আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির মতো নতুন আরেক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। এবার এই কেলেঙ্কারির তালিকায় উঠে এসেছে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধনীদের নাম। নতুন এই কেলেঙ্কারির নাম দেওয়া হয়েছে প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারি। এতে ১৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডকুমেন্ট ফাঁস হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের নেতৃত্বে বিশ্বের ৯৫টি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এই অনুসন্ধানে জড়িত ছিল। গতকাল রবিবার কেলেংকারির তথ্য ফাঁস করা হয়। দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমসহ বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কর ফাঁকি দিতে রানি এলিজাবেথ ১০ মিলিয়ন পাউন্ড একটি অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার এল রস জুনিয়র রাশিয়ার একটি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করেছেন। ওই কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কেলেংকারিতে কয়েকশ’ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে যার মধ্যে যুক্তরাজ্যেরই সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন, শেল কোম্পানি গঠন করে রাজনীতিক, সেলিব্রেটিসহ অনেকে কর ফাঁকি দিয়েছেন। তালিকায় ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাশক্রফটের নাম আছে।
রানি এলিজাবেথ একটি অফশোর কোম্পানিতে ব্যক্তিগতভাবে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। ডুচি অব ল্যানচেস্টার নামের প্রতিষ্ঠানটি কেম্যান আইল্যান্ডস অ্যান্ড বারমুডাতে বিনিয়োগ করেছে। ডুচি অব ল্যানচেস্টার রানির ব্যক্তিগত ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ ও আয়ের বিষয়টি দেখাশোনা করে। তবে এই বিনিয়োগ অবৈধ নয় বলে জানা গেছে। রানি করও ফাঁকি দেননি। তবে প্রশ্ন উঠেছে রানি অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারেন কিনা।
দেখা গেছে, মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের জামাতার একটি শিপিং কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। কোম্পানিটি তেল এবং গ্যাস পরিবহনের কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্র কোম্পানিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এর মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আরেক মন্ত্রীর যোগসাজসের তথ্য পাওয়া গেল।
বিবিসির অনুষ্ঠান প্যানোরামা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম (আইসিআইজে), এবং জার্মান সংবাদপত্র জুয়েডয়েচে জাইটু এর করা এক তদন্তের অংশ হিসেবে এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি দলিল পত্র পাওয়া গেছে।
এই তদন্তে আরো জানা গেছে যে রানি এলিজাবেথের এক কোটি পাউন্ড পরিমাণ ব্যক্তিগত অর্থ কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ এবং বারমুদার ‘অফশোর ফান্ডে’ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই অর্থের খানিকটা এমন একটি ব্যবসায় গিয়েছে যাকে – নিম্ন আয়ের গ্রহীতাদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করার কারণে – ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ব্রাইটহাউস হচ্ছে এমন একটি ‘হায়ার-পারচেজ’ কোম্পানি যা অতিরিক্ত দাম রাখার কারণে এবং ৯০ শতাংশেরও বেশি সুদহারের কারণে সমালোচিত হয়েছিল। এর ফলে তাদের পণ্য সরাসরি কিনলে যে দাম হতো তার দ্বিগুণেরও বেশি ব্যয় সাপেক্ষ হতে পারে। এই বিনিয়োগ করা হয়েছিল ১০ বছর আগে, এবং তখন তার মূল্য ছিল পাঁচ লক্ষ ডলারের সামান্য কম। রাজকীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের সাথে রানি সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।
তথ্য ফাঁস হয়েছে যেভাবে
বিবিসি জানায়, বেশিরভাগ তথ্য এসেছে অ্যাপেলবাই নামের একটি কোম্পানি থেকে। বারমুডা ভিত্তিক এই আইনি প্রতিষ্ঠানটি অফশোর কোম্পানির তথ্য জানায়। এছাড়া ক্যারিবিয়ান জুরিসডিকশনের কাছ থেকেও তথ্য এসেছে।
প্যারাডাইস পেপার্স কী
গার্ডিয়ান জানায়, প্যারাডাইস পেপার্স একটি বিশেষ অনুসন্ধানী কাজ। দ্য গার্ডিয়ান এবং বিশ্বের ৯৫টি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এই তথ্য সন্ধানে কাজ করেছে। দুটি অফশোর সার্ভিস প্রোভাইডারস এবং ১৯টি ট্যাক্স হ্যাভেনস রেজিস্ট্রির তথ্য পাওয়া গেছে। কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বানিয়ে কিভাবে কর ফাঁকি দেওয়া যায় তাই এই অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।