সৌরজগতে দেখতে একটু ভিন্ন রকমের একটি গ্রহ -শনি।
এর চারপাশে বৃত্তাকারে ঘিরে আছে কিছু রিং। ছবিতে দেখা যায়, এরকম একটি রিং-এর গায়েই, এক কোনায়, লেগে আছে ছোট্ট একটা বস্তু। খুবই রহস্যময়।
বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করছেন। চেষ্টা করছেন এর রহস্য ভেদ করতে।
এই বস্তুটি যে সেখানে আছে, বিজ্ঞানীরা সেটি জানেন, কিন্তু এটি তারা এখনও পর্যন্ত ঠিক মতো দেখতে পারছেন না।
তবে আশা করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই এই রহস্যের একটা সমাধান হবে।
এটি আসলে শনির ছোট্ট একটি উপগ্রহ। তবে এখনও এর জন্ম হয়নি। বলা হচ্ছে, জন্ম নিচ্ছে এই উপগ্রহটি।
এটি প্রথম চোখে পড়ে ২০১৩ সালে। লন্ডনের একজন গবেষক কার্ল মারির শাশুড়ির নাম অনুসারে এর নাম দেওয়া হয়েছে- পেগি।
দুর্ঘটনাবশতই এই বস্তুটি চোখে পড়ে বিজ্ঞানী মারির। ক্যাসিনির মাধ্যমে তিনি শনির আরেকটি রিং-এ বড় আকারের একটি উপগ্রহ প্রমিথিউসের ছবি সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন, আর তখনই এটি চোখে পড়ে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শনির চারপাশে যেসব বরফ আর ধূলিকণা আছে সেসব থেকেই এই উপগ্রহটি তৈরি হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত এর সরাসরি কোন ছবি পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন খুব শীঘ্রই সেটা সম্ভব হয়ে উঠবে।
বলা হচ্ছে, শনিকে লক্ষ্য করে ক্যাসিনি মহাকাশ যানের যে অভিযান চলছে সেখান থেকে খুব শীঘ্রই এর একটি ছবি পাওয়া যাবে।
এবছরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ক্যাসিনির অভিযান।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন পেগির ছবি তোলাই হবে ক্যাসিনির শেষ টার্গেট।
শনির চাঁদ বা উপগ্রহের সংখ্যা ৬২। পেগির জন্ম হলে সেটি হবে ৬৩তম।
জন্মগ্রহণরত শনির এই উপগ্রহটি নিয়ে শুনুন যুক্তরাষ্ট্রে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানী ড. অমিতাভ ঘোষের সাক্ষাৎকার।
পিঁপড়ার নেভিগেশন
পিঁপড়া কিভাবে চলাচল করে?
গবেষকরা বলছেন, বিজ্ঞানের যে পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে পিঁপড়ারা নেভিগেটিং করে বা পথ চিনতে পারে সেটা খুবই অভিনব।
তারা বলছেন, যে কোনো দিকেই মুখ করে থাকুক না কেন, পিঁপড়া কম্পাসের পথ ঠিকই অনুসরণ করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আকাশে সূর্যের অবস্থান কোথায় সেটা বিবেচনা করে পিঁপড়া সঠিক পথটাই বেছে নেয়।
সূর্যের এই অবস্থানকে তারা মিলিয়ে নেয় তাদের আশেপাশের পরিবেশের সাথে। সেগুলো তারা স্মৃতিতে জমিয়ে রাখে। পরের বার পথ চলতে গিয়ে তারা এই স্মৃতিকে ব্যবহার করে।
ব্রিটেনে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফ্রান্সে প্যারিসের একটি প্রতিষ্ঠান সিএনআরএস যৌথভাবে এই গবেষণাটি চালিয়েছে।
একজন গবেষক ড. এন্টোয়েন ওয়াইসট্র্যাচ বলছেন, “গবেষণায় আমরা দেখেছি পিঁপড়ারা, তাদের শারীরিক অবস্থান যে দিকেই থাকুক না কেনো, চলাচলের গতিপথ থেকে তারা তাদেরকে আলাদা করে ফেলতে পারে।”
তিনি বলেন, শরীর সামনে বা পেছনে যেদিকেই থাকুক না কেনো, তারা যে দিকে যাচ্ছিলো সেই পথ ধরেই পিঁপড়া এগুতে পারে।
পিঁপড়ারা দল বেঁধে এক ঝাঁক হয়ে চলাচল করে। খাদ্যের সন্ধানে ছুঁটতে হয় তাদের। তারপর সেই খাবার নিয়ে যেতে হয় বাড়িতে। অনেক সময় পেছন দিকেও খাবার টেনে নিয়ে যেতে হয় লম্বা পথ। তখনও তারা পথ চিনতে ভুল করে না।
তিনি বলেন, “পিঁপড়া আকারে খুবই ছোট। আরো ছোট তাদের মস্তিষ্ক। একটা পিনের মাথার সমান। কিন্তু সেটা খুবই দারুণ এবং স্পর্শকাতর। তারা এমনভাবে গতিপথ নির্ধারণ করে যা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও পরিবেশেও তারা আশেপাশের অবস্থা থেকে ঠিক মতো দিক চিনে, পথ চলতে পারে।”
তিনি বলেন, মস্তিষ্কের ভেতরে তারা এসব তথ্যের সমাবেশ ঘটিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে পথ নির্ণয় করে থাকে।
মরুভূমির পিঁপড়ার চলাচলের ওপর গবেষণা চালিয়ে ব্রিটিশ ও ফরাসী বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, আকাশ থেকে বিভিন্ন সূত্র সংগ্রহ করার মাধ্যমে পিঁপড়া সঠিক পথ বেঁছে নেয়।
দেখা গেছে, আয়না ব্যবহার করে সূর্য সম্পর্কে যদি তাদেরকে ভুল বা অস্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয় তখনই তারা ভুল পথে চলে যায়।
“যদি তারা পেছন দিকে যেতে থাকে, যেমন তারা খাবার টেনে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়, তখনও তারা আশেপাশে যা কিছু দেখতে পায়, তার সব তথ্য একত্রিত করে তারা দিক নির্ধারণ করে।”
তিনি বলেন, “কোন একটা জায়গায় গিয়ে তারা থেমে যায়, সেখানে খাবার জমা করে রাখে, তারপর আবার আগের পথে ফিরে আসে। এই পদ্ধতির সাথে একটি রোবটকে নির্দেশনা দানকারী ‘কম্পিউটার এলগরিদম’ তৈরির মিল আছে।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পিঁপড়ার এই চলাফেরার প্রযুক্তি অনেকটা চালকবিহীন গাড়ির চলার মতো।