আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বীজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেলেন আমতলীর সহস্রাধিক কৃষক। সরকারি বিএডিসির ১০ কেজির ওজনের এক বস্তা বীজের মূল্য ৩৫০ টাকার স্থলে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই উপজেলায় আমন বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
কৃষকেরা জানান, বীজ সংকট ও বিএডিসির বীজের মূল্য বৃদ্ধির পর কৃষকদের মদ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে উপজেলা কৃষি বিভাগের
কর্মকর্তারা গতকাল রোববার বীজ সরবরাহের আশ্বাস দিলে বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধীক কৃষক গতকাল আমতলী সদরে আসেন। কিন্তু বিএডিসির বীজ কেনার জন্য স্থানীয় ডিলারদের কাছে ধরণা দিয়েও বীজ পাননি। এছাড়া ডিলারদের বিরুদ্ধে পচাঁ বীজ সরবরাহের অভিযোগ করেছে কৃষকরা।
জানা গেছে, রোববার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহ¯্রাধীক কৃষক আমতলী পৌর শহরের বাঁধঘাট চৌরাস্তা, হাসপাতাল সড়ক, একে স্কুল ও পুরাতন বাজারের বিএসিডি বীজ ডিলারের দোকানে বীজ কিনতে আসেন। ডিলাররা তাদের জানিয়ে দেয় কোন বীজ নেই। তারা দোকান বন্ধ করে চলে যান। কৃষকরা উপায় না পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুশফিকুর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে ডিলারদের বীজ না দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ দিতে যান। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে না পেয়ে পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলমের কাছে যান।
তিনি (কৃষি অফিসার) কৃষকদের পুনরায় বিএডিসির ডিলারদের কাছে গেলেও তাদের চাহিদামত বীজ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেন ডিলারেরা।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, আষাঢ় মাসের আর মাত্র ছয় দিন বাকি। এ ছয় দিনের মধ্যেই তাদের বীজতলা তৈরি করতে হবে। এ সময়টাকে পুঁজি করে বেশি মূল্যে বীজ বিক্রির জন্য ডিলাররা বীজ দিচ্ছে না।
কৃষকরা জানান বিআর-২৩, বিআর-৫২ ও বিআর-৪৯ উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজের চাহিদা বেশী। এ বীজের চাহিদা থাকায় ডিলাররা গোপনে বেশি মূল্যে বিক্রির জন্য অন্যত্র পাচার করে দিয়েছে। এ তিন জাতের বীজ না পেয়ে সহস্রাধীক কৃষক হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে যান।
আমতলী পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মজনু পেয়াদা বলেন, বিআর-২৩ জাতের বীজের জন্য শহরের সকল ডিলারের দোকান খুঁজেছি কোথাও পাইনি। সকল ডিলারের দোকান বন্ধ । তিনি আরো বলেন আষাঢ় মাসের আর মাত্র ছয় দিন বাকী। এই ছয় দিনে মধ্যে বীজতলা তৈরি করতে না পারলে কৃষকদের সর্বনাশ হবে। এ সময়টাকে পুঁজি করে ডিলাররা বেশি দামে বাইরের বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে পাচার করে দিয়েছে।
চাওড়া গ্রামের আক্কাস আলী সরদার বলেন, বিআর-৫২ জাতের বীজ কিনতে ইউনুস ডিলারের দোকানে গিয়েছিলাম। সে (ডিলার) জানিয়ে দেয় গুদামে কোন বীজ নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তাঁকেও পাইনি।
হলদিয়া গ্রামের আতাহার বিশ্বাস বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে না পেয়ে কৃষি অফিসার এস এম বদরুল আলমের কাছে গিয়েছিলাম, তার আশ্বাসের পরেও ডিলাররা বীজ দেয়নি। খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
এদিকে গাজীপুর বন্দরের ডিলার আলতাফ হোসেন ও বেলাল মাতুব্বর ১০ কেজির এক বস্তা ৩৫০ টাকার বীজ ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেছে কৃষকরা। গাজীপুর গ্রামের কৃষক আলী মোল্লা জানান তিন বস্তা বিআর-২৩ বীজ ৮৫০ টাকা দরে ২৫৫০ টাকায় বেলাল মুতুব্বরের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। একই গ্রামের রহিম হাওলাদার জানান চার বস্তা বীজ ৮৫০ টাকা দরে ৩৪০০ টাকায় ক্রয় করেছি।
আমতলী পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মশিউর রহমান (মহসিন) বলেন, মিরণ মৃধার কাছ থেকে বিআর-২৩ জাতের তিন বস্তা বীজ ক্রয় করেছি। ওই তিন বস্তার মধ্যে এক বস্তা পঁচা।যাতে কোনো অংকুরোদড়ম হয়নি।
বীজ ব্যবসায়ী মিরণ মৃধা জানান, পঁচা বীজ রেখে টাকা ফেরত দিয়েছি।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলম বলেন, কৃষকরা আমার কাছে এসেছিল। আমি দুইজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে ডিলারদের দোকানে পাঠিয়েছি, যাতে কৃষকরা তাদের চাহিদামত বীজ পায়।