বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ও ঝুঁকি কেন বাড়ছে?

Spread the love
ড. এম. এ. ফারুখ
………………………………
বাংলাদেশে বজ্রপাত নতুন কোনো বিষয় নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ তাও আমরা সকলেই কমবেশি জানি। এবছরও বজ্রপাতের তাণ্ডব যথারীতি শুরু হয়েছে এবং গত ১৪ দিনে প্রায় ১০ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছে। বন্যা এবং সাইক্লোনের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি নেবার সময় ও সুযোগ থাকলেও বজ্রপাতের বিষয়টি ভূমিকম্পের মতোই প্রাকৃতিক এবং অতি আকস্মিক একটি বিষয়। উন্নত দেশগুলোর কোনো কোনোটিতে উল্লেখযোগ্য হারে বজ্রপাত হলেও মানুষের মৃত্যুসংখ্যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় অতি নগণ্য।
আমেরিকায় প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে প্রায় ২৫ মিলিয়ন বজ্রপাত হয় এবং গড়ে প্রায় ৫০ জন নিহত ও ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। পৃথিবীব্যাপী বজ্রপাতের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পরিচালিত গবেষণায় (WWLLN) দেখা যায়, ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে সর্বাধিক বজ্রপাত ঘটে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিমে, যার ঘনত্ব ছিল প্রতিবছরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০টির বেশি। এর পরের অবস্থানে ছিল মাদাগাস্কার ও পূর্ব-আফ্রিকার গ্রেট লেক যেখানে প্রতিবছরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০-২০টি বজ্রপাত পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠে ঘটা বজ্রপাতের প্রায় ৫০ থেকে ১০০ ভাগই দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতীয় মহাসাগরে তৈরি হওয়া গ্রীষ্মকালীন ঝড় বা ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে ঘটে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠে ঘটা এল-নিনো (সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া) নামক আবহাওয়ার ধরনটিও বছরভেদে বজ্রপাতের এই সংখ্যাকে প্রভাবিত করে। তবে আমাদের জন্য অতি উত্কণ্ঠার বিষয় বজ্রপাতে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুসংখ্যা। ‘সার্ক স্ট্রম প্রোগ্রাম’ বলছে সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুহার এবং মৃত্যুঝুঁকি দুটোই বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি’ ইনস্টিটিউটের মতে প্রতিবছর সারাবিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ ঘটে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে মার্চ থেকে শুরু হয়ে অক্টোবর-নভেম্বর অবধি সাধারণত সন্ধ্যার দিকে প্রচণ্ড তীব্রতা সহযোগে বজ্রঝড় সংঘটিত হয়। বজ্রঝড় ভূমিতে বা আকাশে বজ্রপাত ও বিদ্যুত্ চমকানো সহযোগে সংঘটিত ভারি বর্ষণ অথবা শিলাবৃষ্টিসম্পন্ন একপ্রকার ভয়াবহ ঝড়, যা প্রধানত গ্রীষ্মের উষ্ণ ও আর্দ্র দিনে বজ্রমেঘসহ উত্পন্ন হয়। তবে তাপমাত্রা, প্রচুর আর্দ্রতা এবং ঠাণ্ডা ও গরম বাতাসের সংমিশ্রণ এই ঝড় তৈরিতে প্রভূত প্রভাব রাখে। অক্ষাংশভেদে ঝঞ্ঝাপূর্ণ এই বজ্রমেঘ উলম্বভাবে প্রায় ৮-১০ কি.মি. দীর্ঘ এবং প্রায় ৫-৭ কি.মি. পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবে অনুকূল পরিবেশে এক একটি বজ্রঝড় অপেক্ষাকৃত বৃহত্ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে অতিকায় বজ্রঝড়ের রূপ নিতে পারে। এ ধরনের বজ্রঝড়ে প্রচুর শিলাবর্ষণ, শক্তিশালী বাতাস, অধিক বজ্রপাত এবং ঘন ঘন বিদ্যুত্ চমকানোর ঘটনা ঘটে।

 

