আয়না ২৪ ডেস্ক
আর দুই সপ্তাহও হাতে নেই। দুই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়েই বিদায় নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দুই মেয়াদে টানা আট বছর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার সময় শেষ। এই সময়ের মধ্যে তিনি এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা তাকে স্মরণীয় করে রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১০ জানুয়ারি বিদায়ী ভাষণ দেবেন ওবামা। সেখানে নিজের অবস্থান তুলে ধরবেন তিনি। সেটি তার নিজস্ব মূল্যায়ন। তবে সামগ্রিকভাবে যেসব কারণে ওবামার নামটি ইতিহাসে চর্চিত হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ এখানে তুলে ধরা হলো।
ইতিহাস সৃষ্টিকারী কৃষ্ণাঙ্গ: ইতিহাসবিদরা ওবামা সম্পর্কে শুধু যদি একটি বিষয়ে লিখতে চান, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বেছে নেবেন ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট’ ওবামাকে। এটিই ইতিহাস। যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার ১৪৩ বছর পর ২০০৯ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। ভবিষ্যতের আমেরিকায় তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার ও অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হবেন।
বড় ব্যর্থতার পর বিশাল অর্জন: ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর অর্থনৈতিক ধসের মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় কৃচ্ছ্রতা সাধনের চেষ্টা করলেও সরকারি ব্যয় বেড়ে যায় ৮৩১ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করে যখন তিনি বিদায় নিতে যাচ্ছেন, তখনও অর্থনৈতিক স্বস্তি ফেরেনি যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ধারাবাহিক ৭৫ মাস যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বেড়েছে-এটি তার বিশাল অর্জন।
লাদেন বধ: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে করা ছিল ওবামা প্রশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন তিনি। ২০১১ সালের ২ মে ওবামা আমেরিকার জনগণকে জানান, বিন লাদেন বধে সফল হয়েছে তার দেশ। টুইন টাওয়ারে হামলার প্রধান অভিযুক্ত বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন কমান্ডোরা হত্যা করে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী বৈশ্বিক অভিযানে এটি ওবামার অন্যতম সাফল্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তবে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে জঙ্গিবাদী তৎপরতা এখনো বহাল। এক্ষেত্রে ওবামার প্রতি সমালোচনাও রয়েছে।
ওবামার কান্না: প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন বেশ কয়েকবার জনসমক্ষে কেঁদেছেন ওবামা। তার এ কান্নার পেছনে ছিল শোক ও ব্যর্থতার মিশ্রণ। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করতে ব্যর্থ হওয়া এবং নিষ্পাপ শিশুরা সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কেঁদেছেন তিনি। তার আক্ষেপ, ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে সমঝোতা করাতে ব্যর্থ হননি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা তার বিরোধিতা করেছেন।
ইরানের সঙ্গে চুক্তি: ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়। কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০১৬ সালে ইরানের সঙ্গে চুক্তি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের শক্তিধর পাঁচটি দেশের। এতে ওবামার সদিচ্ছা কাজ করেছে। বিশ্ববাণিজ্য ও কূটনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক করতে ইরানের সঙ্গে চুক্তি বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ইরান তাদের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখবে-এই শর্তে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো ১০ বছর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পদক্ষেপ হলেও অন্যান্য দেশ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে আসছে।
সিরিয়া ইস্যু: একুশ শতকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ইরাক যুদ্ধ। সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে ওবামা লিবিয়ায় হামলা চালান। এটি ছিল আরেকটি ভুল। কিন্তু সিরিয়ায় হামলা না করে যুদ্ধসংক্রান্ত তৃতীয় ভুলের হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাঁচিয়েছেন ওবামা। রাশিয়া ও ইরান আধিপত্য বিস্তার করলেও সিরিয়ায় কোনো ধরনের সামরিক অভিযানে যাননি ওবামা। তবে তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো ওবামার সেই অবস্থান থেকে সরে আসবেন- এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়ন হয় না যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে। এমনটিই চলে আসছিল দীর্ঘদিন। তবে ওবামা ক্ষমতায় এসে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন এবং অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেন। সবশেষ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ট্রাম্পের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন চীনের তৈরি এক ধরনের গুজব।
ওবামাকেয়ার: আমেরিকার সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা প্রবর্তনের উদ্দেশে ২০১০ সালে স্বাস্থ্যনীতি ঘোষণা করেন ওবামা। কিন্তু রিপাবলিকানরা তার এ নীতিকে ‘সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার’ উল্লেখ করে কংগ্রেসে পাস করাতে দেননি। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই নীতি বাঁচিয়ে রাখেন ওবামা। তবে ট্রাম্প বলেছেন, ক্ষমতার আসার প্রথম সপ্তাহেই তিনি ওবামাকেয়ার বাতিল করবেন।
কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক: ওবামার প্রচেষ্টায় কিউবার সঙ্গে আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ১৯৫৭ সালের পর প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবা সফরে যান ওবামা। তার সফরের সূত্র ধরে হাভানায় মার্কিন দূতাবাস ও ওয়াশিংটনে কিউবান দূতাবাসা খোলা হয়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কও শুরু হয়েছে। কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে লাতিন আমেরিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক স্থাপনের দরজা খুলেছেন ওবামা।