আয়না২৪ ডেস্ক
পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকার অংশের মানুষ যেন গুপ্তধনের ওপর বসে আছে। লাখো রুবি এই অঞ্চলের মাটির নিচে রয়েছে, যার বাজার দর অর্ধ শত কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। কিন্তু সেগুলো তুলতে সেকেলে উপকরণ এবং বিনিয়োগ না থাকায় মহামূল্যবান এই গুপ্তধন মাটির নিচেই রেখে দিতে হচ্ছে।
হুমা রিজভি এই অঞ্চলের মূল্যবান পাথর ব্যবসায়ীদের একজন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে যে উন্নত মানের রুবি পাওয়া যায়, ঠিক তেমন উন্নত রুবিই পাকিস্তানি কাশ্মীরের মাটির নিচে রয়েছে। তবে অনুন্নত উত্তোলনপ্রক্রিয়া এবং অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের অভাবের কারণে সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলটি পেছনে রয়ে যাচ্ছে।
কাশ্মীর উপত্যকার এই অংশে একটি মাত্র খনি রয়েছে, আর রয়েছে একটি মাত্র অনুসন্ধানস্থল। এখানে সম্ভাব্য রত্নের খোঁজে খনিশ্রমিকেরা খননকাজ চালাচ্ছেন। কিন্তু প্রাদেশিক নির্বাহী কমিটি অনুমোদিত একটি ভূতাত্ত্বিক জরিপ থেকে জানা গেছে, এই অঞ্চলের মাটির নিচে ৪০ হাজার কেজির বেশি রুবি লুকিয়ে রয়েছে। কপার, সোনা ও রুপার মতো অন্য মূল্যবান পদার্থও রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কেজির মতো।
পাকিস্তানি কাশ্মীরের খনি ও শিল্পোন্নয়ন কোম্পানির (একেএমআইডিসি) মহাপরিচালক শহীদ আইয়ুব বলেন, এই অঞ্চলে যে পরিমাণ মূল্যবান পাথর রয়েছে, তা উত্তোলন করা গেলে পুরো এলাকার ভাগ্যই বদলে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এসব পাথর উত্তোলনের জন্য যে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা দরকার বা নতুন খনি খনন করা দরকার, তার ব্যয় নির্বাহের মতো পর্যাপ্ত অর্থ নেই। ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রায়ই গোলাগুলির ঘটনা ঘটায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সেখানে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
মূল্যবান রুবি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
রুবির নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছেন। সেই বহুকাল থেকেই রুবিকে মূল্যবান পাথরের তালিকায় রাখা হয়েছে। আলিফ লায়লার কল্পকাহিনী থেকে শুরু করে টম এন্ড জেরি কার্টুন সবখানেই দেখা মিলেছে এই পাথরের।
অনেকে শখ করে রুবি পাথরের আংটি পরিধান করে থাকেন। কেউ কেউ আবার গয়নাও গড়েন মুল্যবান এই পাথর দিয়ে।
মূল্যবান এই পাথর নিয়ে জেনে নেওয়া যাক অজানা কিছু তথ্য-
- রুবি চার স্বীকৃত মূল্যবান পাথরের একটি। অন্য তিন মুল্যবান পাথর হচ্ছে পান্না, নীলকান্তমণি, এবং হীরা।
- বাইবেলে ভিন্ন চার বার রুবি পাথরের কথা বলা হয়েছে। মুল্যবান এই পাথরকে সৌন্দর্য ও জ্ঞানের সূচক হিসেবে ধরা হয়েছে।
- প্রাচীন লোককাহিনীর মতে, রুবি মানুষকে শত্রুদের সাথে শান্তি আনতে সাহায্য করে।
- থাইল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি রুবিখনি রয়েছে। এছাড়াও মাদাগাস্কার, শ্রীলঙ্কা ও ভারত ও এদিক থেকে এগিয়ে রয়েছে।
- রুবি শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে ল্যাটিন শব্দ রুবিনস থেকে। যার অর্থ লাল।
- পান্নার ন্যায় প্রায় সকল রুবিতে কিছু না কিছু অসম্পুর্নতা থাকে। এই অসম্পূর্ণতা দিয়েই রুবির কৃত্রিমতা বিচার করা হয়ে থাকে।
- বেশিরভাগ আধুনিক রুবির কিন্তু চিকিৎসা হয়। ঠিক তাই, রুবিকে বিভন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ফাটল ভরাট, নির্দিষ্ট আকার প্রদানের কাজগুলো করা হয়।
- খুব ভালো মানের রুবির দাম হীরের চেয়েও অনেক বেশি। মুল্যবান রুবির প্রতি ক্যারেট প্রায় ২২৫ ডলারে বিক্রি হয়। সাধারন রুবির প্রতি ক্যারেট ১২৫ ডলারে বিক্রি হয়।
- ১৮৫০ সাল থেকেই গয়নায় নকল রুবির প্রচলন শুরু হয়। কাচের টুকরো তে লাল রঙের কাজ করায় তা যে কোন দামী রুবির চেয়েও দামী মনে হত।
- বেশ কিছু মুল্যবান ও দামী রুবির মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল, Rosser Reeves Star Ruby, the Edwardes Ruby এবং the De Long Star Ruby.
- ২০১১ সালে, এলিজাবেথ টেলর এবং van Cleef & Arpels এর তৈরী ৮,২৪ ক্যারেট রুবি রিং প্রায় ক্যারেট প্রতি মূল্য $ ৫০০,০০০ হিসেবে, মোট $ ৪.২ মিলিয়নে নিলামে বিক্রি করা হয়।
- সবচেয়ে ব্যায়বহুল রুবির নাম ছিলো, ‘হোপ রুবি’। ৩২.০৮ ক্যারেট ওজনের এই রুবি পাথর বিক্রি হয়েছিলো, ৬.৭৪ মিলিয়ন ডলারে।
সত্যি কি অদ্ভুত সবকিছু। আমরা কেবল, রুপা, স্বর্ণ আর হীরা নিয়েই ভাবি। অথচ এর চেয়েও কত দামী পাথর এই রুবি। বলা হয়ে থাকে, রুবি পরিধান করলে মানুষের দেহের রক্ত সতেজ থাকে এবং ভাগ্য পরিবর্তন হয়।