বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনার আমতলী উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ আছে, যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে গেজেটভূক্ত বেশ কয়েকজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক, ভুযা ও স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করছেন।
এতে সংক্ষুব্ধ ওই মুক্তযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তালিকা থেকে বাদ পড়া ওই ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম দেলওয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হন। একইভাবে প্রভাব খাটিয়ে তাঁর আপন ছোট ভাই (অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা) এস এম শাহজাহানকে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তভূক্ত করেন। এরপর ঘুষ,দূনীতি ও নীতিমালা বহিভূতভাবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন।পাশাপাশি রাজনৈতিক মতবিরোধ আছে এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে তালিকা থেকে বাদ দেন।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বাদ পড়া ১৭ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিনিধিরা সই করেন। এঁরা হলেন, সামসুদ্দিন আহমেদ ছজু (গেজেট নম্বর-৪০২) , মোতাহার উদ্দীন মৃধা (জামুকার তালিকাভূক্ত) , মোহন খলিফা ( গজেট নম্বর-৫০৪), আবদুর রশিদ খান (গেজেট নম্বর-৪১৭), মৃত এবিএম আসমত আলী আকন (জামুকার তালিকাভূক্ত), ধীরোন্দ্র নাথ বিশ্বাস (গেজেট নম্বর-৪৮৪), গাজী মাহবুবুর রহমান (গেজেট নম্বর-৪৮৭)., তালুকদার মো. শাহজাহান, নূরুল ইসলাম (জামুকার তালিকাভূক্ত) , জসিম উদ্দীন মো. তৌফিক এলাহী ( গেজেট নম্বর-৪৯২), আবদুল মালেক আকন (গেজেট নম্বর-৪৮৯), গাজী মাহবুবুর রহমান (গেজেট নম্বর-৪৮৭) , মো. নূরুল হক (গেজেট নম্বর-৪৭৭) জিএম মান্নান ( গেজেট নম্বর-৩৫৫), মো. নূরুল ইসলাম (গেজেট নম্বর-৪৪৭), আলাউদ্দীন আল আজাদ (গেজেট নম্বর-৪৪৩) ও নূরুল ইসলাম (গেজেট নম্বর-৩১০)।
বাদ পড়া ব্যক্তিদের অভিযোগ, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা জি.এম দেলওয়ার হোসেনের চাহিদা মতো ঘুষ দিতে না পারায় এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাদেরকেও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মুঠোফোনে ঘুষ দাবির কথোপথনও তাঁদের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
তাঁরা অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি হিসেবে জি এম দেলওয়ার হোসেন নিজে সভাপতি এবং সদস্য হিসেবে তাঁর ছোট ভাইকে দিয়ে সই করে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপ প্রযোগ করে ও মোটা অংকের ঘুষের টাকা ভাগাভাগি করে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে ৮ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে দেখান এবং ওই তারিখে চূড়ান্ত তালিকায় সই দেন। প্রকৃতপক্ষে এই উপজেলায় যাচাই-বাছাইয়ের দিনক্ষণ র্নিধারণ ছিল ৮ ও ১০ মে। কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করে নিজেদের মনগড়া তালিকা চূড়ান্ত করেন। এনিয়ে অস্বচ্চতার কারণে জি এম দেলওয়ার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না করে নিজের কাছে রাখেন। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এনিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে গত ২২ মে বিকেল ৫টায় তালিকা সাটিয়ে দেওয়া হয়।
তালিকা থেকে বাদ পড়া ধীরেন্দ্রণাথ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, তালিকায় নাম রাখার জন্য আমার কাছে জিএম দেলওয়ার দুই লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। কিন্তু আমি টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। উৎকোচ চাওয়ার বিষয়টি আমার মুঠোফোনে ধারণ করা আছে।
বাদ পড়া ব্যক্তিদের অভিযোগ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি জি এম দেলওয়ার হোসেন তাঁর ছোট ভাই এস এম শাহজাহান কবীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অভিযুক্ত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য কেরেন। এ নিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
তালিকা থেকে বাদ পড়া আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার মৃধা অভিযোগ করেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের তালিকায় নাম থাকা সত্বে জিএম দেল্ওয়ার আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। চাহিদা মত ঘুষের টাকা দিতে অপারগা প্রকাশ করায় আমার নাম যাচাই-বাছাই কমিটিতে বাদ দিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দিন আহমেদ ছজু অভিযোগ করেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নির্বাচনে কমান্ডার পদে জি এম দেলওয়ারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তিনি আমার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন।
একইভাবে বাদ পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে মোহন খলিফা অভিযোগ করেন, আমার ছোট ছেলে আমতলী পৌর মেয়র ও বড় ছেলে আমতলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় জিএম দেলওয়ারের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ থাকায় আমার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মৃত আসমত আলী আকনের ছেলে উপজেলা আ.লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রেজাউল করিম আকন গতকাল বলেন, আমার সঙ্গে জিএম দেলওয়ারের সঙ্গে রাজনৈতিক মতভিন্নতা থাকায় আমার বাবার নাম উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন তিনি। অথচ আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তযুদ্ধের সংগঠক।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জি এম দেলওয়ার মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ’আমি কারো কাছে কোনো টাকা চাইনি। এগুলো মিথ্যা কথা। সামসুদ্দিন আহমেদ ছজুর বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল। সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। মোতাহার মৃধার পরিবার মুসলিম লীগের সমর্থক ছিল। মোহন খলিফার বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪৫ বছর ছিল। তখন কীভাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে গেলেন? তাঁরা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে তা সম্পূ র্ণ অসত্য। আর আমিও তাঁদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্দ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছি। এখন তদন্ত হোক ।’
যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও আমতলী উপজেলা র্নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুশফিকুর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে বলেন,’আমি যাচাইবাছাই কমিটির সদস্য সচিব ঠিকই। কিন্তু আমার বাড়ি এখানে না আমি কীভাবে বুঝবো কে মুক্তিযোদ্ধা কে অমুক্তিযোদ্ধা। কমিটির অন্য ছয়জন সদস্য আছেন। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে যে তালিকা করেছেন তাতে আমি সই করেছি।’