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত বজ্রপাতের বার্ষিক ও মাসিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোটামুটিভাবে সারাবছরই কমবেশি বজ্রপাত হলেও মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অধিকহারে বজ্রপাত হয়ে থাকে। এই অধিদপ্তরের রেকর্ডে ১৯৪৮ সাল থেকে শুধুমাত্র ‘বজ্রপাতের সংখ্যা’ ও ‘বজ্রপাত হয় এমন দিনের সংখ্যা’ সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। প্রাপ্ত উপাত্তের পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশে সর্বাধিক পাঁচটি বজ্রপাতগ্রস্ত এলাকা হলো—শ্রীমঙ্গল, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এবং সৈয়দপুর যেখানে যথাক্রমে গড়ে ৩২৪, ৩২৪, ২০৬, ১৯৫ এবং ১৭৯টি বজ্রপাত ঘটে থাকে প্রতিবছরে। এই ক্রমে রাজধানী শহর ঢাকার অবস্থান ১৩তম যেখানে গড়ে ১২৪টি বজ্রপাত হয়। শ্রীমঙ্গল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকাতে সর্বোচ্চ বজ্রপাত পরিলক্ষিত হয় মে মাসে। বিগত ৬৬ বছরে শুধুমাত্র মে মাসের জন্য সিলেটে এই বজ্রপাতের সংখ্যা সর্বনিম্ন ৪৭টি থেকে সর্বোচ্চ ১১৮টি পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল এবং সিলেটে বজ্রপাত হয় এরূপ দিনের গড় সংখ্যা প্রতিবছরে ১০০টিরও বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, আশির দশকে মে মাসে গড়ে ৯ দিন বজ্রপাত হতো। অথচ ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারা দেশে পাঁচ হাজার ৭৭২টি বজ্রপাত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে ৯৭৮টি, ২০১২ সালে ১২১০টি, ২০১৩ সালে ১৪১৫টি, ২০১৪ সালে ৯৫১টি ও ২০১৫ সালে ১২১৮টি বজ্রপাতের কথা বলা হয়েছে। বিগত ২০০০ হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিবছর ১৫১ দিনে ৪৬৮টি বজ্রপাত হয়েছে, যা ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত গড়ে ১৪৫ দিনে ৪৩৯টি বজ্রপাত অপেক্ষা বেশি।

 

মূল যে বিষয়টির প্রতি দৃকপাত করতে আজকের এই প্রসঙ্গের অবতারণা তা হলো বিগত কয়েক বছরে বজ্রপাতে মৃত্যুসংখ্যা। বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনায় মোট ১২টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ থাকলেও জীবনসংহারী বজ্রপাতের কথা ১৭ মে ২০১৬-এর পূর্ব পর্যন্ত ছিল না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতের বিপর্যস্ততায় প্রাকৃতিক এই আপদটিকে এদিন ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান আজ অবধি কোনো সংস্থা বা সরকারের কোনো বিভাগ হতে পাওয়া দুষ্কর, যদিও ‘ডিজাস্টার ফোরাম’ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বজ্রপাতে মৃত্যুর সংবাদ অনুযায়ী কিছুটা তথ্য সংগৃহীত রাখে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ২০১০ সালে ১২৪ জন, ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ৩০১ জন, ২০১৩ সালে ২৮৫ জন, ২০১৪ সালে ২১০ জন, ২০১৫ সালে ২৭৪ জন এবং ২০১৬ সালে প্রায় ৩৫০ জন বজ্রপাতে মারা গেছে। বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, ২০১৩ হতে ২০১৬ পর্যন্ত উপরোল্লিখিত মৃত্যুসংখ্যার যথাক্রমে ১২৮ জন, ৭৯ জন, ৯১ জন ও ১৩২ জন শুধুমাত্র মে মাসেই বজ্রাঘাতে মারা গেছে।  তন্মধ্যে ২০১৩ সালের ৫-৬ মে ৩৩ জন, ২০১৫ সালের ২-৩মে ১৯ জন এবং ২০১৬ সালের ১১-১২মে ৫৭ জনের মৃত্যু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় ২০১২ সালের ১০ আগস্ট রাতে নামাজ আদায়কালে বজ্রপাতে একসঙ্গে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পাশাপাশি বহু মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়, বৈদ্যুতিক পাম্প নষ্ট হয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়, ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, বজ্রঝড়ে ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়, ফসলের ক্ষতি হয় এবং বহু গবাদিপশু মারা যায়। মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষ মারা যায় কৃষি জমিতে, হাওরে, পুকুরে বা নদীতে বিভিন্ন প্রকার কার্যরত অবস্থায়। দুর্যোগ ফোরামের তথ্যানুযায়ী, গত ৬ বছরে নৌকাডুবিসহ বন্যায় মৃত্যুসংখ্যা ২০০’র বেশি নয়। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) হিসাব অনুযায়ী, ২০১২ সালে বন্যায় ১৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। সমসাময়িককালে টর্নেডোতে সর্বাধিক ৩১ জন মানুষ মারা যায় ২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। কিন্তু বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক কারণে দুই দিনে বাংলাদেশে ৫৭ জনের মৃত্যুর নজির সাম্প্রতিক সময়ে নেই। বজ্রপাতে মৃত্যুর এই মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রচার মাধ্যম সিএনএনেও স্থান পেয়েছে। ঢাকা রেডিওসন্ডি স্টেশনের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১১ মে ২০১৬ তারিখে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,৮০০ ফুট উপরে বায়ুর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪ ডিগ্রি বেড়ে যায় এবং বায়ুর আর্দ্রতা প্রায় ৪০ শতাংশে নেমে আসে। এছাড়াও ৫ হাজার ফুট হতে প্রায় ১৮ হাজার ফুট উপরে পর্যন্ত বায়ুর তাপমাত্রার সর্বাধিক তারতম্য (৩ ডিগ্রি) ১১ মে তারিখেই পাওয়া যায়। গত ১১-১২ মে তারিখে খুলনা ও বরিশালের কিছু এলাকা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশের ৪ হাজার ৮শ ফুট উপরের বায়ুর তাপমাত্রা বিগত ৩০ বছরের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি বেশি ছিল।

