আয়না২৪
বিশ্ব বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আর নেই। আজ বুধবার তিনি মারা গেছেন। খ্যাতিমান পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন স্টিফেন হকিং। তার পরিবারের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। স্টিফেন হকিং পৃথিবীর সেরা মহাকাশবিজ্ঞানীদের একজন, যাঁর লেখা ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের একটা। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর ও আপেক্ষিকতা নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত ছিলেন ব্রিটিশ এই পদার্থবিদ। এর জন্য অমর হয়ে থাকবেন সবার মাঝে।
স্টিফেন হকিংয়ের পুরো নাম স্টিভেন উইলিয়াম হকিং। তার জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি। বিশিষ্ট ইংরেজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র পরিচিত ব্যক্তিত্ব তিনি। তাকে বিশ্বের সমকালীন তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়াও তিনি কেমব্রিজের গনভিলি এবং কেয়াস কলেজের ফেলো হিসাবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে ভীষণরকম অচল ছিলেন। ১৯৬৩ সালে তিনি মোটর নিউরন ডিজিজ নামে এক রোগে আক্রান্ত হন। তখন ডাক্তাররা বলেছিলেন যে, তিনি হয়ত আর দুই বছর বাঁচবেন। ওই রোগের ফলে স্টিফেন হকিং এখন ও হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতেন এবং কম্পিউটারের সাহায্যে কথা বল্তেন।
হকিংয়ের তিন সন্তান লুসি, রবার্ট এবং টিম বলেছেন, “আমরা দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় বাবা আজ মারা গেছেন। তিনি একজন বড় বিজ্ঞানীই ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ, যার কাজ বহু বছর বেঁচে থাকবে।” তার সন্তানরা নিজেদের একাকীত্ব বজায় রাখতে সবার সাহায্য কামনা করেন। যারা সারাজীবন হকিংয়ের পাশে ছিলেন ও তাকে সমর্থন করেছেন, তাদের সবাইকে তারা ধন্যবাদ দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘তার সাহস এবং প্রতিভার দৃঢ়তা গোটা বিশ্বের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। আমরা চিরদিন তার শূন্যতা অনুভব করব।’
অক্সফোর্ডে ১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ এই বিজ্ঞানী কৃষ্ণ গহ্বর এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
হকিংকে বিশ্বের অন্যতম সেরা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী বিবেচনা করা হয়। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক ছিলেন। কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনও একসময় এই পদে ছিলেন। ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর হকিং অবসরে যান। এর পর তিনি ক্যামব্রিজের গনভিলি এবং কেয়াস কলেজের ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি একসময় বলেছেন, যাদের আপনি ভালোবাসেন তাদের আশ্রয় কেন্দ্র না হলে মহাবিশ্বটা বড় কিছু নয়।
হকিং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক (স্যার আইজ্যাক নিউটনও একসময় এই পদে ছিলেন। ২০০৯ সালে ওই পদ থেকে অবসর নেন তিনি।
হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। মা ইসাবেল হকিং ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন, হকিং বড় হয়ে চিকিত্সক হোক। ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞান আর গণিতে। এরপরও মহাবিশ্বের অজানা বিষয়গুলো নিয়ে সব সময় উত্সুক ছিলেন তিনি। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিওরি’র প্রবক্তা বলা হয় স্টিফেন হকিংকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক পদ থেকে ২০০৯ সালে অবসর নেন। রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিকাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন তিনিবিজ্ঞানে হকিংয়ের সহজাত আগ্রহ ছিল। হকিংয়ের বাবার ইচ্ছে ছিল হকিং যেন তার মতো ডাক্তার হয়। কিন্তু হকিং গণিত পড়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু যেহেতু সেখানে গণিতের কোর্স পড়ানো হতো না, সেজন্য হকিং পদার্থবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করেন। সে সময় তার আগ্রহের বিষয় ছিল তাপগতিবিদ্যা, আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা।
১৯৮৮ সালে ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইটি বের হওয়ার পর বিখ্যাত হন স্টিফেন হকিং। বইটি এক কোটি কপিরও বেশি বিক্রি হয়।
প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ান্স পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার, উলফ পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক, হিউ পদক, আলবার্ট আইনস্টাইন পদকসহ এক ডজনেরও বেশি ডিগ্রি লাভ করেন হকিং।
তিনি রয়েল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো। এবং পন্টিফিকাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে নিয়ে একটি মুভি তৈরি হয়, ‘নাম থিওরি অব এভরিথিং’।