেরা সচ্চা সওদার এক ভক্ত সুখদীপ কৌরের বাড়ি ছিলেন। সেই সুখদীপকে আটক করে সাঙ্গরুরের ভবানীগড় থানায় হানিপ্রীতের মুখোমুখি বসিয়ে বুধবার থেকে জেরা শুরু করেছে পুলিশ। ৩০টি প্রশ্নের জবাব জানতে চায় পুলিশ।
প্রথম প্রশ্ন, রায় ঘোষণার পর একটি সাঙ্কেতিক শব্দ ছড়িয়ে দাঙ্গা বাধানো হয়েছিল। সেটি কী? জবাব এড়িয়ে দাঙ্গার দায় বহিরাগতদের ওপর চাপান গুরমিতের শিষ্যা। যদিও পুলিশের কাছে খবর, হানিপ্রীতের হাত থেকে ঝোলানো একটি লাল ব্যাগ ছিল সঙ্কেত। হানিপ্রীতের দাবি, সব রটনা। ওই ব্যাগে তাঁর পোশাক ছিল। সুনারিয়া জেল থেকে বেরিয়েই ডেরায় গেলেন কেন? জবাব এসেছে, সেখানে কিছু কাজ ছিল। পাঁচকুলা দাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী কে? ডেরা কমিটির ভূমিকা কী ছিল? েএসব প্রশ্নের জবাব এগিয়ে হানি কেবল বলছেন আমি ‘জানি না’।
নিরাপদ থাকতেই ৩৮ দিন কখনও দিল্লি, কখনও হরিয়ানা, কখনও বা পাঞ্জাব, রাজস্থানের নানা জায়গায় ঘুরেছেন বলে জানিয়েছেন। নিরুদ্দেশ থাকাকালীন কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তার জবাব দেননি। নিজের মাহাত্ম্য প্রচারে কম করে পাঁচটি ছবি করেছিলেন রাম রহিম। সব কটিতেই কথিত ‘মেয়ে’ হানিপ্রীতকে নায়িকা করেন। কারা সেই ছবিতে টাকা খাটিয়েছেন? হানিপ্রীতের উত্তর ‘জানি না!’
ধর্ম সংগঠন ডেরা এত ফুলেফেঁপে উঠল কী করে? এর উত্তরেও হানিপ্রীত বলেছেন, ‘জানি না!’ রাম রহিম গ্রেপ্তারের পর প্রকাশ্যে এসেছে ডেরার একটি গুহা থাকার কথা। সেখানে শিষ্যাদের ডেকে যৌন হেনস্থা করা হত। সেই নিয়ে জেরা করতে হানিপ্রীতের দাবি, এ–ও গুজব! ওই ধরনের কোনও গুহা আদৌ নেই! রাম রহিম নির্দোষ— এই কথাও বারবার বলেছেন হানিপ্রীত। তাঁর সঙ্গে গুরু রাম রহিমের সম্পর্ক বাবা–মেয়ের, যা অযথা কলঙ্কিত করা হচ্ছে। জোর দিয়ে বলেছেন এ কথা। ডেরার কুখ্যাত ‘কুরবানি গ্যাং’–এর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। ডেরায় অস্ত্রশস্ত্র মজুত থাকত, সে কথাও। নিরুদ্দেশ থাকাকালে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন? আন্তর্জাতিক সিম কার্ড ব্যবহার করতেন? পুরনো ফোন, সিম কার্ড কোথায়? গুরমিতের সঙ্গে সব সময় অস্ত্র থাকত কেন? কোন কোন রাজনীতিবিদ, অনাবাসী গুরমিতের কনভয়ে থাকতেন? গ্রেপ্তারের আগে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কী করে যোগাযোগ করলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দেননি হানিপ্রীত। গত ৩৮ দিন সবচেয়ে বেশি সময়ে থেকেছিলেন ভাটিন্ডায়। কংগ্রেসের কোনও নেতা সাহায্য করেছিল কি? এর সঠিক উত্তর এড়িয়ে হানিপ্রীত বলেন, ডেরার অনেক ভক্তই ভাটিন্ডায় থাকেন। তিনিও ছিলেন। হানিপ্রীতকে কথা বলাতে নার্কো পরীক্ষার কথা ভাবছেন তদন্তকারীরা। এদিকে, ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের প্রথম দিন একা একাই কেটেছে হানিপ্রীতের। ডেরার কোনও ‘প্রেমী’ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। মনমরা আছেন হানিপ্রীত। ঝলমলেভাবও উধাও এখানে তাঁর।