নিজস্ব প্রতিবেদক
না ফেরার দেশে চলে গেলেন বরগুনা কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইয়েদা আমান ( ইন্নালিল্লাহে…রাজিউন)। সোমবার রাতে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বছরখানেক ধরে তিনি দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁর মরদেহ বরগুনায় পৌছার পর দুপুর ২ টায় আবুল হোসেন ইদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে গণকবরে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
তাঁর অকাল মৃত্যুতে বরগুনার শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সকালে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে সাইয়েদা আমানের বাবার বাড়িতে তাঁর মরদেহ আনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাইয়েদা আমানের সহকর্মী, সহপাঠী, শুভানুধ্যায়ীসহ অনেকে তাঁর এই অকাল প্রয়াণে শোক-সমবেদনা জানিয়ে পোস্ট দেন।
বরগুনা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবদুল আলীম লিটন শোক প্রকাশ করে লিখেন একজন মেধাবী শিক্ষকের এই অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোসনে আরা ছবির সঙ্গে কয়েকদিন আগে তোলা শিক্ষক সাইয়েদার ছবি-
সবচেয়ে মর্মস্পর্শী পোস্টটি দেন সাইয়েদার সহপাঠী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু বরগুনা জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক হোসনে আরা ছবি hb.chobi
তিনি তাঁর পোস্টে লিখেন, Shaiada Aman, চলে গেলি! আর মাত্র ১০ টা বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছিলি, তবু কেন থাকলিনারে! জানি তোর ক্যান্সার যন্ত্রণার চেয়ে আমার মনো যন্ত্রণা কিছুই না- তবু সেটুকুর ভাগ নিবার মত কেউ তো আর আমার পাশে রইল নারে। কতটা নিরাপদ অনুভব করে সব কিছু ঢেলে দিতাম তোর কাছে, কে নেবে আর সে ভার! ঢাকা যেতে রওয়ানা দিয়ে বলেছিলি,’ আর হয়ত দেখা নাও হতে পারে।’ তুই কি বুঝতে পেরেছিলি? আমার ফোনের অপেক্ষা করে নিজেই ফোন দিয়ে বলেছিলি, ‘ ঢাকা এসেছি বলে কি ধরে নিলি আমি মরে গেছি? ফোন দিস না কেন? এ নম্বরের এ পাশে যখন আমি থাকব না, তখন যেন আবার ভুলে ফোন দিয়ে কষ্ট পাস না।’ কেন তোকে ফোন না দিয়ে বরং তোর ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম চাতক পাখির মত, সে তো তুই জানতিস। তবু ভুলে গিয়ে কত কথা বললি। তার জবাব আর একদিন দেব, খুব কড়া ভাবেই একটা দীর্ঘ চিঠি লিখে দেব- পৌঁছাবে না তোর কাছে? আজ আর কিছু বলব না, কেননা আমার মন ভাল নেই। আর তোকেও ডিষ্টর্টাব করতে চাই না। কতদিন আরাম করে ঘুমাসনি তুই! মাত্র তো রাত আটটায় ঘুম দিলি। আরাম করে ঘুমা তুই, শান্তিতে থাক। বিধাতাকে বলে দিয়েছিঃ “প্রাণের সাথীকে এ পাড়ে অনেক কষ্ট দিয়েছো, ওপারে আর এক বিন্দু কষ্টও দিও না। ” আমি কিন্তু তোর জন্য একেবারেই কাঁদব না, তুই যেন তা নিয়ে অভিমান করিস না। ভাল থাকিস, শান্তিতে থাকিস, আরামে থাকিস। জান্নাতুল ফেরদৌস হোক তোর স্থায়ী ঠিকানা- আমিন।
ইতি, তোর বকা মিস করা আমি।
একমাত্র ছেলের ইমুর জন্মদিন উদযাপন-
ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সদালাপী ও নম্র স্বভাবের সাইয়েদা পেশাগত জীবনেও ছিলেন খুবই দায়িত্বশীল। একজন মেধাবী শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মময় জীবন ছিল বর্ণিল। শিক্ষার্থীদের প্রতি সদাচারণ, যথাযথ পাঠদান, দুস্থ শিক্ষার্থীদের সহায়তার মধ্যদিয়ে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত ছিলেন।