আয়না ২৪ ডেস্ক
কথাগুলো সে অর্থে নতুন নয়। যিনি বলেছেন, তাঁর মুখে অপ্রত্যাশিতও নয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধাচারণ করতে তিনি যে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মঞ্চ বেছে নেবেন, তেমনটা ভাবতে পারেননি কেউই।
এ বারের গোল্ডেন গ্লোবে সারা জীবনের কাজের জন্য সম্মানিত হয়েছেন হলিউডের পোড় খাওয়া অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। পুরস্কার নিতে গিয়ে তিনি নিজের কথা বললেন কম। তাঁর ক্ষুরধার বক্তৃতায় আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠলেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। কখনও বিভাজনের রাজনীতি, কখনও অন্যকে খাটো করার মানসিকতা— মেরিল তাঁর বক্তৃতায় বিঁধলেন ট্রাম্পের এমন নানা নেতিবাচক দিক। প্রাক্ নির্বাচন পর্বেও ট্রাম্পকে নিয়ে বিস্তর সমালোচনা শোনা গিয়েছে মেরিলের মুখে। বস্তুত তিনি যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের কট্টর সমর্থক, তা নিয়ে কোনও রাখঢাকও ছিল না। তাঁর হয়ে প্রচারও করেছেন খোলাখুলি।
গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট-এর নাম এক বারও উল্লেখ না করে মেরিল বুঝিয়েছেন, ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থান থেকে তিনি এক চুল সরেননি। ট্রাম্পও অবশ্য মেরিলের মন্তব্য চুপ করে শোনেননি। এ দিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বলেন, ‘‘হলিউডে এই অভিনেত্রীকে নিয়ে বড্ড বেশি মাতামাতি হয়। উনি তার যোগ্য নন।’’
হলিউডের কথা দিয়েই এ দিন শুরু করেছিলেন মেরিল। তিন বারের অস্কারজয়ী ৬৭ বছরের অভিনেত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমরা কারা, হলিউড কী? অন্য জায়গা থেকে আসা কিছু লোকজন জমা হয় এখানে।’’ হলিউডের বৈচিত্র্য বোঝাতে বলে চলেন মেরিল, ‘‘অ্যামি অ্যাডামস জন্মেছিলেন ইতালির ভিসেঞ্জায়। নাতালি পোর্টম্যানের জন্ম জেরুজালেমে। ওঁদের জন্মের শংসাপত্র কোথায়? দেব পটেল জন্মেছে কেনিয়ায়, বড় হয়েছে লন্ডনে আর এখানে তাসমানিয়ায় বড় হওয়া ভারতীয়ের ভূমিকায় অভিনয় করছে।’’ এই উদাহরণ দেওয়ার পরে ট্রাম্পের উদ্দেশে তাঁর সংযোজন, ‘‘বাইরের লোক আর বিদেশিদের নিয়ে এগিয়ে চলেছে হলিউড। যদি আমাদের বের করে দেওয়া হয়, আপনারা ফুটবল আর মার্শাল আর্ট ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না!’’
বর্ষীয়ান অভিনেত্রী জানান, এ বছরে অনেকের অভিনয়ই তাঁর চোখ টেনেছে। কিন্তু এক জনের ‘পারফরম্যান্স’-এ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে ফের তাঁর সূক্ষ্ম খোঁচায় বিদ্ধ ট্রাম্প। মেরিল বলেছেন, ‘‘এ বছর একটি ‘পারফরম্যান্স’ দেখে আমি স্তব্ধ। সেটা ভাল বলে নয়। তার মধ্যে ভাল বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু সেটা খুব কার্যকরী ছিল। নির্দিষ্ট দর্শকরা এতে দাঁত বের করে হেসেছেন। দেশের সব চেয়ে সম্মানজনক আসনে যিনি বসতে চলেছেন, তিনি এক জন প্রতিবন্ধী সাংবাদিককে ভেঙাচ্ছেন। ক্ষমতা, প্রতিপত্তি সব কিছুতেই যিনি ওই সাংবাদিকের থেকে কয়েকশো কদম এগিয়ে। এটা আমার মাথা থেকে এখনও বেরিয়ে যায়নি কারণ এটা কোনও ফিল্মে হয়নি। অসম্মান করার এই প্রবৃত্তি যখন কোনও ক্ষমতাশালী জননেতার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, তা ছুঁয়ে যায় সাধারণ মানুষের জীবনকেও। এতে বাকিরাও একই কাজ করার ক্ষেত্রে পার পেয়ে যায়। অসম্মানই জন্ম দেয় অসম্মানের, হিংসা থেকেই হিংসা জন্মায়।’’
কিন্তু এমন রাজনৈতিক বিতর্ক কেন গোল্ডেন গ্লোবের মঞ্চে তুলে আনলেন অভিজ্ঞ অভিনেত্রী? এ নিয়ে প্রভূত সমালোচনা শুরু হয়েছে মেরিল স্ট্রিপের বিরুদ্ধে। হলিউডের একটা বড় অংশই রয়েছে তাঁর পাশে। ভোটের লড়াইয়েও সেই অংশের সমর্থন পাননি ট্রাম্প। তাতে অবশ্য বেপরোয়া ট্রাম্পকে থামানো যায়নি। মেরিলের বক্তব্য শোনার পরেই টুইটারে আসেন তিনি, ‘‘আমাকে চেনেন না, অথচ কাল রাতে গোল্ডেন গ্লোবে যা নয় তাই বললেন।’’ কয়েক মিনিট পরেই তাঁর দ্বিতীয় টুইট— ‘‘হিলারির চামচা। হেরো কোথাকার!’’
যে প্রতিবন্ধী সাংবাদিক সার্জ এফ কোভালেস্কি প্রসঙ্গে তাঁকে আক্রমণ মেরিলের, সে প্রসঙ্গে ট্রাম্পের জবাব, ‘‘একশো বার বলছি, কোনও প্রতিবন্ধী রিপোর্টারকে ভেঙাইনি। কখনওই সেটা করব না। ওই সাংবাদিকই আমাকে খারাপ প্রতিপন্ন করতে ১৬ বছরের একটা পুরনো প্রতিবেদন পাল্টে ফেললেন। অসৎ সংবাদমাধ্যমের আর একটি উদাহরণ!’’ মেরিল যে বরাবরই হিলারির সমর্থক তা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘ভুলে যাবেন না কনভেনশনে হিলারিকে প্রথম আনেন মেরিলই।’’
গত বছর অস্কারের মঞ্চ থেকে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন জানিয়েছিল হলিউড। হিলারি ক্লিন্টনের হারের পরেও হলিউডের স্বর যে পাল্টায়নি, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেল মেরিলের কথায় এবং তাঁর কথা শুনে হলভরা হাততালিতে। আগামী মাসে অস্কার কী বার্তা দেয়, তার দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।