যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন মানুষকে কীভাবে আমেরিকান জনগণ পছন্দ করতে পারে! ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কি অভিবাসনবিরোধী, বর্ণবিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষী? তাই তারা বিদেশিবিরোধী, মুসলিমবিরোধী, সংখ্যালঘুবিরোধী, রেসিস্ট, মেসোজিনিস্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করছে? মিডিয়া এটাকে হিলারি এবং ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিচরিত্রের প্রতিযোগিতা হিসেবে চিত্রিত করে চলছে। ব্যাপারটা কি আসলে তাই?
ধরুন, আপনি ডাক্তারের কাছে গেলেন, ডাক্তার আপনাকে অনেক ক্ষণ দেখেশুনে পরীক্ষা করে বললেন, “আপনার গা গরম, কাশি হয়েছে, নাক দিয়েও পানি গড়াচ্ছে।” আপনি নিশ্চয়ই মনে মনে ভাববেন, এগুলো তো অসুখের সিম্পটম, এগুলো জানার জন্য কি আর আপনার কাছে আসার দরকার ছিল? আমেরিকার নির্বাচনের ব্যাপারটাও অনেকটা সে রকম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘মেইনস্ট্রিম’ মিডিয়া আজ যা বলেছে তাতে অসুখের মূল কারণের বদলে শুধু তার লক্ষণগুলোকেই তুলে ধরা হচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়, এটাতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। আন্তর্জাতিকভাবেই মিডিয়া এ কাজটায় অত্যন্ত পারদর্শী, তারা প্রয়োজনমতো সবসময়ই এটা করে থাকে।
আজকের পুঁজিবাদী নিও-লিবারেল অর্থনীতির অন্যতম কর্ণধার এবং রাজনৈতিক নেতা মার্গারেট থ্যাচার বলেছিলেন–
“অর্থনীতি হচ্ছে একটা প্রণালী বা কার্যপদ্ধতি (method), কিন্তু আমাদের অভীষ্ট হচ্ছে মানুষের ভাবনা (Soul) বদলে দেওয়া।”
এ লক্ষ্যেই কাজ করে যায় আজকের মিডিয়া। কে যেন বলেছিলেন, মিডিয়া দর্শকদের কিভাবে ভাবতে হবে সেটা থেকে সরিয়ে কী কী ভাবতে হবে সেটা শেখানোর কাজ করে। কারণ, তাতে লাভটা হয় এই যে, জনগণ মূল কাঠামোগত কারণ থেকে সরে এসে বাইরের সব ফালতু কারণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
মিডিয়ার এই ভাষাকে প্লেটোর ভাষায় ‘রেটোরিক’ বলে অভিহিত করলে বোধ হয় দোষ হবে না। এগুলো জনগণকে ব্যস্ত রাখে আসল সমস্যা ভুলে সারা ক্ষণ শুধু এসব গল্পেই মেতে থাকতে, জল্পনা-কল্পনা করতে। এ জন্যই প্লেটো সেই কত আগে বলে গেছেন–
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্মথকরা যখন মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে চরমভাবে অবিশ্বাস এবং ঘৃণা করে বলে, তখন মনে হয়, যাক, আর কিছু বুঝুক না-বুঝুক, ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও এই জিনিসটা হয়তো তারা ঠিক বুঝতে পেরেছে।
আজকে আমেরিকার ‘ট্রাম্প-রোগ’-এর মূল কারণগুলো কী কী?
