ফের ঠোক্কর আদালতে। এ বার খারিজ হয়ে গেল আর্জিও।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞায় দেশ জুড়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সিয়াটলের ফেডেরাল কোর্ট। যে রায়কে ‘হাস্যকর’ বলে অবিলম্বে স্থগিতাদেশ রদের আর্জি জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। গতকাল রাতে সেখানেও কার্যত মুখ পুড়ল ট্রাম্প প্রশাসনের। সান ফ্রান্সিসকোর ফেডেরাল আপিল আদালতে নাকচ হয়ে গেল আর্জি। যার অর্থ, আমেরিকার দরজা আপাতত খোলাই ওই সাত দেশের নাগরিক ও শরণার্থীদের কাছে।
ফেডেরাল আদালত জানিয়েছিল, সরকার ও বিরোধী পক্ষ তাদের যুক্তি পুরোপুরি তুলে ধরার আগে পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ জারি খাকবে। আপিল আদালতেরও এখন তাই বক্তব্য। মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে আজ পর্যন্ত যুক্তি পেশের সময় দিয়েছে আদালত। এই নিষেধাজ্ঞা যে অসাংবিধানিক নয়, যুক্তি দিয়ে সেটাই প্রতিষ্ঠা করতে হবে কোর্টে।
সে যা-ই হোক। এখন তো স্বস্তি! জন্মসূত্রে ইরাকি ফুয়াদ শরিফ অন্তত তেমনটাই মনে করছেন। আমেরিকায় ঢুকতে চেয়ে স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে সেই কবে থেকেই তিনি তল্পিতল্পা গুটিয়ে রেখেছেন। পাক্কা দু’বছর চক্কর কেটে সবে হাতে পেয়েছেন মার্কিন ভিসা। গত সপ্তাহে মিশরের কায়রো বিমানবন্দর থেকে আমেরিকাগামী বিমানে প্রায় উঠেও প়ড়েছিলেন সপরিবার। কিন্তু ট্রাম্প-নির্দেশিকার জেরে শেষ মুহূর্তে তাঁদের ফিরতে হয় ‘নিষিদ্ধ’ ইরাকি আস্তানায়।আজ ভোরেই তাঁরা উঠে পড়েছেন নিউ ইয়র্কগামী বিমানে। এ বার তুরস্ক থেকে।
ট্রাম্পের আর্জি খারিজের খবরে খুশিতে ডগমগ তরুণী রানা সামাশাও। ইনিও ইরাকি। থাকেন লেবাননের উদ্বাস্তু শিবিরে। কিন্তু তাঁর মা ও দুই বোনের আস্তানা আমেরিকার ডেট্রয়টে। এ মাসের শুরুতেই সেখানে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। হয়নি। এখন তিনিও রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তাদের মুখ চেয়ে। ইতিবাচক নির্দেশ এলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেও আমেরিকার বিমানে উঠতে তৈরি সামাশা। বেইরুট বিমানবন্দর সূত্রের খবর, আজ সকালেই তিনটি সিরীয় পরিবার আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেই সিরিয়া, যাকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ‘নিষিদ্ধ’ করে বসে আছেন ট্রাম্প! আদালতে একের পর এক ধাক্কা। আর ঘরে-বাইরে বাড়তে থাকা বিক্ষোভে ট্রাম্প তাই গোড়াতেই বেকায়দায়। গ্রাফ নামছে জনপ্রিয়তারও। যদিও মার্কিন স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা ‘যথার্থ আর বৈধ’ বলেই গলা ফাটাচ্ছেন ট্রাম্প।
আপিল আদালতের রায়ের পর ফের বাতিল ভিসা নিতে শুরু করেছে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক। হোয়াইট হাউসই জানিয়েছে, বৈধ কাগজপত্র থাকলে আমেরিকার দরজা থেকে এখন কাউকেই ফেরানো যাবে না। তা তিনি যে দেশেরই নাগরিক হোন না কেন! হোমল্যান্ড সিকিওরিটিকেও এই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে। ‘নিষিদ্ধ’ সাত দেশ থেকে যাত্রী আনতে রাজি হয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার ফান্স, এতিহাদ এয়ারওয়েজ, লুফৎহানসা।
সিয়াটলের ফেডেরাল কোর্টে মামলাকারী ওয়াশিংটন ও মিনেসোটা স্টেট প্রেসিডেন্টের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল। যার জবাবে সরকার যুক্তি দিয়েছিল— আমেরিকায় কারা ঢুকবেন, সেটা কেবল প্রেসিডেন্টই ঠিক করতে পারেন। প্রতিবাদ আর পাল্টা যুক্তির লড়াই শেষে এখন আদালত কী ঠিক করে— সে দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।