• Home  / 
  • বিশ্ব  / 

কাতারের সঙ্গে সৌদিসহ পাঁচ দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের কারন

Spread the love
আয়না২৪ ডেস্ক
কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডসহ অন্যান্য জঙ্গি দলগুলোকে সমর্থন ও সহযোগিতা দেয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে  উত্তেজনা সৃষ্টি করছে- এমন  অভিযোগে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন।
 
তবে এই সম্পর্ক ছিন্নকারী দেশগুলোর অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় দোহা বলেছে, ‘ভিত্তি নেই’ এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ঐ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে এবং এটি ‘অন্যায্য’ একটি সিদ্ধান্ত।
নজিরবিহীন এই সিদ্ধান্তকে দেখা হচ্ছে গাল্ফ অঞ্চলের দেশগুলো, যারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তাদের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কচ্ছেদ হিসেবে। এর ফলে গাল্ফভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সাম্প্রতিক উত্তেজনার একটি প্রভাব রয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া প্রথমে শুরু করে বাহরাইন। পরে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্পর্কচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। গাল্ফভুক্ত দেশগুলো তাদের দেশে অবস্থানরত কাতারের নাগরিকদের দেশ ত্যাগের জন্য দুই সপ্তাহ সময় বেধে দিয়েছে।
সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা হঠাৎ এলেও, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের টানাপড়েনের শুরু কয়েক বছর আগে, যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে গত ২৫শে মে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আল জাজিরা নেটওয়ার্কসহ কাতারের সংবাদ বিষয়ক সকল ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয় এই চারটি দেশ। বিতর্কিত ঐ ঘটনায় দেখা যায়, কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে আমির সৌদি আরবের সমালোচনা করেছেন। ঐ প্রতিবেদনে আমিরকে উদ্ধৃত করে আরো বলা হয়, তিনি ইরানের প্রতি আরব দেশগুলোর বিরোধিতার সমালোচনা করছেন। যদিও পরে কাতার তখন দাবী করে পুরো ঘটনাটি ভুয়া। কারণ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা হ্যাক হয়েছিল এবং ঐ খবর সাইটটি হ্যাক হবার পর প্রকাশিত হয়েছিল বলেও দাবী করে কাতার।
তবে, মূলত দুটি বিষয় কাজ করেছে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে। এক, জঙ্গি সংগঠনসমূহের সঙ্গে কাতারের সংযোগ, আর দুই আঞ্চলিক রাজনীতিতে সৌদি আরবের প্রতিপক্ষ ইরানের ভূমিকা। আইএস গোষ্ঠীকে ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটে কাতার যোগ দিয়েছে ঠিকই। তবে, সেই সঙ্গে ইরাকের শিয়া নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন যে কাতার আইএসকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। যদিও এ অভিযোগও অস্বীকার করে আসছে কাতার।
আবার সিরিয়ার কট্টর ইসলামী গ্রুপগুলোকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সহায়তার অভিযোগও রয়েছে দেশটির বিরুদ্ধে। আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে কাতারের সংযোগের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া সুন্নি প্রধান দেশ সৌদি আরব বরাবরই বাহরাইনের শিয়া জঙ্গিদের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে। দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিয়াদ সফরের সময় মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে দায়ী করেন। খবর বিবিসির।
কাতারের প্রতিক্রিয়া
কাতার তার সঙ্গে সৌদি আরব, মিশরসহ ছয়টি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, দোহার ওপর রাজনৈতিক ‘অভিভাবকত্ব’¡ ফলাতে দেশগুলো এই ‘অন্যায্য’ আচরণ করছে। 
 
সোমবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এইসব পদক্ষেপ অন্যায্য। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে এইসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ সোমবার সবার আগে বাহরাইন কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা করে। এরপর সৌদি আরবও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নর ঘোষণা দেয়। আর সৌদি আরবের পরে আরব আমিরাত, মিশর, ইয়েমেন ও লিবিয়া তাদের অনুসরণ করে। 
 
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘উদ্দেশ্য পরিষ্কার। কাতারের ওপর অভিভাবকত্ব ফলাতে এইসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পদক্ষেপ নিয়ে এইসব দেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কাতারের সার্বভৌমত্ত্বকে লংঘন করেছে। খবর এএফপির।
এরআগে  সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারের সঙ্গে যাবতীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ। আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়ার অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরবসহ মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। 
 
 গার্ডিয়ান ও বিবিসির খবরে বলা হচ্ছে, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী প্রথম দেশ সৌদি আরব। তাদের অনুসরণ করেই সোমবার মিশর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়। এ প্রেক্ষিতে ওইসব দেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মুসলিম ব্রাদারহুডসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করে আসছে কাতার।
 
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানাচ্ছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও কাতারের সঙ্গে ভূমি, সমুদ্রসীমা ও আকাশ সীমার সব যোগাযোগ ছিন্ন করেছে সৌদি আরব। সৌদি কর্মকর্তাদের করাতে তারা আরো জানিয়েছে, ‘সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ থেকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই কাজ করতে যাচ্ছে তারা।’এছাড়া মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘মিসরের সব বন্দরে কাতারের যানবাহন ও আকাশযান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।’ বাহরাইনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বলছে, ‘সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন ও অর্থ সহায়তার অভিযোগে এ সম্পর্কের ছেদ ঘটানো হয়েছে। কাতারের কূটনীতিকদের দেশ ত্যাগে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।’