বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার কাউয়ারেখা গ্রামের কিশোরী রোকসানা আক্তারকে অপহরণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গুমের মামলায় ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।আজ বুধবার দুপুরে বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক শেখ আবু তাহের এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্র জানায়, রায়ে হত্যা মামলায় স্বপন হাওলাদার, সমীর হাওলাদার ও গৌরাঙ্গ বৈরাগীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অপহরণ মামলায় স্বপন হাওলাদারকে ১৪ বছর কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং লাশ গুম করার অপরাধে ওই ৩ আসামির প্রত্যেককে ৫ বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।
অপরদিকে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় এই মামলার ৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। এরা হলেন স্বপনের বাবা রফিক উদ্দিন হাওলাদার, চাচা মোকসেদ হাওলাদার এবং প্রতিবেশী সফিজ উদ্দিন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে স্বপন হাওলাদার ছাড়া বাকি দুজনের অনুপস্থিতিতে এই রায় দেওয়া হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আজিবর রহমান মামলার নথির বরাত দিয়ে জানান, গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের কাদের ফকিরের কিশোরী রোকসানা আক্তার ঘটনার কয়েকদিন আগে উজিরপুরের কাউয়ারেখা গ্রামে নানি বাড়ি বেড়াতে যায়।
পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে রোকসানা নানি বাড়ির পাশের বাড়ি রফিক উদ্দীন হাওলাদারের ঘরে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। এই সুযোগে রফিক উদ্দীন হা্ওয়লাদারের ছেলে স্বপন হাওলাদার ওই কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করলে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি এলাকার লোকজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়।
ঘটনার দিন ২০০০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার পর নানি বাড়িতে অন্যান্যদের সঙ্গে ভিসিআর দেখছিলো রোকসানা। ভাত খা্ওয়ার জন্য ডাকার অজুহাতে স্বপন হাওলাদার ওই কিশোরীকে ডেকে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে স্বপন এবং তার দুই সহযোগী সমীর ও গৌরাঙ্গ জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে তাকে শ্বাঃসরোধ করে হত্যার পর তার লাশ প্রতিবেশী অতুল হালদারের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেয়।
পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর অতুল হালদারের বাড়ির শৌচাগারের স্লাব এলোমেলো দেখে সন্দেহ হয় এলাকাবাসীর। এরপরও শৌচাগারের স্লাব তুলে ট্যাংকির ভেতরে রোকসানার লাশ দেখে পুলিশে খবর দিলে উজিরপুর থানার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার।
এ ঘটনায় ওই বছরের ১৬ মার্চ রোকসানার বড় ভাই লালন ফকির বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে অপহরন, ধর্ষণ, হত্যা এবং লাশ গুমের অভিযোগে উজিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উজিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) আব্দুল হাকিম ২০০৩ সালের ২৬ জানুয়ারি ৬ জনকে অভিযুক্ত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। বিচারক ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক এই রায় প্রদান করেন।