আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনার আমতলী উপজেলা থেকে নিখোঁজ হওয়া এক ব্যক্তি গতকাল আকষ্মিক বাড়িতে ফিরে এসেছেন। মো. সোহেল (২২) নামে ওই যুবকসহ উপজেলার পূর্ব ঘটখালী গ্রামের ১২ জন দিনমজুর ধানসী গাছ কাটার জন্য ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদীর মোহনায় যাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে নিখোঁজ হন।
ফিরে আসা সোহেল অস্বাভাবিক আচরণ করছেন এবং তেমন কথা বলছেন না। কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। আবার কিছু সময় পর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোহেল বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের ঘটখালী গ্রামের এনসান আলীর ছেলে।
ঘূর্ণিঝড় সিডরের একদিন পূর্বে ঘটখালী গ্রামের ১২ জন দিন মজুর ধানচী লতাগাছ কাটতে ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগর ও পায়রা নদীর মোহনায় একটি চরে অবস্থান নেয়। সিডর শুরু হলে পানির তীব্র ঢেউয়ে রাতে ট্রলার উল্টে যায়। এরপর ১২ জন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঝড়ের চারদিন পরে দুজন বাড়ি ফিরে এলেও দিনমজুর খলিল, সোবাহান, ইউসুফ, জব্বার আলী, হোসেন আলী, মনিরুল, দেলোয়ার, আলতাফ, রত্তন এবং সোহেল নিখোঁজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। স্বজনরা ধরে নেয় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার রাতে উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারের জেসমিন নামের এক নারী সিডরে নিখোঁজ হওয়া সোহেলকে বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখে চিনতে পারেন। জেসমিন ঘটখালী গ্রামে সোহেলের পরিবারের কাছে খবর দিলে আলম বিশ্বাসসহ প্রতিবেশীরা রোববার সকালে আরপাঙ্গাশিয়া বাজারে ছুটে যান।
এরপর সোহেলকে তাঁরা বাড়িতে নিয়ে যান। এসময় সোহেলের শরীরে থাকা শনাক্তকরণ চিহ্ন দেখে মা হাজেরা খাতুন তার ছেলেকে চিনতে পেরে বুকে জড়িয়ে ধরেন।’
সিডরের সাড়ে ৯ বছর পরে সন্তানকে ফিরে পেয়ে মা হাজেরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন।তিনি জানান- মোর হারানো মানিক ফিররা পাইছি। সকাল থেকে সোহেলকে দেখতে শত শত মানুষ তাদের বাড়িতে ছুটে আসছে। সোহেল এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি কি কারনে সে এরকম হয়েছে তা জানা যায়নি।
সোহেল এখন আগত লোকজনের দিকে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেছেন। কোন কথা বলছে না। তার পরিচিতদের দেখলে শুধু চোখের পানি ছেড়ে দেয়। যে কারণে এতদিন কোথায় কিভাবে ছিল তা জানা জায়নি। সুস্থ্য হলে হয় তো জানা যাবে।
আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, শনিবার রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে একটি ট্রাক থেকে ৫ থেকে ৬ জন লোককে বাজারে নামিয়ে ট্রাকটি দ্রুত চলে যায়। ট্রাক থেকে নামানো ওই লোকদের মধ্যে সোহেল ছিল।