সমসাময়িককালের পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বজ্রপাতের সংখ্যা এবং বজ্রপাতসহ দিনের সংখ্যা দুটোই সমতালে বেড়ে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অব্যাহতভাবে বড় বড় বৃক্ষ নিধনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত গাছ লাগানো হচ্ছে না। তাই ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াসহ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রাথমিক সম্ভাব্য কারণগুলো গাছ কেটে ফেলা, মোবাইল ফোনের ব্যবহার, জলাভূমি ভরাট করা, নদী শুকিয়ে যাওয়া, কলকারখানা ও মোটরগাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মোবাইল ফোন ও বৈদ্যুতিক টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি কাজে ভারী যন্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি হতে পারে। আবার আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে দেশের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা মে মাসে প্রায় ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি বেড়ে যাওয়ায় বর্ষা আসার আগেই জলীয় বাষ্প বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ু বঙ্গোপসাগর হতে উত্তরে অর্থাত্ দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রায় একই সময়ে শুষ্ক ও ঠান্ডা বায়ু হিমালয় থেকে দক্ষিণে অর্থাত্ দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হচ্ছে। উপর্যুক্ত প্রতিটি নিয়ামকই দেশের অভ্যন্তরে বজ্রঝড় সৃষ্টির আদর্শ পরিবেশ তৈরি করছে। পরিশেষে, উদ্ভুত অবস্থার প্রেক্ষাপটে এই ভয়ঙ্কর ও প্রাণসংহারী দুর্যোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষায় সচেতন করার কোনো বিকল্প আপাতত নেই। এই প্রচেষ্টায় বজ্রঝড়ের সময় বাড়ির ভেতরে অবস্থান করা, উঁচু ভবনে আর্থিং-এর ব্যবস্থা করা, বসতবাড়ির চারপাশে উঁচু গাছ লাগানোসহ প্রচুর বৃক্ষরোপণ, কৃষিতে ভারী যন্ত্রাংশ ও কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত রাখা, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক গ্যাসের নিঃসরণ কমানো, সকল প্রচারমাধ্যমসহ লোকজ সংগীত-লিফলেট-পোস্টার-ফেস্টুন ব্যবহার করে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করাই শুধু নয়, সেই সাথে বিস্তর ও জ্ঞানগর্ভ গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বাংলাদেশে বজ্রঝড় উত্পন্ন হবার স্থান ও সময়, তার গতিপ্রকৃতি, বিস্তৃতি, জীবনকাল ইত্যাদি নিয়ে গভীর পর্যালোচনার জন্য ভূমিতে নির্মিত বজ্রপাত পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক এবং অপটিক্যাল ট্রান্সিয়েন্ট ডিটেক্টর (OTD) বা লাইটনিং ইমেজিং সেন্সর (LIS)-এর মতো স্যাটেলাইট যন্ত্রেরও সমপ্রয়োজন রয়েছে।

লেখক :প্রফেসর, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়