আহমাদিনেজাদ ইরানিদের কাছে যে কারণে এতো জনপ্রিয়

ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
Spread the love

অনলাইন ডেস্ক

ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ। যিঁনি একজন  সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী, দূরদর্শী নেতা হিসেবে এখনো সারা বিশ্বে পরিচিত।

বিশ্বের একসময়কার অন্যতম প্রভাবশালী এই  ইরানি নেতা প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবসর নেওয়ার পর  এখনো খুব সাধারণ জীবন-যাপন করছেন। যে কারণে তিনি এখনো ইরানের জনগণের  মাঝে  অুপ্রেরণার অনন্য এক  উদহারণ।

কেন তিনি এখনো দেশটির মানুষের কাছে জনপ্রিয় তার পেছনে রয়েছে তাঁর অনন্য সাধারণ জীবন-যাপন। 

 মাহমুদ আহমেদিনেজাদের জন্ম প্রত্যন্ত এক গ্রামে  খুবই সাধারণ গরিব পরিবারে। তার বাবা  পেশায় ছিলেন  কামার। নেজাদ এমন দরিদ্র পরিবারের ছেলে হয়েও নিজের একান্ত কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যদিয়ে  ট্রান্সপর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি হন দেশটির প্রেসিডেন্ট। 

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হওয়ার  পরও জীবনযাপনে তাঁর কোনো পরিবর্তন হয়নি। অতি  সাধারণ জীবন-যাপনের মধ্যদিয়ে তিনি দেশটির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ঐকান্তিক চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।  আভিজাত্য তাকে স্পর্শ করেতে পারেনি বিন্দৃু মাত্রও।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও  পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ছোট্ট বাড়িই বসবাসের জন্য পছন্দ করেছিলেন তিনি। তার বাড়িতে কয়েকটি কাঠের চেয়ার ছাড়া আর কোনো আসবাব ছিল না। প্রেসিডেন্ট ভবনেও তিনি ফ্লোরে কার্পেটের ওপর ঘুমাতেন। নিজের ঘরের ফ্লোরে একটা পুরনো কার্পেটের ওপর বালিশ বিছিয়ে ঘুমাতে অভ্যস্থ ছিলেন নেজাদ। তাঁর বাড়িতে  শোয়ার কোনো খাট নেই। তিনি কার্পেটেই বসে থেতে পছন্দ করেন বলে  কিন্তু কোনো ডাইনিং টেবিল ছিল না। 

 নেজাদের   ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে আছে তেহরানের বস্তিতে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাড়ি। পুনর্নিমিত দুই তলা ভবনেই তিনি ও তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন এখনো। যে জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, তার আয়তন মাত্র ১৭৫ বর্গমিটার। বেতন হিসেবে তেহরান ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া ২৫০  ডলার দিয়েই সংসার চালান নেজাদ।   তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালেও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে  কোনো ভাতা  নেননি।

বিবিসির এক সাংবাদিক তাঁকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে নেজাদ ওই সময় বলেছিলেন, সব সম্পত্তি হল রাষ্ট্রের, তাঁর কাজ হল রাষ্ট্রের সেই সম্পদকে পাহারা দেওয়া। 

 নেজাদ ইরানি প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হ্ভওয়ার পর রাষ্ট্রপতি ভবন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ ইরানিদের  অভাব-অভিযোগের  চিঠিপত্র গ্রহণের ব্যবস্থা করেন তিনি। আর প্রেসিডেন্ট ভবনের দামিদামি কার্পেট তিনি তেহরানের মসজিদগুলোতে দান করেন,  আর প্রেসিডেন্ট ভবনে বিছান সাধারণ মানের কার্পেট। ভিআইপি অতিথিশালাও বন্ধ করে দেন নেজাদ। সাধারণ ঘরেই ভিআইপিদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন তিনি।

নেজাদ প্রথমে  তেহরানের মেয়র ছিলেন। তখন তিনি নিজ হাতে তেহরানের রাস্তা ঝাড়ু দিতেন।  প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছিলেন মাত্র ৪৫ জন (২৫ জন নারী এবং ২০ জন পুরুষ) অতিথিকে । শুধুমাত্র কমলা, আপেল, কলা ও ছোট এক টুকরো কেক দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন তিনি অতিথিদের।

এনবিসি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক তাঁকে এজন্য প্রশ্ন  করেছিলেন। তিনি এর জবাবে  অত্যন্ত হাসিমুখে বিনয়ীভাবে  বলেছিলেন, এর চাইতে বেশি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই।

সাবেক প্রেসিডেন্ট নেজাদ সময়ের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনমীল ছিলেন। ছিলেন নিতান্তই সাদামাটা এক মানুষ। স্ত্রীর হাতে বানানো নাস্তা খেয়ে সকাল ৭টায় নিজের কার্যালয়ে যেতেন। যাওয়ার সময় সঙ্কগে করে কালো ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন দুপুরের আহার। দুপুরে অফিসে সবার সামনে মেঝেতে  কার্পেটের ওপর বসে সেই আহার করতেন।

নেজাদের  দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় তিনি বাড়ির দারোয়ান, পথচারী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে কাটান এবং তাঁদের  সুখ-দুঃখ শোনেন ।আর প্রতিদিন মাত্র ৩ ঘন্টা ঘুমান।   প্রতিদিন সকাল ৫ টায় ফজরের নামাজ শেষে  শুরু করেন দিনের কার্যসূচি।  আর রাত ২টায় এশার নামাজ ও ব্যক্তিগত পড়াশোনা  শেষ করে ঘুমাতে যান।

 নামাজের জামাতে তিনি সব সময় পেছনের সারিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দাঁড়াতে ভালোবাসেন। মসজিদে সামনের কাতারে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা নেই তাঁর। । কখনো নামাজ বাদ দেন না। রাস্তায় থাকাকালে নামাজের সময় হলে তিনি রাস্তায় ছোট্ট কাপড় বিছিয়ে সেখানেই নামাজ আদায় করেন। তিনি মহান আল্লাহকে তাঁর সর্বোত্তম দেহরক্ষী মনে করেন।

  প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি এখন তাঁর  পুরনো  পেশা শিক্ষকতায় ফিরে গেছেন। গণপরিবহনে চেপে তিনি প্রতিদিন  ক্লাস নিতে যান!  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও যান গন্তব্যে! সাবেক প্রেসিডেন্ট হয়ে গণপরিবহনে   চড়তে একটুও অস্বস্তি নেই তাঁর।