আয়না ২৪ ডেস্ক
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে (ডব্লিউইএফ) যোগ দিতে আসা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। তবে হোয়াইট হাউজে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে তাইওয়ানের কোনো প্রতিনিধিকে দেখতে চায় না চীন।
সুইজারল্যান্ডে মার্কিন বিদায়ী প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে এক বৈঠকে জিনপিং বলেন, ‘দেশ দু’টির জনগণ ও বিশ্ববাসী চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আশা করে।’ এক বিবৃতিতে জিনপিং বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৩৮ বছরে দেশ দু’টির সম্পর্ক ভালো-মন্দ মিলিয়েই চলেছে। তবে তা সামনে এগিয়ে গেছে।’
ওবামা প্রশাসনের প্রশংসা করে জিনপিং বলেন, এ প্রশাসন একটি ‘সঠিক’ উন্নয়ন সম্পর্ক চালিয়ে গেছে চীনের সাথে। যার ফলে চীনা ও মার্কিন জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং জিয়েচি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘ইতিবাচকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমঝোতার সম্পর্ক’ গড়ে তুলতে আগ্রহী তার দেশ।
মঙ্গলবার ডব্লিউইএফের উদ্বোধনী ভাষণে জিনপিং ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনি পছন্দ করুন আর নাই করুন, বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি বৃহৎ সাগরের মতো। চাইলেও এ থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।যাওয়ার জন্য পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে জিতবে না।’
এদিকে হোয়াইট হাউজে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে তাইওয়ানের কোনো প্রতিনিধিকে দেখতে চায় না চীন। গতকাল চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সুস্পষ্টভাবে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে তারা।
ব্রিফিংয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে হস্তপেমূলক কর্মকাণ্ড কিংবা দুই দেশের সম্পর্ককে তিগ্রস্তের প্রচেষ্টার জন্য তাইওয়ানকে দায়ী করেছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চানিং। তিনি বলেছেন, তাইওয়ানের প্রতিনিধিদের যেকোনো অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর বিরোধী চীন।
হুয়া চানিং বলেন, আমরা আবারো সংশ্লিষ্ট পগুলোর প্রতি এ ব্যাপারে আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। যুক্তরাষ্ট্র যেন তাইওয়ানের কর্তৃপকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেকে কোনো প্রতিনিধিদল পাঠানোর সুযোগ না দেয়। যুক্তরাষ্ট্র যেন তাইওয়ানের সাথে অফিসিয়ালি কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখে।
তিনি বলেন, ‘চীনের অবস্থান এরই মধ্যে যথার্থ ও নির্ভুলভাবে মার্কিন প্রশাসন ও ট্রাম্পের টিমকে জানানো হয়েছে।’ এর আগে নির্বাচিত হওয়ার পর রীতি ভেঙে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সাথে ফোনে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় এক চীন নীতি পুনর্বিবেচনার কথাও বলেন ট্রাম্প। এ নিয়ে তখন কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় চীন।
চলতি সপ্তাহে তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে তাদের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। দলটির নেতৃত্ব দেবেন তাইওয়ানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং মতাসীন দলের সাবেক নেতা ইয়ু শাই কুন। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলে থাকবেন তাইওয়ানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং দেশটির কয়েকজন আইনপ্রণেতা। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের দফতরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রাম্পের অভিষেকে যাওয়া প্রতিনিধিদলের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের আলাদা করে বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।
উল্লেখ্য, আগামীকাল মতা গ্রহণ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও চীনে মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই বলে আসছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে ট্রাম্প শিবিরের সাথে চীনা কর্তৃপরে সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও নির্বাচিত হওয়ার পর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সাথে ট্রাম্পের সরাসরি কথা বলাকে ভালোভাবে নেয়নি চীন। এই ঘটনাকে ‘এক চীন’ নীতিকে অগ্রাহ্য করা বলেই মনে করে বেইজিং। অপর দিকে, ট্রাম্প ‘এক চীন’ নীতি নিয়ে আলোচনা করার আহ্বান জানান।