বাউফল প্রতিনিধি
চিকিৎসক না হয়ে কিংবা কোনো ধরনের ডিগ্রি না নিয়েও তিনি দীর্ঘদিন প্রতারণা করে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার ও অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে দেদার প্রসূতি অস্তোপচার করে যাচ্ছিলেন। অবশেষে তিনি ধরা পড়লেন যে তিনি চিকিৎসক নন, ভুয়া।
চিকিৎসক পরিচয়ে এভাবে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দুটি ক্লিনিকে গত এক বছর ধরে অন্তত ৪০০ প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন! সম্প্রতি তিনি ধরা পড়েন যে তিনি চিকিৎসক নন প্রতারক। এই প্রতারক তথাকথিত গাইনি চিকিৎসকের নাম অর্জুন চক্রবর্তী।
প্রতারক অর্জুন চক্রবর্তী বাড়ি চাঁদপুর জেলার উত্তর নলুয়া গ্রামে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করে বাউফল থানার পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। পুলিশ জানায়, কুমিল্লার মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ফাউন্ডেশন থেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) পাস করেছেন এই কথিত চিকিৎসক। তবে এই কোর্স করে অস্ত্রোপচার করার অনুমতি ছিল না তার।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাউফল থানা পুলিশের কাছে অর্জুন তাঁর নিজের কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেন। তিনি পুলিশকে বলেন, তাঁর আসল নাম গোপন করে আরেক চিকিৎসকের নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে তিনি দীর্ঘদি এই প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন। অর্জুনের নাম ছিল চিকিৎসক হিসেবে রাজন দাস। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে অপর এক চিকিৎসকের নেওয়া নিবন্ধন ( নম্বর ৭০০২০) ব্যবহার করে বাউফল গা্পইনি চিকিৎসক হিসেবে চাকরি নেন জেলার কালিশুরী বন্দরের ‘নিউ হেলথ কেয়ার’ নামের একটি ক্লিনিকে। সেখানে তাঁর মাসিক বেতন ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি ওই ক্লিনিকের পাশাপাশি একই উপজেলার নিরাময় ক্লিনিকেও প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার করতেন।
ভুয়া চিকিৎসক সেজে অর্জুনের আয়-বাণিজ্য ভালোই হচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি অস্ত্রোপচারের পর এক রোগীর পেটে গজ রেখে দিয়ে ধরা পড়ে যান এই তিনি।
গত মার্চে সন্তান প্রসবের জন্য পটুয়াখালীর বাউফলের রাসেল সরদারের স্ত্রী মাকসুদা বেগমকে নিরাময় ক্লিনিকে আনা হয়। তখন অর্জুন তাঁর (প্রসূতি) অস্ত্রোপচার করার পর মাকসুদার একটি কন্যা শিশুর জন্ম হয়। এরপর এক মাস পর মাকসুদা বেগমের পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হওয়ায় তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর গেল ১২ জুলাই সেখানে মাকসুদা বেগমের পুনরায় অস্ত্রোপচার হলে তখন তাঁর পেটের ভেতর থেকে ওই গজ বের করে আসেন হাসপাতালে চিকিৎসকেরা।
এ ঘটনা নিয়ে একটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে এটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা।
এতে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন, বরিশাল মেডিকেলের গাইনি বিভাগের প্রধান ও বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারীর কাছে। আদালত বিষয়টি জানতে তলব করেন এসব প্রতিষ্টানের সংশ্লিষ্টদের । এ ঘটনায় কেন তাঁদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে না—তা জানতে চায় আদালত।
বাউফল থানা-পুলিশ সূত্রে জানায়, গত সোমবার হাইকোর্টে হাজিরা দেন অর্জুন চক্রবর্তী। আদালত এই ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এই ভুয়া চিকিৎসক, পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন।
পটুয়াখালীর বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনের দায়ের করা মামলায় কথিত চিকিৎসক অর্জুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।