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এবারের আমেরিকার নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডারস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান ও জনপ্রিয়তার পেছনে অনেকগুলো কারণই প্রায় এক ছিল। পার্থক্যটা হচ্ছে, একই ধরনের অসন্তোষের ভিত্তিতে বিপরীতমনা দুই জনগোষ্ঠী দুই ধরনের পরিণতি আশা করে, দুই ধরনের ভবিষ্যতের আশায় এ দুজনকে সমর্থন দিয়েছিল।
আমেরিকাসহ সমগ্র বিশ্বেই বেশ কিছু কাঠামোগত সংকট গভীর হতে শুরু করেছে যেগুলোর সমাধানের কোনো সহজ উপায় দেখা যাচ্ছে না। আমেরিকায় এবং সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজকের বিশ্বায়িত পৃথিবীতে সম্পদের চরম অসম বণ্টন এখন ব্যাপক মাত্রার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুঁজিবাদী বিশ্বে আয় এবং সম্পদের অসম বণ্টনের ব্যাপার কোনো অবাক করা ব্যাপার নয়, বরং এটাই পুঁজিবাদের মূল ভিত্তি। পুঁজিবাদীরা সব কালেই অসাম্য-বৈষম্য নিয়ে কথা বলে এসেছেন।
তবে আজকের বিশ্ব-অর্থনীতিতে বা বলা যায় ‘বিশ্বায়িত অর্থনীতিতে’ এই অসাম্যটা এতটাই ‘বাড়াবাড়ি’ রকমের রূপ ধারণ করেছে যে বড় বড় নীতিনির্ধারকদের ঘুম হারাম হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে একটা ভয়াবহ অরাজকতা বা বিদ্রোহের ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। ট্রাম্পের উত্থান বা ব্রেক্সিটে ভোটের জয়ের মধ্যে তারা এর গন্ধই পাচ্ছেন। এটা শুধু দুয়েকজন বাম অর্থনীতিবিদ বা বুদ্ধিজীবী বলছেন তা কিন্তু নয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিছুদিন আগে বলেছেন–
“অর্থনৈতিক অসাম্য আমাদের যুগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
গ্রিনস্প্যান-ইয়েলেন-লাগার্ড-কার্নি-সবলে থেকে শুরু করে আজকের পুঁজিবাদী অর্থনীতির সব হর্তাকর্তাই প্রকাশ্যে একই ধরনের কথা বলছেন। নিও-লিবারেল রাজনীতির ধারক-বাহক-কর্ণধার ওবামা-মার্কেল-মে-পুতিন-জিনপিংদের উৎকণ্ঠা থেকেই আজকে ট্রাম্পের উত্থানের কারণ বিশ্লেষণ সম্ভব।
এ আলোচনায় ঢুকতে গেলে আজকের বিশ্ব রাজনৈতিক-অর্থনীতির কিছু কাঠামোগত (স্ট্রাকচারাল) বিষয় এবং এর সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা ছাড়া উপায় নেই। আজকের পুঁজিবাদী অর্থনীতির নীতিনির্ধারকরা কিন্তু সবসময়েই এই কাঠামোগত বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে কাজ করেন এবং অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে এ নিয়ে কথাও বলেন। আইএমএফ, আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম, চায়নার সেন্ট্রাল ব্যাংক বা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতো সংস্থাগুলো এর ওপর ভিত্তি করেই অার্থিকনীতি প্রণয়ন করে।
এ লেখায় নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সংগৃহীত আলোচনা, তথ্য এবং পরিসংখ্যানের মাধ্যমে প্রথমে আমেরিকার অবস্থা এবং তারপর মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে থাকা আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতির কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আমেরিকার এক বিশাল জনগোষ্ঠি এখন ক্ষুব্ধ, হতাশ এবং চরমভাবে অসন্তুষ্ট। আমরা প্রায়ই শুনি যে ‘ব্লু কালার ওয়ার্কার’-রা দলে দলে চাকরি হারিয়েছে গত কয়েক দশকে। এই ব্লু কলার ওয়ার্কার আসলে কারা? এরা হচ্ছে মূলত সাদা আমেরিকান পুরুষ যাদের তেমন কোনো ডিগ্রি নেই; এরা এতদিন আমেরিকার কলকারখানায় চাকরি করে মোটামুটিভাবে একটা মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করতে সক্ষম ছিল। এরাই শুরুতে ব্যাপকভাবে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিল। বনেদি সব বড় বড় নেতাদের (যাদের ইদানীং পলিটিকাল এলিট বা এস্টাব্লিশমেন্টের পক্ষের লোক বলে অভিহিত করা হচ্ছে) টপকে দলের অভ্যন্তরীণ প্রাইমারি নির্বাচনে ট্রাম্পের মতো রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ একজন বিলিওনিয়ার ব্যবসায়ীর রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিতে যাওয়ার পেছনে এদের একটা বিশাল ভূমিকা ছিল।
প্রাইমারিতে জেতার পরে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের বাকিরা (অধিকাংশ রিপাবলিকান জনগোষ্ঠী) ট্রাম্পের পক্ষে এসে দাঁড়ায় বা বলতে পারেন অনেকেই দাঁড়াতে বাধ্য হয়। তবে আজকের আলোচনায় মূলত এই ‘ব্লু কলার ওয়ার্কার’-দের সমস্যা এবং ক্ষোভের কারণ নিয়ে আলোচনা করব।
বিভিন্ন ধরনের পোলিং হচ্ছে প্রতিনিয়তই এই ট্রাম্পের সমর্থকদের নিয়ে। ট্রাম্পের মনোনয়নে শুধু আমেরিকার শিক্ষিত লিবারেল ডেমোক্র্যাট অংশই হতবাক হয়েছে তা-ই নয়, এখানকার রক্ষণশীল থিংক ট্যাংক, বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া, পেশাদার রাজনীতিবিদরাও হতভম্ব হয়ে গেছেন। আপনারা হয়তো জানেন, আমেরিকার রাজনীতিতে সাধারণত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটদের লিবারেল বা উদার ও তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’ হিসেবে এবং রিপাবলিকানদের মোটামুটিভাবে রক্ষণশীল বলে গণ্য করা হয়, যদিও দুই পার্টিই অতীতে বিভিন্ন সময়ে এগুলো নিয়ে তাদের অবস্থান বদলেছে।
ব্লু কালার ওয়ার্কারদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন গত কয়েক দশকে। আশির দশক থেকেই ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতি’র প্রসার এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে হাজার হাজার কলকারখানার চাকরি চীন, ইন্ডিয়া, ফিলিপাইন, মেক্সিকোর মতো দেশে অনেক কম মজুররিতে ‘আউটসোর্স’ হয়ে গেছে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট (যেটাকে ১৯৩০ সালের ‘গ্রেট ডিপ্রেশান’-এর পরে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে ধরা হয়), এর পর ধনীদের অবস্থার দ্রুতই উন্নতি ঘটেছে, ওদিকে গরিব শ্রেণির কর্মজীবীরাও ধীরে ধীরে আবার তাদের নিম্ন বেতনের চাকরিগুলো ফিরে পেয়েছে। কিন্তু আমেরিকার মধ্যবিত্ত শ্রেণি পড়েছে এক ভীষণ সংকটে। তাদের অবস্থা কয়েক দশক ধরেই খারাপ হচ্ছিল, কিন্তু ২০০৮ সালের সংকটের পরে তা খারাপতর হতে শুরু করে।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে বিশ্বের দরবারে আমেরিকা যখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠছিল, শিল্প এবং প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে কল-কারখানা গড়ে উঠছিল, তখন এখানকার মধ্যবিত্তদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক উত্তরণের ‘মহাস্বপ্ন’ (যেটাকে ‘আমেরিকান ড্রিম’ বলে অভিহিত করা হয়) তৈরি হয়েছিল।
আমেরিকানদের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবেই প্রটেস্ট্যান্ট সমাজের এই মনোভাব অত্যন্ত প্রকট ছিল যে, বেশি খাটলে, কষ্ট করলে, নিয়মানুবর্তিতা এবং সংযম থাকলে যে কেউ জীবনে উন্নতি করতে পারে। সমাজত্ত্ববিদ ম্যাক্স ওয়েবার তাঁর ‘The Protestant Ethic and the Spirit of Capitalism’ বইতে যুক্তি উত্থাপন করেছেন, পুঁজিবাদের উত্থানের পেছনে প্রটেস্ট্যান্টদের এই নৈতিকতা নাকি অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করেছিল।
