আয়না২৪ প্রতিবেদক
জানুয়ারির ১ তারিখে নববর্ষ উদযাপন করার রীতিকে মোটামুটি নতুনই বলা চলে। কারণ বেশি দিন হয়নি যখন থেকে এই তারিখ সর্বজনীনভাবে নববর্ষ হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। এই রীতিটি এসেছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হতে যেখানে বছরের শুরু হয় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে।
বিশ্বের যেসব দেশ এই ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা সবাই ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে। তবে অনেক দেশই ক্যালেন্ডারটি গ্রহণ করার আগে নব বর্ষের রীতিটি গ্রহণ করেছে। যেমন, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ড এবং ১৭৫২ সাল থেকে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ব্রিটিশ কলোনিগুলো নববর্ষের রীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু তারা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত হয় ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে!
বিভিন্ন সূত্রমতে, আধুনিক বিশ্বে নববর্ষ হিসেবে পহেলা জানুয়ারিকে প্রচলিত করার ব্যাপারে “রিপাবলিক অফ ভেনিস” (দেশটি ১৭৯৭ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তারা ১৫২২ সাল হতে এ দিনকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনা করতে শুরু করে। এরপর ১৫৫৬ সালে স্পেন, পর্তুগাল; ১৫৫৯ থেকে প্রুশিয়া, সুইডেন; ১৫৬৪ তে ফ্রান্স; ১৭০০ সাল হতে রাশিয়া এই রীতি অনুসরণ শুরু করে।
ব্যতিক্রমঃ
ব্যতিক্রম সব জায়গাতেই আছে। যেমনঃ ইসরায়েল। এই দেশটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে থাকলেও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী অযিহুদী (non jewish) উৎস হতে উৎপন্ন এই রীতি পালনের বিরোধিতা করে থাকে।
আবার কিছু কিছু দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে গ্রহণ করে নি। যেমনঃ সৌদি আরব, নেপাল, ইরান, ইথিওপিয়া এবং আফগানিস্তান। এসব দেশও ইংরেজি নববর্ষ পালন করে না।
পেছনের ইতিহাস
প্রথম রোমান ক্যালেন্ডারটি ছিলো চন্দ্রকেন্দ্রিক এবং এতে মাস ছিলো দশটি। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম মাসটি ছিলো মার্চ। তাই তখন মার্চের ১ তারিখকে বছর শুরুর দিন হিসেবে উদযাপন করা হতো। ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের রাজা নুমা পম্পিলিয়াস এই ক্যালেন্ডারে নতুন দুটি মাস যুক্ত করেন – জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি। এরপর Roamn Consul-এর ইচ্ছানুযায়ী বছরের প্রথম মাস মার্চ হতে জানুয়ারিতে পরিবর্তন করা হয়ী
তবে জানুয়ারির ১ তারিখকে নববর্ষ হিসেবে চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হতো। কারণ তখনো বিভিন্ন স্থানে জনগণ মার্চের ১ তারিখকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমসম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মূলত তখন থেকেই এই রীতি ছড়িয়ে পড়ের
বিতর্ক
মধ্যযুগের ইউরোপে চার্চ কর্তৃক জানুয়ারির ১ তারিখ নিয়ে শুরু হয় হাঙ্গামা। এটি একটি প্যাগানীয় এবং অখ্রিস্টান কৃষ্টি বলে রব উঠে। জের হিসেবে Council of Tours কর্তৃক ৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে পহেলা জানুয়ারিকে নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে বর্জন করা হয়। মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে যীশুখ্রিস্টের জন্মদিনের দিন (২৫ ডিসেম্বর) কিংবা পহেলা মার্চ বা ২৫ মার্চ (যেদিন স্বর্গদূত গ্যাব্রিয়েল কুমারী মেরীকে দর্শন দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ঈশ্বরপুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন) অথবা ইস্টার সানডের দিনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিলো বছর শুরুর দিন হিসেবে।
পয়লা জানুয়ারি পুনরুদ্ধার
ইউরোপের কাহিনীর পরও ছাড়া ছাড়া ভাবে পহেলা জানুয়ারিতে উদযাপিত হচ্ছিলো নববর্ষ। তবে এই ছাড়া ছাড়া ভাব দূর করে স্থায়ীভাব আনার জন্য ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার জানুয়ারির ১ তারিখকে আবারো বছরের প্রথমদিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ১৫৮২ সালে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী কর্তৃক সংশোধিত “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার”ই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিত। সাথে সাথেই অধিকাংশ ক্যাথলিক দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে সিভিল ক্যালেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। কিন্তু প্রোট্যাস্টান্ট দেশগুলো একে ধীরে ধীরে গ্রহণ করে।
নিউ ইয়ার রেজোল্যুশন
এই বিষয়টি পাশ্চাত্য বিশ্বে একটি প্রচলিত ব্যাপার হলেও ইদানীং প্রায় সব জায়গাতে পালন করতে দেখা যায়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা যেখানে ব্যক্তি আত্ম-উন্নয়নের জন্য নববর্ষের দিন বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে। আবার চেজ রিপাবলিক, ইউনাইটেড কিংডম, স্পেন, ইতালি ইত্যাদি দেশে পহেলা জানুয়ারিকে “National Holiday” হিসেবে পালন করা হয়।