আয়না২৪ ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ‘গোয়েন্দা গেম’ বেশ জমজমাট। প্রশ্ন উঠেছে এই খেলায় জিতবেন কে- বারাক ওবামা, ভ্লাদিমির পুতিন নাকি ডনাল্ড ট্রাম্প! যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রাশিয়ার ৩৫ কূটনীতিককে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নতুন অবরোধ দিয়েছেন। এরপর প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন পুতিন ও ট্রাম্প। কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পুতিন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি মার্কিন কূটনীতিকদের বহিষ্কার করবেন না। তিনি অপেক্ষা করবেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ার জন্য। ওদিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অবরোধের জবাবে প্রেসিডেন্ট ওবামা, তার পরিবার, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প ও মার্কিন জনগণকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পুতিন। এ বিষয়ে এক টুইট করেছেন তিনি। ট্রাম্প যখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তখন স্পষ্ট বোঝা গেছে ওবামার নতুন অবরোধ তার পছন্দ হয়নি। এরপরই পুতিন টুইট করে লিখেছেন, আমি রাশিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন কূটনীতিকের ছেলেমেয়েদের ক্রেমলিনে নতুন বছর ও বড়দিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাই। তার এ কূটনৈতিক চালে কে বিজয়ী হচ্ছেন বা হবেন তা বলা কঠিন। সিএনএন লিখেছে, ২০০৯ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে দেখা। কিন্তু দু’দফায় ক্ষমতায় থাকার পর জানুয়ারিতে তাকে নতুন এক শীতল যুদ্ধের ছায়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন ও মস্কো আরো একবার কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন ও সরাসরি গুপ্তচরবৃত্তির নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল এমনটা দাবি করেন ডেমোক্রেটরা, এফবিআই, সিআইএসহ কিছু গোয়েন্দা সংস্থা। ধরে নেয়া হয় এটা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ক্রেমলিনের অগণতান্তিক হস্তক্ষেপ। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ওবামা বৃহস্পতিবার নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার কূটনীতিক ও সম্পদের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপ করেন। কিন্তু তাতে মুখে অন্য চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রশাসন হবে অধিক বন্ধুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পুতিনের হস্তক্ষেপের একের পর এক তথ্য আসার প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এরই অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস রাশিয়ার ৩৫ জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের নির্দেশ দেয়। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে সময় বেঁধে দেয়া হয় ৭২ ঘণ্টা। একই সঙ্গে নিউ ইয়র্ক ও মেরিল্যান্ডে তাদের কর্মকর্তারা যেসব ভবনে বসবাস করতেন তা বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন ওবামা। জবাবে পুতিন কি বললেন? তিনি ওয়াশিংটনের এই অবরোধের পাল্টা কোনো অবরোধ বা পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। তবে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ কিন্তু ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয় নীতিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। রাশিয়ায় মার্কিন কূটনীতিকদের বহিষ্কারের সুপারিশ করেন তিনি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিন এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নিলেন তাতে অনেকেই বিস্মিত। তিনি নতুন এক কৌশল অবলম্বন করলেন। ওবামা প্রশাসন অবরোধ ঘোষণা দেয়ার আগের দিন তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। কিন্তু অবরোধ দেয়ার পর তিনি নিজেকে মহানুভব হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাই তিনি ক্রেমলিনে বড়দিন ও নতুন বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মার্কিন কূটনীতিকদের সন্তানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিষয়টি ছেড়ে দিলেন ওবামা পরবর্তীতে ক্ষমতার উত্তরাধিকারী ডনাল্ড ট্রাম্পের ওপর। ট্রাম্পও বিষয়টিতে যে মত দিলেন তা পুতিনের পক্ষেই যায়। তাহলে এ খেলায় জিতলো কে- ওবামা, পুতিন নাকি