‘চুল চোর’ আতঙ্কে নারীরা

আগস্ট ৩, ২০১৭
Spread the love
আয়না২৪ ডেস্ক
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হরিয়ানা ও রাজস্থানে অন্তত ৫০ জন নারীকে   অচেতন করে তাদের মাথার  চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। আকষ্মিক ঘটতে থাকা এই বিষয়ে  পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও এই রহস্যের কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।
 
আর এতে  ‘চুল চোর’  নিয়ে দুই রাজ্যের নারীদের মধ্যে  আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হরিয়ানার ৫৩ বছর বয়সী সুনিতা দেবী বলেন, হঠাৎ একদিন তীব্র আলোর ঝলকানি আমাকে অচেতন করে দেয়। এক ঘন্টা পর জেগে দেখি আমার চুল কেটে নেওয়া হয়েছে।
 
গুরগাঁও জেলার ভিমগড় খেরির এই গৃহিনী শুক্রবারের ওই হামলার ‘মানসিক আঘাত’ ভুলতে পারছেন না। তিনি না পারছেন ঘুমাতে, কোনো কিছুতে মনোযোগও দিতে পারছেন না। তিনি অভিযোগ করেছেন, চুল কেটে নেওয়া বয়স্ক পুরুষ চোরের পরনে ছিল উজ্জ্বল রংয়ের কাপড়।
 
তারা যে গলিতে থাকেন সেখানে আরও প্রায় বিশটির মতো ঘর আছে। রাত নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রত্যেকটি বাড়িতে লোক গমগম করে বলে জানান প্রতিবেশীরা, রাতের খাবারের পর সবাই কথা বলে বা বিশ্রাম করে।  ‘শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু প্রতিবেশীদের কেউই সুনিতা দেবীর বাসায় কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেখেনি” বলেন মুনেশ দেবী। ফলে, রহস্য আরো ঘনীভূত হয়।
 
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। পরদিন একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সুনিতা দেবীর বাসার কয়েক গজ দূরে থাকেন গৃহকর্মী আশা দেবী; তিনিও রাতের আঁধারে তাঁর চুল হারান। কিন্তু এবারের হামলাকারী পুরুষ নন, একজন নারী। আশা দেবীর শ্বশুর জানান, হামলার পরদিনই ছেলের বউসহ বাড়ির সব নারীকে উত্তর প্রদেশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসেন তিনি।
 
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চুল কেটে নিয়ে যাওয়া এই ‘ভুতুড়ে নাপিত’ প্রথম দেখা যায় রাজস্থানে, জুলাই মাসে। এরপর থেকে হরিয়ানা এমনকি রাজধানী দিল্লিতেও এই ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ‘চুল চোর’ কে নিয়ে নানা ধরনের গল্প চালু করে দিয়েছেন অনেকে। কারো মতে, সংঘবদ্ধ কোনো চক্র এমন হামলার সঙ্গে জড়িত। আবার কারও মতে, তান্ত্রিক বা ডাইনিরা বেছে বেছে নারীদের চুল কাটছেন। কারও বিশ্বাস, এসব ঘটনায় জড়িয়ে আছে ‘অতিপ্রাকৃত শক্তি’।
 
অনেকে আবার বলছেন, নারীরা গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজেরাই নিজেদের চুল কাটছেন। যুক্তিবিদ সানাল এদামারুকুর মতে এটি হচ্ছে ‘গণ-হিস্টিরিয়া’র চমৎকার উদাহরণ। তবে যে যাই বলুক না কেন রাজস্থানের একের পর এক গ্রামের নারীরা চুল চুরি নিয়ে বেশ আতঙ্কেই আছেন।
 
গুরগাঁও পুলিশের মুখপাত্র রাভিন্দ্র কুমার জানিয়েছেন, তারা এসব ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো সব অদ্ভুত ঘটনা। ঘটনাস্থলে কোনো আলামত পাইনি, হামলার শিকারদের মেডিকেল রিপোর্টেও কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি; অন্য কেউ হামলাকারীকে দেখেওনি।’ বিভিন্ন জেলার পুলিশ সম্মিলিতভাবে এসব ঘটনা নিয়ে কাজ করছে বলে জানান মি: রাভিন্দ্র। জনসাধারণকে এ বিষয়ক গুজবে কান না দিতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সূত্র-বিবিসি