আয়না ২৪ ডেস্ক
যুক্তরাজ্যে আজ পার্লামেন্ট নির্বাচন। দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠনে ভোট দিতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের মানুষ।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে আজকের নির্বাচনকে তার জীবদ্দশায় ব্রিটেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। তবে শুধু ব্রিটেনের জন্য নয়, আজকের নির্বাচন বিশ্বের অন্য অনেক দেশের জন্যও বাড়তি গুরুত্ব বহন করছে। ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার প্রক্রিয়া এবং জোটের বাইরে দেশটির বাণিজ্য সম্পর্ক, সীমান্ত ও শুল্ক ব্যবস্থাপনার ধরন নির্ধারিত হবে আজকের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। খবর রয়টার্স ও এএফপি।
দেড় মাসের নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রতিশ্রুতি পর্ব শেষে ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলো আজ ভোটারদের রায়ের মুখোমুখি হবে। ইংল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের ভোটাররা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেবেন। ১৯৭৪ সালের পর ব্রিটেনে এটাই প্রথম আগাম নির্বাচন। গত বছর ব্রেক্সিট গণভোটের পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সরে দাঁড়ালে টোরি নেত্রী ও পূর্ববর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরিসা মে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর তিনি টোরি সরকারের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করার এবং আগাম নির্বাচন আয়োজন না করার ঘোষণা দেন। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার প্রস্তাব দেয়ার পর তিনি পূর্ববর্তী ঘোষণা থেকে সরে এসে আগাম নির্বাচনের ডাক দেন।
ব্রিটেনের বর্তমান পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশের বেশি সদস্য গত বছরের গণভোটে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট দেন। কিন্তু ব্রিটিশ ভোটারদের প্রায় ৬০ শতাংশই সেবার ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দেন। এর মধ্যে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ভোটাররা ব্রেক্সিটের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট দেন। অন্যদিকে স্কটল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের ভোটাররা রায় দেন ইইউতে থাকার পক্ষে। স্কটল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন বরাবরই ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে ইইউর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট প্রস্তাব দেয়ার পর নিকোলা স্টার্জন স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে নতুন করে গণভোট আয়োজনের দাবি তোলেন। কাজেই আজকের সাধারণ নির্বাচন ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যত্ নির্ধারণেও প্রভাবকের ভূমিকা রাখতে পারে।
দেড় মাস আগে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মের কনজারভেটিভ পার্টি বিরোধী লেবার পার্টির চেয়ে জনমত জরিপে ২০ শতাংশের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। উপরন্তু লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন তখন নিজ দলে অন্তর্দ্বন্দ্বের মোকাবেলা করছিলেন। টেরিসা মে বলেছিলেন, ইইউর সঙ্গে দরকষাকষির শক্তি সংহত করতেই তিনি ভোটারদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের কাছেও তাই ব্রেক্সিটই সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল।
নির্বাচনী প্রচারণায় টেরিসা মে ইইউর সঙ্গে পূর্ণ বিচ্ছেদের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন চেয়েছেন। অন্যদিকে বিরোধী লেবার পার্টি বলেছে, ইইউর সঙ্গে সমঝোতা ও সম্পর্ক অব্যাহত রাখার মাধ্যমেই ব্রিটেন নিজের স্বার্থের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে। অন্য দুটি দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ব্রেক্সিটের পুরোপুরি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির সমর্থনের ব্যবধান অনেকটাই কমে এসেছে। বিশেষত নির্বাচনী বিতর্কগুলোয় টেরিসা মের অনুপস্থিতির বিপরীতে জেরেমি করবিনের সপ্রতিভ উপস্থিতি জনমতকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে।
ব্রিটেনে আজকের নির্বাচনী ফলাফল যে কোনোদিকে মোড় নিতে পারে। বিশেষত দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ম্যানচেস্টার ও লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ব্রেক্সিটের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোর চেয়ে নিরাপত্তা ও সীমান্তে কড়াকড়ির বিষয়েই ভোটারদের বেশি আগ্রহী করতে পারে। নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি জয়ী হলে ইউরোপের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। কিছুদিনের মধ্যে শুরু হতে যাওয়া ব্রেক্সিট আলোচনায় ব্রাসেলস ও লন্ডনের কোনো রকম আপসের সম্ভাবনাও দূরে সরে যেতে পারে।
কনজারভেটিভ পার্টি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে, সেক্ষেত্রে লেবার পার্টি, এসএনপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি জোট বেঁধে সরকার গঠন করতে পারে। নির্বাচনী প্রচারণায় লেবার পার্টি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে লেবার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ইইউ থেকে বেরোলেও অভিন্ন ইউরোপীয় বাজারে ব্রিটেনের প্রবেশাধিকার ধরে রাখার চেষ্টা চালাবে। এছাড়া অভিবাসন ইস্যুতেও দলটি ব্রাসেলসের সঙ্গে সমঝোতা করবে। আর লেবার পার্টি যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেক্ষেত্রে ব্রিটেন ইইউর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গঠন করতে চাইবে। নরওয়ে ব্রাসেলসের সঙ্গে যে রকম সম্পর্কে আবদ্ধ, ব্রিটেন তেমন কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারে।
লেবার পার্টি, এসএনপি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের জোট না হলে টেরিসা মে সংখ্যালঘু একটি সরকার গঠন করবেন। সেক্ষেত্রে ব্রিটেনকে আবারো নির্বাচনে যেতে হতে পারে। কারণ অতীতে ব্রিটেনে কোনো সংখ্যালঘু সরকারই বেশি দিন টিকে থাকেনি।
আজকের নির্বাচনে যে দলই সরকার গঠন করুক, ইইউ থেকে বেরোনোর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ার দায়িত্ব তাদের হাতে বর্তাবে। এছাড়া জোটের বাইরে ব্রিটেনের স্বতন্ত্র সীমান্ত ও শুল্ক ব্যবস্থাপনার রূপরেখাও তাদের প্রণয়ন করতে হবে।
ব্রিটেনের ভোটাররা তাদের দেশের জন্য কোন পথটি বেছে নেবেন, আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ তার আভাস পাওয়া যাবে।