সে যাই হোক, সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে এটা পুঁজিবাদী বিশ্বের জনগণের মধ্যে প্রচলিত একটা আশাবাদী ‘মিথ’ হলেও, অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশগুলোতে এতদিন এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ছিল অপেক্ষকৃতভাবে বেশি। ক্লাসিক পুঁজিবাদের নিয়ম মেনেই, ইউরোপ-আমেরিকায় বিংশ শতাব্দীতে বেশ বড় সাইজের এক মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি হয়েছিল, যারা কলকারখানায় চাকরি করেই স্বাচ্ছন্দময় একটা জীবনযাপন করতে পারত। পেনশনের টাকায় নিশ্চিন্তে বুড়া বয়সটাও কাটিয়ে দিতে পারত। চিকিৎসার খরচ চালাতে পারত, ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠাতে পারত। পথটা সরু হলেও বংশ পরম্পরায় শ্রেণিগত উত্তরণের একটা উপায় খোলা ছিল তাদের সামনে।
আজকে আমেরিকায়, গত কয়েক দশকে সেই স্বপ্নে ভাটা পড়েছে; আর্থ-সামাজিক উত্তরণে (upward mobility) বন্ধ্যা লেগেছে। স্বতন্ত্র এক ‘আমেরিকান সাংস্কৃতিক আশাবাদ’ হিসেবে পরিচিত এই ‘আমেরিকান ড্রিম’ আজ মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করেছে। ‘স্বপ্ন’ যেন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে, হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টে আঁতকে উঠছে এই শ্রেণির জনগণ।
২০১৫ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় গত কয়েক দশকে উচ্চবিত্ত (অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র) এবং নিম্নবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তের সংখ্যা কমছে অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিতে।
আমেরিকার এই পেশাদার রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে এই স্বপ্নটাকে ফেরি করে খেয়েছেন অনেকদিন। কিছুদিন আগেই রিপাবলিকান সিনেটর এবং দলের প্রাইমারি নির্বাচনে অন্যতম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, “আমেরিকা কখনই ‘আছে’ ও ‘নেই’ এর দলে বিভক্ত দেশ নয়, আমেরিকা হচ্ছে আছে এবং যাদের এখন নেই কিন্তু অদূর ভবিষ্যতেই হবের দেশ।” কিন্তু ব্যাপারটার মধ্যে সত্যতা কমতে কমতে আজ তা প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছেছে এবং সেটা এখানকার কারখানার মধ্যবিত্ত/নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রমিকদের চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। তাই তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে রাজনীতিবিদদের এসব মিথ্যা আশাবাদের প্রতি একধরনের অসন্তোষ এবং ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে।
পরিসংখ্যনে বলছে, পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে আমেরিকায় সম্পদের অসাম্য সবচেয়ে বেশি। আমেরিকায় নিম্ন বা মধ্যবিত্তদের জন্য শ্রেণি উত্তরণের সম্ভাবনা সবচেয়ে কম; কানাডা এবং ইউরোপের চেয়ে অনেক কম। একদিকে যেমন ফ্যাক্টরির চাকরিগুলো হারিয়ে গেছে বা কম মজুরির তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পাচার হয়ে গেছে, অন্যদিকে আবার দেখা যাচ্ছে আমেরিকায় গত ২৫ বছরে মোট চাকরির সংখ্যা মাত্র ৩০% বাড়লেও সার্ভিস, জ্ঞান এবং প্রযুক্তিভিত্তিক সেক্টরগুলোতে চাকরির সংখ্যা বেড়েছে ১০০ গুণের বেশি। কিন্তু সেখানেও আবার বিধিবাম– এসব চাকরির জন্য দরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি!
