ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুর ও নলছিটি উলজেলার বিশখালী নদীতে ইলিশ শিকার চলছেই। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না অবৈধ ইলিশ শিকারীদের। প্রশাসনের নজরদারী সত্যেও রাজাপুরের বড়ইয়া ও মঠবাড়ী এলাকায় এবং নদীর ওপারে নলছিটি উপজেলার নাচনমহল, হদুয়া ও তেতুলবাড়ীয়া এলাকার শতাধিক জেলেনৌকা দিন-রাত সমানতালে অবৈধভাবে ইলিশ শিকার করছে। অবৈধ এই কর্মকান্ডে দুই উপজেলার একাধিক প্রভাবশালী চক্র সহায়তা করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনে লোকবলের অভাব, দ্রুত গতির নৌযান না থাকা ও প্রভাবশালী চক্রকে আমলে না নেয়ায় অবৈধ ইলিশ শিকার বন্ধ হচ্ছে না।
উপজেলা সদর থেকে বিশখালী নদীর দুরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। মাছ ধরার খবর পেয়ে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করতে এক থেকে দেড় ঘন্টার সময় প্রয়োজন। এই সুজোগ কাজে লাগিয়ে দিন-রাত ইলিশ শিকার করছে স্থানীয় জেলেরা। এছাড়াও প্রশাসনকে নজরদারীতে রাখতে কিছু লোক নিয়োগ করেছে এই অসাধু চক্রটি। তারা প্রশাসনের কোন গাড়ী দেখলেই নদী থাকা জেলেদের মুঠোফোনের মাধ্যমে আগেভাগে খবর পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে প্রশাসনের কর্তারা নদীতে নামার আগেই জেলেরা নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারছে। তাই এই চক্রকে সহসাই দমন করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয়দের ধারনা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারের দায়ে গত ৭দিনে রাজাপুর ও নলছিটি উপজেলার অন্তত ১২ জন জেলেকে ভিবিন্ন মেয়াদে সাজা ও আর্থিক জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও তাদের ব্যবহৃত জাল ও নৌকা ধংস করার পরেও থামানো যাচ্ছে না এই চক্রকে।
অবৈধভাবে শিকার করা ইলিশের একটি বড় অংশ যাচ্ছে প্রভাবশালীদের ঘরে। বাকী মাছ বাড়ি বাড়ি গিয়ে গভীর রাতে বিক্রি করছে চক্রটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত ৬টি পরিবারের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়াগেছে। তারা বলছে, দামে শস্তা হওয়ায় ও বাড়িতে এসে পৌঁছে দেয়ার কারনে এসব ইলিশ কিনছেন তারা। বর্তমানে বিশখালী নদীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশিরভাগ মাছের পেট ভর্তি ডিম রয়েছে। অবৈধ ভাবে শিকার করা এসব মাছের অল্পই বিক্রি করতে পারছে এই অসাধু চক্র। বাকি ইলিশ তারা সংরক্ষন করে রাখছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে চড়া দামে এই মাছ বাজারে বিক্রির জন্য। অবৈধ ভাবে ইলিশ শিকারি চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী এই অপকর্মের প্রতিবাদ করতে পারছে না বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
বিষখালী নদীর বড়ইয়া এলাকার পালট ও চল্লিশ কাহনিয়া গ্রামে শতাধিক জেলে পরিবার রয়েছে। তাদের বড় একটি অংশ ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা জেলেদের নদীতে নামতে বাধ্য করছে বলে একাধিক জেলে দাবী করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস কর্মকর্তা প্রিতিশ কুমার বলেন, ইলিশ শিকার বন্ধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। পর্যাপ্ত লোকবল ও নৌযান না থাকার সুজোগ নিচ্ছে অসাধু একটি চক্র। আশাকরি সবার সহযোগীতা পেলে এই চক্রকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।