আয়না ২৪ ডেস্ক
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করল পাকিস্তান। যে সব ক্ষেপণাস্ত্র ভারত বানাচ্ছে তাতে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ইসলামাবাদ অভিযোগ জানাল। সপ্তাহ খানেক আগেই ভারত ৪০০০ কিলোমিটার পাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৪ এর চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে।
সেই উৎক্ষেপণের ঠিক আগের সপ্তাহেই ভারতের সর্বোচ্চ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫-এর চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণও হয়েছে। এত শক্তিশালী দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের পরমাণু অস্ত্রাগারে ঠাঁই পাওয়ায় চিন ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানও আর উদ্বেগ গোপন রাখতে পারল না।
পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধে যেমন এনএসজি রয়েছে, তেমনই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রসার রোধেও আন্তর্জাতিক সংস্থা এমটিসিআর বা মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম রয়েছে। ৩৫টি দেশকে নিয়ে গঠিত এই সংগঠনই ক্ষেপণাস্ত্রের আন্তর্জাতিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
এই এমটিসিআর-এর একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে পাকিস্তান সফরে রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে পাক বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের যে বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকেই দিল্লির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ জানানো হয়েছে। ভারত একাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দিচ্ছে বলে ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে।
পাক সংবাদমাধ্যমেই এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারত যে ধরনের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করছে, তাতে অস্থিরতা বাড়বে বলে ইসলামাবাদ এমটিসিআর প্রতিনিধিদের জানিয়েছে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে ‘স্থিতিশীলতা ধ্বংসকারী’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে পাকিস্তান।
ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানও বানিয়েছে, এখনও বানাচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি তারা বন্ধ করে দিয়েছে, এমন নয়। তা সত্ত্বেও ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা পাকিস্তান বলছে কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র বানালেও, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির সঙ্গে সে সবের তুলনাই হয় না। ভারতের হাতে অগ্নি-৫-এর মতো ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল চলে এসেছে।
পাকিস্তানের জন্য ইন্টারকন্টিনেন্টাল মিসাইল এখনও বহু দূরের গন্তব্য। তার আগের ধাপ অর্থাৎ ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ মিসাইলও তারা বানাতে পারেনি। এখনও পাকিস্তান মিডিয়াম রেঞ্জ মিসাইলের যুগেই পড়ে রয়েছে। ভারত শুধু সুদীর্ঘ পাল্লার মিসাইল বানিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমও তৈরি করে ফেলেছে। অর্থাৎ প্রতিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই শেষ করে দিতে সক্ষম যে ক্ষেপণাস্ত্র, তাও ভারত বানিয়ে ফেলেছে। ভারতের এই দুই অস্ত্র নিয়েই পাকিস্তান আপত্তি জানিয়েছে।
এমটিসিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে পাক বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা ভারতের ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের বিরুদ্ধেই মূলত মুখ খুলেছেন। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে এবং শক্তির ভারসাম্য ধ্বংস করছে বলে পাক বিদেশ মন্ত্রক এমটিসিআরকে জানিয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে এমটিসিআর-এ পাকিস্তান যে অভিযোগ জানিয়েছে, তাতে শুধু পাকিস্তানের স্বার্থ রয়েছে এমন নয়, চিনের স্বার্থও এতে জড়িত। চিনই পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। সম্প্রতি ভারত যে দু’টি সুদীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সেরে ফেলেছে, সেই দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েই চিনের উদ্বেগ রয়েছে।
চিন একাধিকবার ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সমালোচনায় মুখও খুলেছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি, ভারত নিজের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করেনি। এ বার তাই এমটিসিআর-এ অভিযোগ জানিয়ে ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা। তবে এমটিসিআর-এ ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে খুব লাভ হবে না বলেও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। কারণ ভারত নিজেও এখন ওই সংগঠনের সদস্য। চিন বহু চেষ্টা করেও এখনও এমটিসিআর-এর সদস্য পদ পায়নি।