গত দু-তিন দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ বেড়েছে অকল্পনীয় হারে। ১৯৯৫-২০১৫ সালে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ বেড়েছে ১৭৯% আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে ২২৬%। এই অংশটার জন্য ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো এখন প্রায় অধরাই থেকে যাচ্ছে। আর যারা ঋণ করে পড়ছে তাদের বাকি জীবন চলে যাচ্ছে সুদসহ সেই ছাত্র-ঋণ পরিশোধ করতে।
স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ৭০% ঋণ নিতে বাধ্য হয়, প্রায় চার কোটির বেশি আমেরিকান এখন ছাত্র-ঋণে জর্জরিত। ২০১৬ সালের এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গড়পড়তা প্রতি ছাত্র নাকি ৩৭,১৭২ ডলার ঋণ নিয়ে বের হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমেরিকায় ছাত্র-ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারে। প্রতি চারজনে একজন ঋণ পরিশোধ না করতে পেরে ডিফল্ট করছেন। অনেক পণ্ডিতই আশঙ্কা করছেন, গত দশকের হাউজিং সংকটের মতোই এর পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হইয়ে উঠতে পারে এই ছাত্র-ঋণ।
এ তো গেল ছাত্র-ঋণের প্রসঙ্গ। এবার আসি চিকিৎসায়। আমেরিকা শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র দেশ যেখানে জনগণের জন্য সরকার প্রদত্ত চিকিৎসার সুবিধা নেই। হেলথ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এবং বড় বড় ওষুধের কোম্পানি প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লাভ করলেও আমেরিকা অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় ‘পার ক্যাপিটা’ হিসেবে প্রায় দুইগুণ (আমেরিকা: ৯,০২৪ ডলার, জার্মানি: ৫,১১৯ ডলার, কানাডা: ৪,৫০৬ ডলার ও ব্রিটেন: ৩,৯৭১ ডলার) অর্থ ব্যয় করে। অনেকদিন ধরেই আমেরিকার স্বাস্থ্যব্যবস্থা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিম্নতম মজুরির ক্ষেত্রেও অবস্থা ভয়াবহ। আমেরিকার এখনকার নিম্নতম মজুরি ৭.২৫ ডলার। কিন্তু অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে নাকি এটা অন্তত ১২ ডলার হওয়ার কথা। ১৯৬৮ সালে একজন নিম্নমজুরির কর্মচারীর মাসিক বেতন দিয়ে তিন সদস্যের একটা সংসারকে দারিদ্র্যসীমার নীচে রাখা সম্ভব ছিল, এখন শুধুমাত্র একজনকে দারিদ্রসীমার নীচে রাখা সম্ভব। ফেডারেল রিজার্ভ কিছুদিন আগে একটা পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, কোনো একটা জরুরি পরিস্থিতি ঘটলে আমেরিকায় এখন ৪৭% মানুষের ৪০০ ডলার খরচ করার ক্ষমতা নেই। টাকাটা জোগাড় করার জন্য তাদের হয় ঋণ করতে হবে, না হলে কিছু বেচতে হবে।
আরও কয়েকটি পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা যাক।
অক্সফ্যামের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার আজকের মোট সম্পদের ৭৬ শতাংশের অধিকারী হচ্ছে সবচেয়ে ধনী, অর্থাৎ প্রথম সারির ১০% জনগোষ্ঠী। এর পরের ৪০ শতাংশের হাতে আছে ২৩ ভাগ সম্পদ। তাহলে নিচের ৫০ শতাংশের হাতে কী থাকল? পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্পদশালী এই রাষ্ট্রের নিচের ৫০% মানুষ তথা গরিবরা মাত্র ১% সম্পদের অধিকারী।
ব্যাপারটাকে একটু অন্যভাবে দেখা যাক। শীর্ষ ১০ শতাংশের গড় সম্পদ অন্তত পক্ষে ৪ মিলিয়ন ডলার, পরের ৪০ শতাংশের তিন লাখ ১৬ হাজার ডলার আর নিচের ৫০ শতাংশের গড় সম্পদের পরিমাণ ৩৬ হাজার ডলার। কিন্তু আপনি যদি একেবারে নিচের ২৫% মানুষের সম্পদের হিসেব নেন তাহলে দেখা যাবে যে তাদের হাতে কোনো জমানো সম্পদ নেই, বরং গড়পড়তাভাবে তাদের কাঁধে তেরো হাজার ডলারের ঋণ।
ডেমোক্রেটিক দলের অন্যতম পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডারস– যাঁর সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক বেশ কিছু নীতি কমবয়সী ‘উদার’ আমারেকিনদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, কিন্তু ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারি ইলেকশানে হিলারি ক্লিনটনের কাছে হেরেছেন। কিছুদিন আগে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন–
“এখন আমেরিকার প্রথম ০.১ শতাংশের হাতে মোট ৯০ শতাংশ জনসমষ্টির সমান সম্পদ সঞ্চিত হয়েছে।”
এখানে খেয়াল করুন, বার্নি এখানে কিন্তু ১ শতাংশের কথা বলেছেন না, ১ শতাংশের দশ ভাগের এক ভাগের কথা বলছেন। অর্থাৎ আমেরিকার সর্বোচ্চ সম্পদশালী উচ্চবিত্তদের মাথা প্রথম মাত্র ১৬০টি পরিবারের কথা বলছেন, যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ এ দেশের নিচের তলায় থাকা ৯০% জনগণের সম্পদের সমান! বার্নি এ-ও বলেন–
“সম্পদের এই অকল্পনীয় বৈষম্য এবং অভাব আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় নৈতিক ইস্যু, এবং এটা শুধু আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় নৈতিক সমস্যাই নয়, এটা এখন সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ধূর্ত বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী এসে বলেন, “আমি তোমাদের দুঃখ বুঝি। কারণ, আমি ওই অভিজাত মিথ্যুক রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কাজ করে এসেছি, ওদের পয়সা দিয়েছি, ওদের সব কপটতা আমি খুব ভালোভাবেই জানি। ওরা বড়লোকদের জন্য যে ট্যাক্সের আইনগুলো বানিয়েছে সেগুলোতে কী কী ফাঁকফোকর আছে তার সব আমার জানা আছে। কারণ আমি কোটি কোটি টাকা বানিয়েছি রাষ্ট্রকে প্রায় কোন ট্যাক্স না দিয়েই, যেখানে মধ্যবিত্ত জন্যগণের ট্যাক্স দিতে দিতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।”
ট্রাম্প সাদা আমেরিকানদের বনেদি জাতীয়তাবাদে সুড়সুড়ি দিয়ে পপুলিস্ট খেলা খেলে বলেন, “তোমাদের (আমেরিকান) আজকের অবস্থার জন্য, চাকরিহীনতার জন্য, স্বপ্নভঙ্গের জন্য দায়ী আসলে অভিবাসীরা, মেক্সিকানরা, হিস্প্যানিকরা। আমি নিজেই তো এদের দিয়ে কাজ করাই, আমি জানি এরা কিভাবে আমেরিকায় তোমাদের চাকরি নিয়ে নিচ্ছে। এরা সবাই আসলে ধর্ষণকারী ক্রিমিনাল। এদের হাত থেকে এখন আমাদের নিজেদের বাঁচাতে হবে।
“এই রাজনীতিবিদেরাই ইমিগ্রেশন পলিসি তৈরি করেছেন এবং বাইরে থেকে বিভিন্নভাবে আইনি এবং বেআইনি অভিবাসীদের এ দেশে নিয়ে আসছেন, যারা তোমাদের চাকরিগুলো নিয়ে নিচ্ছে। আজ এরাই সংখ্যালঘু কালো, হিস্প্যানিক, সমকামী বা নারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তোমাদের হক থেকে বঞ্চিত করছেন। গর্ভপাতের অধিকার বা সমকামীদের বিয়ের অধিকার দিয়ে আমাদের শত শত বছরের তৈরি ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিস্টান বিশ্ব-রীতিটাকে ভেঙে দিচ্ছেন।” তখন এই হতোদ্যম সাদা আমেরিকান পুরুষেরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠে…