ট্রাম্প! লন্ডনভিত্তিক থিংকট্রাংক চ্যাথাম হাউস-এর রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের প্রধান জেমস নিক্সি বলেন, এ এক স্মার্ট খেলা। রাশিয়া মনে করছে তারা অপমানিত হয়েছে। তাদের অপরাধ প্রকাশ হয়ে পড়েছে এবং তার জন্য তারা শাস্তি পেয়েছে। তবে জবাব দেয়ার জন্য পুতিন কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করার ধৈর্য্য রাখেন। এক্ষেত্রে যদি ট্রাম্প গেম না খেলেন তাহলে আমরা দেখতে পাবো পুরনো ধরনের শত্রুতাপূর্ণ এক সম্পর্ক। নিক্সি বলেন, পুতিন এখন অপেক্ষা করছেন। তিনি দেখছেন ট্রাম্প কোন্ পক্ষে যান। তিনি কি রাশিয়ার পক্ষে যান না অন্যদিকে। তবে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে কি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে শুক্রবার তিনি রাশিয়ায় মার্কিন কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেয়ায় পুতিনের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে চমৎকারভাবে বিলম্ব করেছেন (ভ্লাদিমির পুতিন)। আমি সব সময়ই জানি তিনি (পুতিন) খুবই স্মার্ট। তবে কি এটা নতুন শীতল যুদ্ধের সূচনা! দু’দেশের হুমকি, পাল্টা হুমকির মধ্যে শীতল যুদ্ধের গন্ধ স্পষ্ট। নিক্সি বলেন, রাশিয়া যে পদক্ষেপ নিয়েছে এটা তার ভবিষ্যতের জন্য। এটা অতীত থেকে ধার করে আনা নয়। বিশ্বকে শাসন করতে নতুন কিছু ভূমিকা চায় মস্কো। অর্থাৎ বিশ্বে মোড়লদের মতো তারা তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়। সিএনএনের মস্কোর সাবেক ব্যুরো চিফ ও রাশিয়া বিশ্লেষক জিল ডগার্টি বলেছেন, পুতিন যে অবস্থান নিয়েছেন সেটাকে দেখা যেতে পারে ওবামা প্রশাসনের জন্য প্রচণ্ড অবমাননাকর হিসেবে। এটা বিস্ময়কর এক কৌশল। এটাকে বলে ক্লাসিক পুতিন! তিনি এমন সব বিষয়ে ‘মাস্টার’ যা অনাকাঙ্ক্ষিত। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে অভিযোগ এনেছে তা আসলে কতটুকু শক্তিশালী? এমন প্রশ্নের বিশ্লেষণে বলা যায়, উত্তরটা নির্ভর করবে আপনি কাকে জিজ্ঞেস করছেন তার ওপর। নির্বাচনের সময়ে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি ও হিলারি ক্লিনটন প্রচারণা শিবিরের বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সরকার সমর্থিত হ্যাকাররা অভিযান চালায়। এ কথা সামনে আসার পর ডনাল্ড ট্রাম্প সরকারের তথ্য উপাত্ত চাইছেন। তিনি এমনও বলেছেন, এমন হ্যাক চীনারাও করতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার কয়েক মাস ধরে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে মস্কোর দিকে। অক্টোবরে কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন যে, এই হ্যাকের পেছনে রাশিয়া দায়ী এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত। এখন ট্রাম্প বলছেন, তিনি এ বিষয়টিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন। তাদের কাছ থেকে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানবেন। যদি দেখতে পান সত্যি রাশিয়া এই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত, ‘স্মার্ট’ ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি এ কাজ করিয়েছেন তাহলে তার প্রতিক্রিয়া কি হবে? ভবিষ্যতই বলে দেবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এখন কেন এ অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নিলো হোয়াইট হাউস? বলা যেতে পারে, এ মাসে সিআইএ হ্যাকিং সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে। তারা মার্কিন সিনেটের শীর্ষ একদল সিনেটরকে গোপনে এ বিষয়টি অবহিত করে। তারা পরিষ্কার করে বলে যে, রাশিয়া হ্যাকিংয়ে জড়িত। হিলারি ক্লিনটনের ওপর প্রতিশোধ নিতে পুতিনই এ কাজ ঘটিয়েছেন। মিডিয়ার কল্যাণে সেই বক্তব্য বাইরে চলে আসে। এরপরই ওবামা ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। তবে ট্রাম্পের ইনকামিং প্রেস সেক্রেটারি সিন স্পাইসার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সিএনএনকে বলেছেন, যদি তারা এতটাই নিশ্চিত হয় তাহলে তারা কেনো রেকর্ড ধরে এগোয়নি এবং কিছু বলেনি। আমি এটা বুঝতে পারি না। এর কোনো অর্থ হয় না। তবে ওবামার নতুন অবরোধ দেয়ার খবরে ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ২০শে জানুয়ারি ক্ষমতায় এসে তিনি শিথিল করতে পারেন তা। যদি ট্রাম্প একতরফাভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তাতে রিপাবলিকান দলে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে।