আূয়না২৪ ডেস্ক
বরগুনা সদর উপজেলায় ভিজিডি কর্মসূচির চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি বস্তায় ৩০ কেজি চাল থাকার কথা থাকলেও সেখানে দেওয়া হচ্ছে ২৭ কেজি। সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেছেন, সদর খাদ্যগুদাম থেকে কম ওজনের ওই বস্তা সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভিজিডি কর্মসূচির অধীনে বরগুনা জেলায় ১০ হাজার ৯৪৫ জন দুস্থ নারী এই সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ২ হাজার ৪৮৬ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। প্রত্যেক সুবিধাভোগী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা পাচ্ছেন। এসব সুবিধাভোগী নারীকে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই চার মাসের চাল চলতি মাসে একসঙ্গে বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভিজিডি কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়ম ও ওজনে কারচুপি ঠেকাতে সরকার ৩০ কেজি চাল ধরে, এমন বস্তায় চাল বিতরণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বরগুনায় ৩০ কেজির এসব বস্তায় ২৭ কেজির ওপরে চাল পাচ্ছেন না সুবিধাভোগী নারীরা।
বরগুনা সদরের নলটোনা, বালিয়াতলী, গৌরিচন্না, বদরখালী ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন সুবিধাভোগী নারীর সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সবাই ভিজিডির চাল কম দেওয়ার এই অভিযোগ করেছেন। বদরখালী ইউনিয়নের উপকারভোগী নুরজাহান বেগম বলেন, ‘বস্তার গায়ে ল্যাহা দেহি ৩০ কেজি আর মিটারে মাপ দিয়া দেহি ২৭ কেজি।’
এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে ৩০ কেজির বস্তায় ভর্তি করে মুখ সেলাই করে তাঁদের চাল দেওয়া হয়। এসব বস্তা ইউনিয়ন পরিষদে এনে তাঁরা সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করেন। এখন বস্তায় প্যাকেট করার সময় ওজনে কারচুপি করেন খাদ্যগুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অথচ এর দায় বহন করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান-মেম্বারদের।
নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা সরল বিশ্বাসে উপকারভোগীদের মাঝে প্যাকেট করা চাল বিতরণ করেছি। কিন্তু তাতেও যে ওজনে কারচুপি করা হয়েছে, সেটা বুঝতে পারিনি। এখন শুনছি, আসলে বস্তায় চাল কম দেওয়া হয়েছে।’
গত শুক্রবার বদরখালী ইউনিয়নে সুবিধাভোগীদের চাল বিতরণের জন্য সদর খাদ্যগুদাম থেকে চাল সরবরাহ করা হয়। বদরখালী ইউপির সদস্য আল মামুন সকালে সদর খাদ্যগুদাম থেকে ৫৭৬টি প্যাকেট (প্রতি প্যাকেটে ৩০ কেজি) চাল নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে রাখেন। তবে সুবিধাভোগী লোকজন, ইউপি সদস্যরা খাদ্যগুদাম থেকে সরবরাহ করা প্রতিটি প্যাকেট মেপে দেখেন, প্যাকেটপ্রতি তিন কেজি করে চাল কম।
বদরখালী ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমরা খাদ্যগুদাম থেকে প্রত্যেক সুবিধাভোগীর জন্য ৩০ কেজি চালের বস্তা নিয়ে আসি। যেহেতু সরকার ওজনে কারচুপি ঠেকাতে ৩০ কেজির বস্তায় চাল সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে, তাই আমরা নির্দ্বিধায় তা সুবিধাভোগীদের দিয়ে দিই। কিন্তু এসব বস্তায় চাল কম হওয়ার অভিযোগ উঠলে আমরা এবার ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে এনে ডিজিটাল মিটারে প্রতিটি বস্তা পরিমাপ করি। তাতে প্রতিটি বস্তায়ই ৩০ কেজির স্থলে ২৭ কেজি চাল পাওয়া গেছে।’
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক মজিবুর রহমান দাবি করেন, ‘ভিজিডির চালের প্যাকেটে চাল কম হওয়ার কথা নয়। এ চাল প্যাকেট করেন গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনিই বলতে পারবেন কেন চাল কম হয়েছে। আপনারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।’
চাল কম দেওয়ার কথা অস্বীকার করে সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) মোশারফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি ইউপি সদস্যদের প্রতিটি বস্তা মেপে চাল সরবরাহ করেছি। কোনো বস্তায়ই চাল কম দিইনি।’ কিন্তু পরিমাপ করে তো প্রতি বস্তায় ২৭ কেজি পাওয়া গেছে—এ কথা বলতেই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মহা. বশিরুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-সূত্র প্রথম আলো