“আমেরিকার যে শৌর্য-বীর্য-স্বপ্ন ছিল, বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ছিল তা শেষ করে দেওয়ার জন্য দায়ী তোমাদের দ্বারা নির্বাচিত এতদিনের পেশাদার রাজনীতিবিদরা, যারা এতদিন ধরে তোমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু আবার ওদিকে বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ডিলগুলোর মাধ্যমে তোমাদের ঠকিয়েছে। এই ট্রেড ডিলগুলোর কারণেই তোমাদের চাকরিগুলো চীনের মতো কম পারিশ্রমিকের দেশে চলে গেছে। এই রাজনীতিবিদেরা দুর্নীতিগ্রস্ত (crony Capitalism), তারা শুধুমাত্র বড় বড় কর্পোরেশনের এবং শেয়ার বাজারের পুঁজিপতিদের স্বার্থ দেখেন। কর্পোরেশনের লবিস্টদের কাছ থেকে পয়সা খেয়ে এরা আজকে আর তোমাদের কথা ভাবতে পারে না। তারা আসলে তোমাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের বিনিমিয়ে ওই বড়লোকদের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বানাতে নিমগ্ন।”
ট্রাম্প মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকেও ধুয়ে দিচ্ছেন সারা ক্ষণ। রাজনীতিবিদ, অর্থনৈতিক পলিসি নির্ধারক এবং তাদের জয়গান গাওয়া মিডিয়ার উপর এই অংশের জনগণের ক্ষোভ এতটাই জমে আছে যে তারা যে কোনো মূল্যে এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাজি। তাই ট্রাম্পের মিডিয়াবিরোধী বক্তব্যগুলো ওদের মনে গেঁথে বসে। দেখলাম ট্রাম্পের একজন সমর্থক বলছেন, “যখন দেখি মিডিয়া/প্রেস এবং সরকারের তিনটি শাখাই (আইন প্রণয়ন, বিচার ও প্রশাসন) ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে তখন আমি একটা কথাই ভাবি, ট্রাম্প অন্যান্য বিষয়ে যতই খারাপ হোক না কেন তিনি নিশ্চয়ই কিছু একটা ঠিক করছেন।”
কয়েকদিন আগের এক পোলিংয়ে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার এবারের নির্বাচনে যে কয়েক ধরনের মানুষ দলে দলে ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তারা হল মধ্যবিত্ত জনগণ, যারা মূলত তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আতংকিত। সাদা আমেরিকান পুরুষ যারা মনে করে, আজকের পৃথিবীতে সাদাদের আধিপত্য শেষ হয়ে আসছে এবং রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে যারা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে মনে করে যে আজকে এখানকার রাজনৈতিক সিস্টেম এবং মিডিয়া ভীষণভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
আমেরিকার পাঁচ টার্মের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান, পুঁজিবাদের রক্ষাকর্তা, মুক্ত বাজারের অন্যতম অদম্য প্রবক্তা, নিও-লিবারেল আদর্শের মহাঠাকুর অ্যালান গ্রিন্সপ্যান (যাকে আমেরিকার হাউজিং সংকট এবং ২০০৮ সালের ধসের জন্য দায়ী করা হয়) যখন ‘আমি কিন্তু কলা খাইনি’-এর সুরে বলেন, “তোমরা বাপু পুঁজিবাদকে দোষী কোরো না বিশ্বব্যাপী এই মারাত্মক সম্পদের বৈষম্যের জন্য; এই অসাম্যের জন্য মানুষের ন্যায়সঙ্গত উদ্বেগ থাকলেও এর জন্য কিন্তু দায়ী গ্লোবালাইজেশন আর ইনোভেশন, পুঁজিবাদ নয়”, তখন একটু চিন্তিত না হয়ে পারা যায় না। তাঁর বক্তব্যে সমস্যা একটাই– চীন এবং রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা পতনের পর আজকের পৃথিবীতে পুঁজিবাদী সিস্টেম ছাড়া আর কোনো সিস্টেমই নেই। আর তাদের মুক্তবাজার নীতির অধীনে আজকে যে বিশ্বায়ন এবং প্রযুক্তির উন্নতি ঘটছে তার নিয়ন্ত্রক কিন্তু ওই একমাত্র পুঁজিবাদী দেশগুলোই।। সুতরাং, ব্যাপারটা বেশ অস্বস্তিকর হলেও এটাই বাস্তবতা যে, দোষটা শেষ পর্যন্ত ওনাদের ঘাড়েই এসে পড়তে বাধ্য।
আর এই সম্পদের চরম অসাম্যের ব্যাপারটা কিন্তু শুধু আমেরিকাতেই নয় (যদিও আমেরিকাতে হারটা সবচেয়ে বেশি), সমগ্র পৃথিবীতেই এটা এখন উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে উঠেছে। গত ৬ অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ) আয়োজিত এক ডিবেটে পৃথিবীর অর্থনীতির বড় বড় চার মাথা অংশগ্রহণ করেন: আইএমএফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টিন লাগার্ড, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি, জার্মানির ফাইন্যান্স মিনিস্টার উলফগ্যাং সবলে এবং পিপলস ব্যাংক অফ চায়নার ডেপুটি গভর্নর গ্যাং ইয়ি। তাদের পুরো আলোচনায় যা শুনেছি তা হল, সম্পদের অকল্পনীয় অসম বণ্টনের কারণে বৈশ্বিক এবং স্থানীয় অর্থনীতি এবং রাজনীতি আজ চরম সংকটের সম্মুখীন এবং অতিদ্রুত ফিসকাল পলিসির পরিবর্তন না করলে তা কিভাবে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে তার সতর্কবাণী। (লেখার শেষে তথ্যসূত্রে এ-সংক্রান্ত ভিডিওর লিংক দেওয়া আছে।)
লাগার্ড বারবার সতর্ক করে বললেন, আজকে তাদের স্লোগান হচ্ছে “পৃথিবীতে বড্ড বেশিদিন ধরে বড্ড কম অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটছে, আর মুষ্টিমেয় বিত্তবানের হাতে সব সম্পদ জমা হচ্ছে। এর আশু সমাধান দরকার। নিও-লিবারেল অর্থনীতির প্রাণ হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতি আর এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতেই আজকে উন্নত দেশগুলোর জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে, এ রকম আরেকটি সংকট ঘটলে তা কাটিয়ে ওঠা কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।”
কার্নি এবং ইয়ি বললেন, তাদের এখন সমস্যাটার ভয়াবহতা স্বীকার করার সময় হয়ে এসেছে। শুধু যে অর্থনৈতিক বিকাশ ধীর হয়েছে তা-ই নয়, আরও বড় সমস্যা হচ্ছে যে সম্পদ এবং আয়ের অসম বণ্টন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সবলে তো বলেই বসলেন, “এ কারণেই বনেদি প্রাতষ্ঠানিক রাজনৈতিক নেতা এবং প্রচার মাধ্যমগুলোর প্রতি আজ জনগণের অবিশ্বাস এবং অশ্রদ্ধা শুধু বেড়েই চলেছে। জনগণ খেপে উঠে বিদ্রোহ করে বসতে পারে– পৃথিবীর সম্পদ আরেকটু ‘ভালোভাবে’ বণ্টন করতে না পারলে আজকের পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে।”
মজার ব্যাপার হল, এই যে আজকের সিস্টেমে সম্পদের অসম বণ্টন নিয়ে বাঘা বাঘা সবাই এত ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন সেটাও আসলে অসুখের লক্ষণমাত্র, অসুখের মূল কারণ কিন্তু এটা নয়। মূল কারণ বুঝতে হলে গত কয়েক দশকের পলিসিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। ওই সব পলিসির ফলে আজকের বিশ্ব এ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।